ভয় আসলে কোথা থেকে আসে? মাঝে মাঝে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। বুকের ভেতরে ধুকধুক করে। মনে হয় এই বুঝি আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমি ভয় পাইনা। সেই অবস্থা থেকে সরে আসার জন্য অপেক্ষা করি। এক সময় সেটা ঠিক হয়ে যায়। আমি অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েছি তাই মৃত্যুর ভয়ে আমি ভীত নই।
কোন এক দিন জীবণের পরিসমাপ্তি হবে এটা জেনেও মানুষ কেনো মৃত্যু্কে ভয় করে? ভয় একটা অভ্যাসের মত। কিছু কিছু ব্যাপারে ভয় থাকা উচিৎ । যেমন নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সাবধান হওয়া উচিৎ। আমরা কবে মরে যাবো যেহেতু সেটা জানিনা তাই যতদিন জীবন থাকে জীবনকে যত্ন করা উচিৎ। দেহ ও মনের যত্ন করা উচিৎ। অনেকসময় আমরা যত্ন করতে যেয়ে জীবনের উপরে অত্যাচার করে ফেলি। ভয় করা উচিৎ এইখানেই যেন জীবনের উপরে নির্যাতন না করে ফেলি। মনের উপরে চাপ সৃষ্টি না করে ফেলি। মন ভাল থাকলে দেহ ভাল থাকবে। দেহ আর মন ভাল থাকলে যত দিন জীবন থাকে ততদিন ভাল থাকা যাবে।
বিভিন্ন রকমের ভয় মন খারাপ করে দেয়। আমি এখন বেকার। আমার চাকুরি নেই। এইখানে ভয় হয় সংসার কিভাবে চলবে? এই ভয় থেকে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউন শুরু হয় তখন আমি নিজেকে এইভাবে প্রস্তুত করি যে যদি আমার স্ট্রোক হয় যদি আমার একটা অংগ অবশ হয়ে যায় তাহলে আমি আর কর্মক্ষম থাকবোনা। তখন আমি কিভাবে চলবো? সেজন্য আমি যখন বেকার হই তখন ভয় করিনা। বেকারত্ব একটি সাময়িক অবস্থা। এক্ষেত্রে ভয় না পেয়ে বা হতাশ না হয়ে নিজের মুখোমুখো বসতে হবে। নিজের যোগ্যতাগুলোকে যাচাই করতে হবে আর আটঘাট বেঁধে কাজ খোঁজার জন্য কর্ম বাজারে নামতে হবে। ভয় পেলে এইসব কিছুই করা সম্ভব হবেনা।
আমি একা একা সারাজীবন বসবাস করি। একাকীত্ব খুব কস্টদায়ক। এখানেও ভয় একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে। যেহেতু আমি জানিনা আমি কতদিন বাচবো তাই ভয় হয় আমার স্ট্রোক হলে আমি অনেক দিন এই ঘরে মরে পড়ে থাকবো। কেউ জানবেনা। একদিন লাশ পচে গেলে গন্ধ পেলে হয়তো ক্লিনার এসে দরোজা ভাংবে। এখানে ভয় পাবার কিছু নেই। মৃত্যু যেদিন আসবে সেদিন আসবে। মৃত্যু যেভাবে আসবে সেভাবেই আসবে। যদি আমি মরে যাই তাহলে আমার আত্মা আমার দেহ থেকে চলে যাবে আর আমার দেহ সব কস্ট সব দুঃখ সব একাকীত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। মৃত্যু এসে এখানে আমার উপকার করছে। ভয় পাবার কিছু নেই।
আর এক ভয় হলো কারুকে হারাবার ভয়। আমি যদি জানি আমি তাকে হারাবো তাহলে আর ভয় কিসের? তাকে হারাবার আগেই নিজে সরে আসলেই সেখানে ভয় আর থাকেনা। যাকে হারাতে হবে তার সাথে জেনেসুনে থেকে থেকে নিজেকে তিল তিল করে কস্ট দেবার আর হারাবার ভয়ে অস্থির থাকার কোন অর্থ হয়না।
বাস্তব সত্য যা তা মেনে নিতে হবে। কারুকে হারাবার ভয়, পরাজয়, রোগ, মৃত্যু এইসব কিছু নিয়েই জীবন । বুকের ভেতরে কস্টেরা ছোটখাটো বাজারের মত বিভিন্ন ধরনের কস্টের পসার সাজিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করার চেস্টা করবে। আর সেই সব কস্টের আইটেমগুলোর মুখোমুখো বসে কস্টের রুপ, রস, গন্ধ বুঝে নিতে হবে। তারপর কস্টগুলোকে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে বুকের একটা অংশ হিসাবে অনুভব করতে হবে। তখন আর কস্টগুলো কস্ট থাকবেনা। দেহ ও মনের একটা গুরুত্বপূর্ন অংশ হয়ে যাবে ।
তখন আর কারুকে হারাবার ভয় থাকবেনা। তখন আর মৃত্যুর ভয় থাকবেনা। যে থাকবেনা তাকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা এক ধরণের ব্যাধির মত। এই ব্যাধি থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হবে। কস্ট হবে আর সেই কস্টকে ভালবেসে সেই কস্টকে দেহের একটি অংশ হিসাবে দেহ ও মনে গেথে ফেলতে হবে।
ভয় আর কস্টেরা এভাবেই যার যার জাগাতে থাকবে অথচ দেহ ও মনের কোন ক্ষতি করবেনা। যে পুরাপুরি ক্ষতির মধ্য ডূবে থাকে ক্ষতির জন্য তার তেমন কোন চিন্তা থাকার কথা নয়। ক্ষতিই তার জন্য স্বাভাবিক নিয়ম ।