ঢাকা: ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে লুটপাট নিয়ে সংসদে আবারও তোপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আজ বৃহস্পতিবার বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় এই খাতে মঞ্জুরী বরাদ্ধের প্রস্তাবের ছাটাই প্রস্তাব দিয়ে সংসদ সদস্যরা অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন।
তারা বলেন, রাস্তা-ঘাটের পরিবর্তে এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে ছিনতাই হচ্ছে। পুলিশ রাস্তাঘাটে জনগনের টাকা ছিনতাই বন্ধ করছে। এখন ব্যাংকগুলোতে ছিনতাই হচ্ছে। তবে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংক সেক্টরে যে লুটপাট হচ্ছে-এটা নিয়ে খুবই চিন্তিত এবং এটা যাতে না হয় তার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদেক্ষপ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট পাসের আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে বরাদ্দকৃত অর্থের বিরোধিতা করে ছাঁটাই প্রস্তাব করেন জাতীয় পাটি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও বিভাগের জন্য ৫৬ টি মঞ্জুরী দাবির বিপক্ষে মোট ৪২০ টি ছাটাই প্রস্তাব দেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। এগুলোর মধ্যে ৭টির ছাটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেন সংসদ সদস্যরা। সেগুলো হলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, ধর্ম মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়। ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন। এছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী এবং মো. আব্দুল মতিন ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মঞ্জুরী বরাদ্দের ছাটাইয়ের পক্ষে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ব্যাংকিং খাত হচ্ছে এখন লুটপাটের জায়গা। যে যত পারে লুটপাট করছে। আর ফেরত দিতে হচ্ছে না। তারা লুটপাট করবে আর আমরা টাকা দেবো এটা তো হতে পারে না। সরকারকে বলবো জনগনের কাছ থেকে না নিয়ে নিজেরা সংগ্রহ করে দেন।
তিনি বলেন, দেশে এখন শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে লুটপাট হচ্ছে। এখন জনগনের টাকা রাস্তাঘাটে ছিনতাই হয় না। পুলিশ এই ছিনতাই বন্ধ করেছে। সব ছিনতাই হচ্ছে ব্যাংকে। অর্থমন্ত্রীকে এটা বন্ধ করতে হবে। ফিরোজ রশীদ তার বক্তব্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দুই হাজার ৫২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পরিবর্তে এক টাকা বরাদ্ধের প্রস্তাব করেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, আমাদের অর্থনীতি ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরশীল। সেই ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা করছি। কিন্তু কোনও শৃঙ্খলা এ খাতে এখনও আসেনি। এজন্য বলছি আগে শৃঙ্খলা আনতে হবে। বিশৃঙ্খলা নিরসনে কমিশন গঠন করতে হবে। ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট হলে যে মূলধন ঘাটতি হচ্ছে সেটা জনগনের টাকা দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। সারাজীবন এভাবে চলতে পারে না।
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে অব্যবস্থা তাতে তাদের টাকা দেওয়ার কোনও মানেই হয় না। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভ চুরি, বেসিক ব্যাংকের লুটপাট, সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও ডেসটিনিসহ বিভিন্ন খাতে লুটপাটের ঘটনা তুলে ধরেন।
সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সংসদ সদস্যরা ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে সেই সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ব্যাংক সেক্টরে যে লুটপাট হচ্ছে এটা নিয়ে খুবই চিন্তিত এবং এটা যাতে না হয় তার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদেক্ষপ নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা টাকার দায়িত্ব নিয়েছি। এই টাকা গরিব জনগণেরও হতে পারে আবার ধনী জনগণের হতেও পারে। এই টাকা লুটপাট হওয়াতে জনগণের অসুবিধা হয়। রাষ্ট্র জনগণের অসুবিধা করতে দিতে পারে না। এজন্য রাষ্ট্রই এর দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং করছে।
মন্ত্রী বলেন, দুদকে বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে সবগুলো মামলা এখনো হয়নি। এই রিপোর্টটা দুদকের কাছে আছে। আস্তে আস্তে মামলা হচ্ছে এবং আপনারা নিশ্চিত থাকেন, যেসব লোকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে এবং তদন্তে দোষ প্রমাণিত হয়েছে তাদের সবাইকেই দুদক মামলায় সোপর্দ করবে।
পরে সংসদ সদস্যদের ছাটাই প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।