পরিচয় বা আইডি বা Identification

ফেসবুকের বিভিন্ন প্রফাইলে এবাউট ইউ বা about you বিভাগে দেখা যায় অনেকেই লিখে রেখেছেনঃ
I don’t have any identity, I don’t want it. I AM JUST NOBODY.
আমার কোন পরিচয় নেই। আমি আমার পরিচয় দিতে চাইনা। আমি কেউ না।

সেটা কি করে সম্ভব ? প্রতিটি মানুষ স্বতন্ত্র আর প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব সত্বা রয়েছে, একটি পরিচয় রয়েছে। একজন মানুষ হিসাবে প্রতিটি মানুষের একটি পরিচয় থাকে।  মানুষের সব চাইতে বড় পরিচয় হলো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সেই সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে সেই মানুষ কি তার শ্রেষ্টত্ব সম্পর্কে অবহিত আছে? আর এই শ্রেষ্টত্বকে প্রতিষ্টিত করার জন্য অন্যান্য সৃষ্টির কাছে তার কি কি দায় দায়িত্ব আছে সেটা কি তার জানা আছে? একজন মানুষের পরিচয় তার কাজে, তার ব্যবহারে, অন্যান্য সৃষ্টির কাছে তার অবদানে।

একজন শ্রমিক তার শ্রম দিয়ে অন্যান্য সৃষ্টিকে সেবা প্রদান করছেন তাই শ্রমিকেরা সব চাইতে সন্মানজনক পেশাতে রয়েছেন। আমি যদি একজন ঝাড়ুদার হই আমি গর্ববোধ করি যে আমি প্রতিদিন পরিবেশকে সুন্দর রেখে অন্যান্য সৃষ্টিকে সেই পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করি। অন্যান্য সৃষ্টির কাছে সেটাই আমার অবদান। আমি যদি একজন গৃহকর্মী হই তাহলে আমি গর্ববোধ করবো এই কারণে যেহেতু সমাজের কিছু অলস মানুষ আমার উপরে নির্ভরশীল। যেহেতু সমাজ সকল মানুষের ভাত, কাপড়, কাজ, স্বাস্থ, বাসস্থানের মত মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে তাই সমাজে শ্রেনীবিন্যাস ঘটেছে, জোর যার মুলুক তার ভিত্তিক সমাজে কিছু মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্য দশার সুযোগে কিছু অলস মানুষ অত্যন্ত নিম্ন মূল্যে বা মাঝে মাঝে পেটে ভাতায় গৃহকর্মী নিয়োগ করে শ্রমের অমর্যদা ও অবমূল্যায় করার প্রয়াস পেয়ে থাকে। একজন গৃহকর্মী হিসাবে আমি গর্বিত থাকবো কারণ আমি একজন শ্রমিক এবং আমার শ্রমের অবমূল্যায়ন যারা করে তারা আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকে নিজেদের অক্ষমতার জন্য ও অর্থনৈতিক প্রতারণার জন্য।

এইভাবে দেখা যায় প্রতিটি মানুষেরই পরিচয় রয়েছে। একজন দুর্নীতিবাজ সম্পদশালী ব্যক্তির পরিচয় হিসাবে সে লেখে আমি অমুক কোম্পানীর চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। সে লেখেনা সে একজন ঘুষখোর বা চোর বা প্রতারক। আর যারা চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার না তাদের কেউ কেউ নিজেদের পরিচয় হিসাবে লেখেনা যেঃ
“আমি চুরি করতে পারিনা – সুযোগের অভাবে বা ইচ্ছার অভাবে তাই আমি সম্পদশালী  কেউ না। আমাকে এক নামে কেউ চিনেনা । আমি অমুক গ্রুপ অফ কোম্পানীর মালিক হিসাবে  পরিচিত নই বা অমুক হাসপাতালের মালিক হিসাবে আমি পরিচিত নই তাই আমি আমার পরিচয় ফেসবুকে লিখিনা।

অনেকেই নিজের পরিচয় লিখতে সংকোচ করে। অনেকেই হীনমন্যতার কারণে পরিচয় লেখেনা। অনেকেই তাদের প্রফাইলে ভারতের রাজ্য সরকারের ছবি পোস্ট করে রাখে তারা বলতে চায় – তারা যেকোন মানুষকে খুন, গুম করার ক্ষমতা রাখে। তাদেরকে সবাই চান্দা দিতে বাধ্য থাকিবেন। তারা যেকোন সময়ে বিশাল দা দিয়ে কোপে কোপে যেকোন মানুষকে খন্ড বিখন্ড করতে পারে বা পিস্তল দিয়ে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিতে পারে, বা  মলোটেভ ককটেইল বা পেট্রোল বোমা মেরে যেকোন বাসভর্তি মানুষ জ্বালিয়ে দিতে পারে বা যেকোন মানুষের বাসাতে ঢুকে তাদের উচ্ছেদ করে বাসা দখল করতে পারে।  এমন এক সমাজে আমরা বাস করি। সমাজে যে অপরাধী সে গর্বিত। সমাজের  বেশীর ভাগ মানুষই অপরাধীদের প্রতি মন্ত্রমুগ্ধ। অমুক গ্রুম অফ কোম্পানী অমুক রাজ্যসরকারের আমলে অত অত বিষয় সম্পত্তি করে বিশাল গ্রুপ অফ কোম্পানী গড়ে তুলেছে তাই তারা আর তাদের ছা আন্ডা সবাই সমাজের অন্যান্য সবার কাছে সন্মানী। তারাই চান্দা ব্যাটারী সেল বাকী সবাই সদরঘাট!

মানুষের সব চাইতে বড় পরিচয় হলো সে মানুষ। আর যারা মানুষ হতে পারেনি বা পাশবিকতা যাদের দিনরাত নিয়ন্ত্রন করে তাদের লজ্বিত হওয়া উচিৎ এবং দিনরাত মনে করা উচিৎ যে তারা পশু। সমাজের অন্যান্য মানুষের দায়িত্ব হলো এইসব পশুদের আর অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সমাজ থেকে পৃথক করে সুষ্ট বিচারের মাধ্যমে তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা।

চোর, ডাকাত, প্রতারক, খুনী, ধর্ষক, অসৎ আমলা, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি,  ব্যবসায়ী না হবার কারনে  মন খারাপ করার কিছু নেই। ওরা অপরাধী । অপরাধী যারা তাদের লজ্বা করা উচিৎ। অপরাধী যারা তাদের ভয় করা উচিৎ। অপরাধী যারা তাদের কুঁকড়ে থাকা উচিৎ। উলটে দেখা যায় সমাজে যারা ভাল মানুষ তারাই কুঁকড়ে থাকে। লজ্বা পায়। এড়িয়ে চলে। নিজেদের “কেউ না” মনে করে। অথচ তারাই তো “কেউ” ।

আপনার পরিচয় লিখুন। আপনি একজন সুন্দর মানুষ। প্রতিদিন আপনি আপনার একজন দরিদ্র প্রতিবেশীর সাথে খাবার ভাগ করে খান। আপনি আপনার দরিদ্র আত্মিয়কে প্রতিষ্টিত হবার জন্য সাহায্য করেন। আপনি আপনার দরিদ্র, এতিম আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য সব সময় প্রস্তুত আছেন আর তারাও আপনার সাহায্য পেয়ে অন্যদের সাহায্য করে সমাজে মানবিকতা প্রতিষ্টিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আর এইসব কিছুই যদি আপনি না করেন তাহলে এই রোজার মাসে চিন্তা করুন বসে বসে – একজন সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আপনি আসলে জীবনে কি করলেন?

নিজের জন্য তো সবাই বাঁচে । সব সৃষ্টির কিছু দায় দায়িত্ব আছে। সব চাইতে বেশী দায় দায়িত্ব আছে মানুষের। সেই দায়িত্বগুলোর অন্যতম হলো মানবতা নিয়ে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো। সমাজে মানবাধিকার ও স্বাধিনতা প্রতিষ্টা করা। যারা মানবাধিকার ও স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করে তাদের শাস্তি ও সংশোধণের ব্যবস্থা করা।

আপনার পরিচয় খুঁজে বের করুন। ফেসবুকের পরিচয় বিভাগে লিখুন। সবাইকে জানিয়ে দিন আপনি একজন মানবাধিকার ও স্বাধীনতার সৈনিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *