গুলশান রেস্তোরার “জঙ্গী” নাটকে যাদের হত্যা করা হলো তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক

জঙ্গিকে সবাই জানে ।জঙ্গীকে সবাই দ্যাখে। জঙ্গির হাতে প্রশাসনের দায়িত্ব দিয়ে রেখে চোখে কাপড় বেঁধে কানামাছি ভো ভো খেলা চলছে। কানা মাছি ভো ভো যাকে পাবি তাকেই জঙ্গি হিসাবে ছোঁ তারপর বন্দী করে নির্যাতন করে তার কপালে জঙ্গি নামের মোহর লাগিয়ে তামাশা আর রম্য রচনা লিখে শত্ শত লাইকসহ ফেসবুকের বুক ভরে ফেলো ।

ফেসবুক এক অদ্ভুত জগত। ফেসবুক সার্ভারের জন্ম হবার অনেক আগে থেকেই এই জগতের সাথে আমি পরিচিত। বাংলাদেশে আমার জন্ম। বাংলাদেশে আমি বড় হয়েছি। সমাজের সব ধরনের মানুষের সাথে খুব কাছ থেকে মেশার সুযোগ হয়েছে আমার। বাংলাদেশের যেকোন সচেতন নাগরিকের মত শৈশব-কৈশর-তারুন্যের কিছুকাল আমি বাংলাদেশের রাজনীতির খুব কাছাকাছি ছিলাম। বাংলাদেশের কোন মানুষই রাজনীতির কালো ছোবল থেকে বাচতে পারেনা। দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা সবাই পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে থাকার ফলে সাড়া দেশের সব মানুষই এই রাজনীতির বিষাক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশের সমাজে যেমন নানা রকমের শ্রেনী আছে ঠিক তেমনি ফেসবুকে সেই নানা রকমের শ্রেনীর হাজার হাজার একাউন্ট আছে।

একটা শ্রেনী আছে যারা অপরাধীদের সাথে থেকে অপরাধের শিকারদের সমালোচনা করে ফেসবুক ভরে রাখে।
একটা শ্রেনী আছে যারা অপরাধীদের গুনগানে ফেসবুক মুখরিত করে রাখে।
একটা শ্রেনী আছে কোন কিছু হলেই যারা ধর্মকে আক্রমণ করে রচনা লিখতে থাকে।
একটা শ্রেণী আছে যারা শত শত লাইক দিতে থাকে
একটা শ্রেনী আছে যারা শ্রমিক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন, কঠোর পরিশ্রম করেন, কাজ থেকে ফিরে এসে ফেসবুক সার্ভারে সময় কাটান তারা স্বাভাবিকভাবেই নিপীড়িতের সাথে আছেন বা থাকার চেস্টা করেন।
ভারতের রাজ্য সরকার পরিচালিত ও প্রযোজিত গুলশান রেস্তোরা আক্রমণের পরে ফেসবুকে একটা শ্রেনীকে আবার দেখে গেল কান্নাকাটি করতে। এই সেই শ্রেনি যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে শাহবাগের গনজাগরন মঞ্চের সমর্থনে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের শ্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিলঃ

সবাইরে খবর দে, রাজাকারের কবর দে
ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই
জামাত শিবির রাজাকার এই মূহুর্তে বাংলা ছাড়

তারাই দেখা গেল ফেসবুকে কান্নাকাটিতে রত। তারা সবাই জানে কে এই আক্রমণ করেছিল। সাড়া বাংলাদেশে প্রতিদিন মানুষকে যার ইশারাতে হত্যা করা হয় সে এখন হজরত আজরাইল আঃ এর কাছ থেকে মানুষের জান কবচের ঠিকা নিয়ে রেখেছে নিজের হাতে। সাড়া বাংলাদেশের পুলিশ তার হুকুম তামিল করে দেশে লাশের পাহাড় করছে। গুলশান রেস্তোরার জন্য ক্রন্দনরত ফেসবুকাররা সেটা জানে। ওরা সবাই জানে যুদ্ধাপরাধী বিচারের নামে প্রহসনে যারা সাক্ষী ছিল তারা সবাই ১৯৭১ সালের পরে জন্মগ্রহণ করেছে। সাড়া বাংলাদেশে জামাত শিবির রাজাকার হিসাবে যাদের উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে তাদের ভেতর ৯৯% মানুষেরা জন্মগ্রহণ করেছে ১৯৭১ সালের পরে। যারা অপরাধীদের হয়ে অপরাধীদের গুনগানে ফেসবুক মুখরিত করে রাখে, যাদের শোক, যাদের কান্না, যাদের কথা, যাদের চিন্তাভাবনার সাথে “মানবতার” কোন সম্পর্ক নাই তারা জানে যে তারাই আজকের এই অপরাধ ভিত্তিক সমাজ গড়ার কারিগর।

এইসব মৃত্যুগুলো তাদের দরোজাতে এসে কড়া নাড়বে। গুলশান রেস্তোরাতে যারা জংগী নাটক সাজিয়ে মানুষ হত্যা করলো তারাই নানা রকমের নাম দিয়ে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করছে। “জংগী” শব্দটা খুব জনপ্রিয় এখন। অতীতে “আল কায়দা” শব্দটি জনপ্রিয় ছিল। তার আগে ছিল “তালেবান” জনপ্রিয়।  সেপ্টেম্বর এগারো ছিল একটি সাজানো নাটক। সেই দিন ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারে কোন পুজিপতি মারা যায়নি। সুইপার, বাবুর্চি, সিকিউরিটি গার্ড, কেরানীরা মারা গেছিল। তাদের জন্য কেউ কাদেনি। কেদেছে বিশাল বিল্ডিং এর জন্য। বিল্ডিংটা রিমোট কন্ট্রোল্ড বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিল্ডিংএর সব অফিস ইনসুরেন্স এর টাকা পেয়েছে। পুঁজিপতিদের কারু কোন ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে আমেরিকা ও বিশ্বের বিভিন্ন জাগাতে বসবাসরত নিরীহ মুসলমানদের। আফগানিস্থানের রাস্তা থেকে মানুষকে সন্ত্রাসী হিসাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মার্কিন আর্মীবেস গুয়ানতানামো বে কিউবাতে। সেখানে তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের ভেতর কেউই কোন রাজনীতি বা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ছিলেন না। যারা তাদের উপরে নির্যাতন করেছে তারাই আসলে সন্ত্রাসী। যারা বিল্ডিং এর জন্য কাঁদে বা গুলশানের রেস্তোরাতে বিদেশীদের জন্য কাঁদে তারা সেই একই রেস্তোরার বাবুর্চীর জন্য কাঁদে না। এই বাবুর্চী ও তার সাথের অন্যান্য কর্মচারীদেরকে  ইচ্ছাকৃতভাবে ও দায়িত্বজ্ঞানহীনের মত হত্যা করা হয়েছে ।

গুলশান রেস্তোরার মৃতের ভেতরেও শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে। যারা পুলিশ তারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। পুলিশ যাদের হত্যা করে তাদের বেঁচে যাওয়ায় প্রিয়জনেরা ক্ষতি পূরণ পায়না বা পায়নি। অন্যন্য হত্যার ক্ষেত্রে পুলিশের হাতে নিহত ছেলেদের পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া মামলা করা হয় যাতে কেউ এই হত্যার বিরুচ্ছে প্রতিবাদ বা মামলা করার সাহস না পায়।

সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে ভারতের রাজ্যসরকারের নির্দেশে বাছায়কৃত মানুষ হত্যা করার জন্য সাজানো নাটক “জঙ্গী” মঞ্চস্থ করার সময় গুলশান রেস্তোরাতে রক্তের হোলি খেলাকে ক্লাইমেক্সে নেবার জন্য হত্যা করা হয়েছে রেস্তোরার বাবুর্চি সাইফুলসহ আরো অনেক কর্মচারীকে। জঙ্গী নাটকের প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা ও ফেসবুকের ক্রন্দনরত সমর্থকেরা আশা করি সকলেই খুব আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করেছেন যদিও আপনারা মনে করেন আপনাদের “জঙ্গী” নাটকের জন্য দায়ী ১৪০০ বছর আগে প্রবর্তিত ইসলাম। ইসলামের হাতে কিন্তু ভারতের রাজ্য সরকারের দায়িত্ব নাই। ইসলামের হাতে বন্ধুক নাই। ইসলামের হাতে কিছুই নাই। আপনাদের প্রভুর হাতেই বুলেট, বন্দুক, চাপাতী, দা, লগী, বৈঠা আর জেল থেকে বের করে আনা খুনী ও অপরাধীরা।  যারা বেচে গেছিল যারা প্রত্যক্ষদর্শী তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে এখন নির্যাতন করে হত্যা করা হচ্ছে।

রেস্তোরার বাবুর্চী সাইফুলসহ অন্যান্য সকল মৃত্ কর্মচারীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.