[মুনাফার রাজনীতি লেখাটি লিখেছেন আনোয়ার হোসেন বাদল]
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া হয়তো প্রকৃত অর্থেই একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের প্রতিটি জনপদে পায়ে হেঁটে তাঁর প্রিয় দল বিএনপিকে দাড় করিয়েছিলেন। তখন তাঁর সাথে বাম এবং ডানপন্থী সমমনা মানুষগুলে মা, মাটি, মানুষকে ভালোবেসেই দলে নাম লিখিয়েছিলেন এবং শহীদ জিয়া তাঁদের সাথে নিয়ে দেশ গড়তে প্রয়াস পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষমতার শীর্ষে থেকে এসি রুমে বসে যারা দলকে নতুনভাবে সাজিয়েছিলেন তারা নির্বিচারে দলে টেনেছিলেন কালো টাকাওয়ালাদের, ব্যবসায়ীদের, সরকারি আমলাদের। যাদের সাথে সংগঠনের ত্যাগী কর্মিদের না ছিলো কোন পরিচয়, না ঐ সকল ব্যক্তিবর্গের ছিলো ন্যুনতম দেশপ্রেম। মা, মাটি, মানুষকে তারা চিনেন না। অর্থ, বিত্ত আর ঐশ্বর্যের পাহাড় গড়াই ছিলো যেন তাদের মূল লক্ষ্য। ঐ সকল নেতারাই এখন দলের নীতি নির্ধারক। আর এ জন্যেই দলের আজ এ অবস্থা।
আদর্শ ? সে তো এখন তাত্বিক বিষয় ওটা কেউ মানছে না। আওয়ামীলীগের ভোটার বিহীন একতরফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে, গুলিয়ে ওঠে। বিএনপির তৃণমূল নেতা /কর্মিদের ভাবখানা ছিলো এমন যেন দল তো ক্ষমতায় এসেই যাচ্ছে তো এবার লুটপাটে আর আটকায় কে? গত কয়েক বছরে ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের যে মহোৎসব চলছিলো কই তাদেরতো আমরা আটকাতে পারিনি? সুতরাং এবার আমাদের পালা।
কে কি খাবে তার পরিকল্পনা কেউ ব্রিজ, কেউ কালভার্ট, কেউ রাস্তা এমন কি খেয়াঘাট আর গনশৌচাগার পর্যন্ত ভাগ বাটোয়ারা যেন হয়ে যাচ্ছিলো। এ যেন কম বয়সী সেই বোকা মেয়েটির বিবাহোত্তর অভিজ্ঞতার প্রকাশ “বিয়ের যে কি মজা গো শুধু খাওন আর খাওন “। এটা তো তৃণমূলের চিত্র, উপরতলার নেতৃত্বের উদর যেহেতু বড় সেহেতু পদ্মা সেতুর মত বড় কিছু ছাড়া তা যে ভরবে না তা বলাই বাহুল্য। এই যেখানে রাজনীতির উদ্দেশ্য সেখানে আওয়ামীলীগের সাথে বিএনপির নীতিগত পার্থক্য কোথায় ?
বেগম খালেদা জিয়া যখন সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে গুলশানে অবরুদ্ধ তখন ঢাকার রাজপথে তীব্র যানজট দেখে জনৈক পথচারী আক্ষেপ করছিলেন “হায় খালেদা, আপনি কাদের মুক্তির জন্যে আন্দোলন করছেন? দেখুন তারা রাজপথে কি তীব্র যানজট তৈরী করেছে “।
আওয়ামী সরকারের সীমাহীন অত্যাচারের প্রতিবাদে, অবরুদ্ধ গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য মানুষের যেখানে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার কথা সেখানে দেখা গেলো পুরোপুরি ভিন্ন চিত্র, কিন্তু কেন? ঐ যে আদর্শহীন, নীতিবিবর্জিত নেতৃত্ব! এখন এসব বলতেও ভালো লাগছে না। সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দিন স্যার বাংলামেইল ডট কমে তার সাক্ষাতকারে বলেছেন “নীতির কথা বলে আর লাভ নেই।” তাহলে আমরা এখন কি করবো?
আমরা যারা রাজনীতির তৃনমূলে আছি আমাদের কথা তো কেউ শুনছে না। আগে যখন কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়া পল্টনে যেতাম সেখানে কেন্দ্রের নেতাদের সাথে ভাব বিনিময় করতাম। তখন এক ধরনের তৃপ্তি নিয়ে এলাকায় ফিরতাম। সকলকে বলতাম ওমুক নেতার সাথে দেখা হয়েছে তোমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইত্যাদি। কেন যে সে কার্যালয়টি গুলশানে গেলো তাও আমাদের বোধগম্য নয়। এখন তাদের সাথে তৃনমূলের দুস্তর ব্যবধান। এমন করে কতদিন চলবে?
আমার এ কথাগুলোর কোন মূল্য নেই তা জানি। আর জানি বলে এখন খবর দেখা, পত্রিকা পড়া একরকম ছেড়েই দিয়েছি। লেখালেখি তো ছেড়েছি আরো আগে। কি হবে ওসব জেনে, শুনে, লিখে?
আমার এখানে হান্নান নামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর একটা কথা আমার খুব যুতসই মনে হয়েছে। তার বক্তব্য হলো এ দেশটা গরুর দেশ তবে আমাদের মধ্যে দু শ্রেণির গরু। এক শ্রণির শিং আছে অন্য শেনির নেই। শিংঅলারা তাড়িয়ে বেড়ায় আর শিংবিহীনরা পালিয়ে বেড়ায়। উভয়ই গরু। বাহঃ কি সুন্দর বাস্তবতা। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলেই কিন্তু এই শিঙঅলারা আছে এবং দল ও দেশকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা যত্রতত্র গুঁতো মারছে। তাদের গুতো থেকে নিজ দলের লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। শিংযুক্তরা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর শিঙবিহীনরা পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। এই যে দ্বিতীয় দলটি এদের সংখ্যা কিন্তু ৯০% এরও বেশী এরা প্রতিরোধ তৈরি করলে শিঙঅলারা পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য কিন্তু কে তাদের নেতৃত্ব দিবে? দেশপ্রেমিক জিয়া তো চলে গেছেন আমাদের বর্তমান নেতৃত্ব তাঁর কবরটা পর্যন্ত রক্ষা করতেও পারছে না তো দেশের জন্য তারা কি করবে?
আর নয়, মাফ করবেন আপনাদের হয়তো ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে তো আসুন আমরা এক কাজ করি, সব কিছি বাদ দিয়ে বরং ক্ষমতাধর এসব শিঙঅলাদের পদলেহন করি। তাদের কাছ থেকে কিছু ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করি,ভবিষ্যত গড়ি। কথায় আছে না
“নিজে বাচঁলে বাপের নাম! ”
আনোয়ার হোসেন বাদল
পটুয়াখালী ১৯/৫/১৫