ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতা কারণে গত দু’টি ঈদে ব্যবসাই করতে পারেননি কাপড় ব্যবসায়িরা। এ বছরের অবস্থা ভালো। শান্তিপূর্ণ অবস্থা, ব্যবসা বাণিজ্যও হয়েছে বেশ। ফলে মানুষের পকেটে টাকা আছে। এ কারণেই আসন্ন ঈদুল ফিতরকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি ভালো হবে এমনটিই আশা করেছিলেন জামা-জুতো ব্যবসায়িরা। কিন্তু ভারতীয় ভিসা আর রমজানের মধ্যে সপ্তাহব্যাপি পুলিশের বিশেষ অভিযানে গণগ্রেপ্তার সে আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।
‘প্রতিবছর ঈদের আগে যে পরিমান জামা-কাপড় বিক্রি হয়, এবছর তার অর্ধেকেও বিক্রি হচ্ছে না। কারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। আবার যাদের হাতে টাকা আছে তাদের অধিকাংশই ঈদে ভারতীয় ভিসা নিয়ে ভারত যাচ্ছে। এবার খুব সহজে দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ দেয়ায় অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবছর বেশি মানুষ ভারত যাচ্ছে। আর এই সুযোগে ঈদের কেনাকাটা সেখান থেকেই করবেন অনেকে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আমাদের লোকাল মার্কেটে।’
রমজানের ২১তম দিনে রাজধানীর পলওয়েল সুপার মার্কেটে পোশাকের পাইকারি বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন বাংলামেইলের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন হতাশার কথাই শুনালেন।
তবে শুধু জয়নাল আবেদীন না, রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ির সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশাজনক চিত্রই পাওয়া গেছে।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন কার্যালয়ে ‘ঈদ ভিসা ক্যাম্প’ থেকে প্রায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি পর্যটক ক্যাটাগরিতে এক বছর মেয়াদি মালটিপল ভিসা পেয়েছে। গত ৪ জুন থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত এই ভিসা ক্যাম্প চলে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘এই ভিসা ক্যাম্পের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকরা সরাসরি ভারতীয় হাইকমিশনে এসে কোনো ই-টোকেন ছাড়াই আবেদন জমা দিয়ে এক বছর মেয়াদের মালটিপল ভিসা পাচ্ছেন। এটাই এ আয়োজনের বিশেষত্ব। এই ক্যাম্প প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু এটাই শেষ নয়। এ ধরনের ক্যাম্প আরও করা হবে। ঢাকার বাইরে বেশ কিছু স্থানেও পর্যায়ক্রমে এ ধরনের ক্যাম্প আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা অন্তত ৪০ ভাগ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে না। আর এজন্য তারা ঈদের আগে সহজে বেশি করে ভারতীয় ভিসা দেয়াকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, ঈদে সবাই কম-বেশি কেনাকাটা করে। তবে যারা বিত্তবান তারা বরাবরই একটু বেশি পোশাক কেনাকাটা করেন। এবার ঈদে বিত্তবানদের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে ঈদ করবেন। আর সেখানেই ঈদের পোশাক কেনাকাটা করবেন। ফলে দেশীয় পোশাক ব্যবসায়ীরা হবেন।
পোশাক বিক্রেতা শাখাওয়াত হোসেন রিপন হতাশার সুরে বলেন, এবছর রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত থাকায় আমরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলাম। নানা কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে নীরব রক্তক্ষরণ চলছে।
কী কারণে এবার ব্যবসায় মন্দাভাব- এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, অধিকহারে ভারতীয় ভিসা দেয়া। আর আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসায়ীদের ঘাড়ে করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে পোশাকখাতের ব্যবসায়ী ছাড়াও অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ব্যাপক চাপে আছে।
এছাড়াও রমজানের মধ্যে পুলিশি গণগ্রেপ্তারের কারণেও ঈদ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ৬ জুন থেকে ১৩ জুন সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান এবং ১০ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত জঙ্গিবিরোধী বিশেষ অভিযানে সারা দেশে ১৩ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মৌচাক মার্কেটের শাড়ি বিক্রেতা ইসমাইল বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমারই এক প্রতিবেশী, প্রতিবছরই ঈদে মোটা অংকের টাকা খরচ করেন। পরিবার ছাড়াও আত্মীয়স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করতেন তিনি। কিন্তু এবার আমার ওই প্রতিবেশীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার পরিবারটিতে এবার ঈদের আনন্দ নেই।’
ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে টাকার প্রবাহ বাড়ে। এই টাকার বড় অংশ ব্যয় হয় পোশাক- প্রসাধনীতে। তবে এসব কেনাকাটা যদি মানুষে দেশের বাইরে গিয়ে করে তাহলে দেশের টাকা চলে যায় বিদেশে।
এবার ঈদে ভারতীয় মালটিপল ভিসা পেয়েছেন শাহিন ভূইঁয়া। শিগগিরই তিনি দেশটিতে ভ্রমণে যাবেন জানান বাংলামেইলকে। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এই কর্মকর্তা বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটি পেয়েছি। ভারত যাবো। আর ঈদের পোশাক কেনাকাটাও হবে ভারতে।