অনেক উৎসাহী মানুষ ৭১ এর সন্তানদের তালিকা করেন। আমি জানিনা কেন করেন। আমি জানিনা এই তালিকা দিয়ে কি হবে। ৪৪ বছর পরে যদি আমি জানতে পারি আমার বাবা আমার মাকে ধর্ষন করার পরে আমার জন্ম হয়েছে তাহলে আমি কেমন বোধ করবো?
আপনি কেমন বোধ করবেন?
আমরা কেমন বোধ করবো?
আপনারা কেমন বোধ করবেন?
এই বোধ আমাকে, আপনাকে, আমাদেরকে, আপনাদেরকে কি কি উপকার করবে?
বাদ দিলাম ধর্ষণের কথা। একাত্তুরের পরে যারা লুটপাট করে সম্পদশালী হয়ে কলেমা পাঠ করে অনেক মানুষ দাওয়াত দিয়ে তারপর যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দিয়ছে তাদের সন্তানেরা যখন জানতে পারে তাদের বাপ একজন ডাকাত ছিল, একজন চোর ছিল, এ্কজন খুনী ছিল, একজন দুর্নীতিবাদ আমলা ছিল যে নাকি পাঁচ হাজার টাকার বেতন পেয়ে পাঁচ শত কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছে তারপর ছেলেমেয়ের জন্ম দিয়েছে সেইসব ছেলেমেয়েদের জন্মের তালিকা কেনো তৈরি করেন না?
একজন দুর্নীতিবাজ আমলা, একজন চোর, একজন ডাকাত, একজন খুনী, একজন ধর্ষকের সন্তান হিসাবে আপনি অবশ্যই গর্বিত। তাহলে কেন আমরা বেশ কিছু তালিকা প্রস্তুত করিনা কেন? চোর ডাকাতের গর্বিত সন্তানের তালিকা ও ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের তালিকা।
একাত্তরের পরে আজ পর্যন্ত যেসব নারী ধর্ষিতা হয়েছেন এবং সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন বা সন্তানকে ছালায় ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছেন তাদের তালিকা করা হবেনা কেনো ???
তারপর একাত্তরের পরে কলেমা পড়ে যাদের বিয়ে হয়েছে ২১-৩১ বছর ধরে লালন পালন করে সেই সন্তানকে পুলিশে থানায় নিয়ে নির্যাতন করেছে, পঙ্গু করেছে বা ক্রসফায়ারে ১৭ টা বুলেট মুখের ভেতর পুড়ে দিয়ে হত্যা করেছে তাদের তালিকা কেনো করা হবেনা?
একাত্তুরের অনেক ধর্ষক, খুনী, ডাকাতেরা পরে আওয়ামীলীগে যোগ দেয় মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে, তাহলে একাত্তরের ধর্ষণের মাধ্যমে যেসব সন্তানের জন্ম হয়েছে তাদের কেউ কেউ দেখা যাবে যারা তালিকা প্রস্তুত করছে তাদেরই বাবা। সেই তালিকাও প্রস্তুত করা দরকার, নয় কি?
একাত্তুরের হানাদার বাহিনীর বিচার হয়নি। ভারতের হাত ধরে এরা সবাই পাকিস্তানে চলে যায়। আর ওরা সবাই মিলে যাদের ধর্ষন করে পরবর্তীকালে আওয়ামীলীগের ধর্ষকরা তাদের যৌনকর্মী হিসাবে লাগাতার ধর্ষন করে । অবশ্য আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মুজিব তাদের ঠিকানা ৩২ নং ধানমন্ডীতে করার ঘোষনা দিলেও বেইলী রোড থেকে এক সময় তারা সব উধাও হয়ে যায়। অথবা আত্মহত্যা করে বা হত্যা করা হয়। তাদের খবর কেউ জানেনা। কারণ তাদের যারা একাত্তরে ধর্ষন করেছিল তারাই আবার বাহাত্তর পচাত্তরে আওয়ামীলীগের নেতা হয়ে যায় ফলে ধর্ষণের শিকারদের বেঁচে থাকার অধিকার ছিল না বলেই তাঁরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তবে উৎসাহী ব্যক্তিরা যারা একাত্তরের ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের তালিকা করেন তারা ধর্ষকদের খবর রাখেন না। কারণ তারা জানেন ঘটনাচক্রে ধর্ষকেরা তাদের নিজেদের বাবাও হয়ে বসে আছেন বা থাকতে পারেন । তাহলে আসলে তারা যাদের তালিকা করছেন টেকনিক্যালি তাঁরা হলো তাদের নিজেদেরই হারিয়ে যাওয়া বা বিছড়ে হুয়া ভাই।
ভাই তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের তালিকা করছেন। সেটাও ঠিক আছে। তবে সেই তালিকার সাথে আরো কিছু তালিকা করেন, যেমন — শেখ মুজিবের গুন্ডা ও রক্ষীবাহিনী দ্বারা কতজন নারী ধর্ষিতা হয়, তাদের সন্তানেরা কেউ কোথাও আছে কিনা, হাসিনার পুলিশ, গুন্ডা, ছাত্রলীগের সোনার ছেলে বা মানিকের দ্বারা কতজন নারী ধর্ষিতা হন তাদের কোন সন্তান আছে কিনা, বাংলাদেশের কতজন সন্তান স্বাভাবিক যৌন মিলণের ফলে জন্ম নিয়েও রাস্তায় গার্বেজ থেকে খাবার খায় এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত সেই তালিকাও করা দরকার। তালিকা যখন করবেন পূর্নাঙ্গ তালিকা করেন। অপরাধীদের তালিকা, অপরাধের শিকারের তালিকা, অপরাধের ফলে জন্ম নেওয়া শিশু সব সময়ই পবিত্র। শিশু জানেনা কিভাবে তার জন্ম হয়েছে। শিশুর জন্মের জন্য শিশু দায়ী নয়। তাই তালিকা করে পবিত্র শিশুকে কলঙ্কিত করার বা তার জন্মের কারণকে আঙ্গুল উঠিয়ে চিহ্নিত করার চেস্টা না করে যারা সমাজে অপরাধী এবং সমাজকে প্রতিনিয়ত কলুষিত করছে তাদের তালিকা করুন এবং সমাজ থেকে তাদের সমূলে উৎপাটন করে সমাজকে কলংক মুক্ত করুন।
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায়। সেসময়ে অনেকেই তাদের শিশু কন্যাকে বিক্রি করে দেয়। বাংলাদেশ থেকে অনেক শিশুকন্যাকে মধ্য প্রাচ্য ও হানাদার বাহিনীর দেশে পাকিস্তানে যৌন কর্মী হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেই তালিকাও প্রস্তুত করা দরকার। ফারাক্কা চুক্তির পরে অনেক কৃষক না খেতে পেয়ে শহরে চলে আসেন তাদের সন্তানেরাও খাদ্যের জন্য দেহ বিক্রি করে তাদেরও সন্তান হয় তাদের তালিকাও করা আবশ্যক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়নি। উপনিবেশ বদল হয়েছে। প্রশাসন আউটসোর্স হয়েছে উপনিবেশিক শক্তির প্রতিনিধির কাছে তাই ধর্ষন, লুটপাট, চুরি, ডাকাতি ও দেশের সম্পদ পাচার অব্যহত রয়েছে। তালিকা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলে চলবে কেনো? লেগে থাকুন।
শিশুর জন্ম যেভাবেই হোক – কলেমা পড়ে বা ধর্ষণের ফলে — একজন শিশু সবসময়ই পবিত্র, কোন কলংক তাকে স্পর্শ করেনা, সে একজন মানুষ এবং মানুষ আল্লাহ্র সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি।
আয়শা মেহের
সম্পাদিকা
প্রবাসনিউজ২৪
টরেন্টো, কানাডা।