ঢাকা: জীবাণু অস্ত্র থাকার অজুহাতে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাজ্য ও তার মিত্ররা। দীর্ঘমেয়াদী ওই যুদ্ধের কারণে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী সংঘর্ষময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং বর্তমানে গোটা বিশ্ব আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে অস্বস্তিকর এক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এমনি অবস্থায় সম্প্রতি সাবেক ব্রিটিশ উপ প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকট গত রোববারের এক বক্তব্যে ইরাকে হামলা অবৈধ বলে মন্তব্য করেন।
দীর্ঘ সাত বছর ধরে টরি ব্লেয়ারের ইরাক যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্ত চলছিল। গত বুধবার পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তদন্তকারী দলের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন এবং ইরাক যুদ্ধকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরাক যুদ্ধ শুরু থেকে ব্যর্থতা দিয়ে শুরু হলেও, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একে বৈধ বলে যুদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কারণ হিসেবে বলা হয়, ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা শুরুর ঠিক আট মাস আগে টনি ব্লেয়ার সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে বলেছিলেন, ‘যাই ঘটুক, আমি আপনার সঙ্গে আছি।’ এই সঙ্গে থাকা প্রশ্নে পরবর্তীতে ইরাকে ৪৫ হাজার ব্রিটিশ সেনা পাঠানো হয়েছিল যুদ্ধের জন্য।
সানডে মিরর নামক পত্রিকায় প্রেসকট লেখেন, তিনি এখন যুদ্ধটি যে বৈধ ছিল তা মনে করেন না এবং ব্লেয়ার তার মন্ত্রীদের যুদ্ধ বিষয়ে কোনো আলোচনা করার সুযোগও তখন দেয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘২০০৪ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনান বলেন, ইরাকের শাসক পরিবর্তনে যুদ্ধ ছিল অবৈধ। অনেক দুঃখ এবং রাগের সহিত এখন আমি বিশ্বাস করি যে, কফি আনানই ঠিক ছিলেন। আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকবো এবং যুদ্ধের ফলে যে সর্বনাশা পরিনতির সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়েই বাকী জীবনটা আমি থাকবো।’
অধিকাংশ ব্রিটিশ জনগণই দেড় লাখ ইরাকি হত্যার জন্য নয়, বরংচ ১৭৯জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শাস্তি চায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মার্কিন জনগণের ক্ষেত্রেও একই প্রবনতা দেখা যায়। তারা আফগানিস্তান প্রশ্নে বুশকে অতটা ভালো চোখে দেখেন না কারণ আফগানিস্তানে অনেক মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল। অথচ মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে ইতোমধ্যেই অনেক মানুষকে হত্য করেছে এবং তা নিয়ে মার্কিন জনগণের কোনো ভাবনা পরিলক্ষিত হয় না।
প্রেসকট আরও বলেন, ‘দ্য অ্যাটর্নি জেনারেল লর্ড গোল্ডস্মিথ ক্যাবিনেটে আসলেন এবং মৌখিকভাবেই ঘোষণা করলেন যে, ইরাকে হামলা বৈধ। যে সময়ে ওই বক্তব্য দেয়া হয় এবং সিদ্ধান্তের আকার ধারণ করে তাতে বোঝাই যাচ্ছিল তারা সকলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।’