পবিত্র ঈদ উল ফিতর আসছে। আমাদের এখানে কানাডাতে ঈদ হবে সম্ভবতঃ জুলাইয়ের ছয় তারিখে। আমি সব সময়ই ঈদের খুশী নিয়ে থাকি । খুশির ব্যাপারে আমার কোন ক্রাইসিস বা সমস্যা নেই। সাড়া বছরই আমার ঈদ। ভাবছি এ বছরে কার জীবনে কেমন ঈদ হবে। সিরিয়া থেকে যেসব মুসলমান পাড়ি দিয়েছিলেন অনির্দিষ্টের পথে তারপর আটকে ছিলেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে – তাদের জীবনে কোন ঈদ আসবেনা। অনেকেই পথে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। ভাবছি, যারা এখনো সিরিয়াতে আছেন, আহত বা নিহত প্রিয়জণের পাশে, ক্ষুধার্ত আছেন, তাদের জীবনে ঈদ কোন অর্থ বহণ করবেনা। ভাবছি পুরা এক মাস ব্যাপী বাংলাদেশে যাদের ঘরে পুলিশ এসে তাদের প্রিয়জনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, তাদের উপরে নির্যাতন করেছে, টাকা দাবী করে পরিবারগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে তাদের জীবনেও ঈদ আসবেনা। ঈদ আসবে না বাংলাদেশের সেইসব পরিবারের জীবনে যারা প্রতিদিন প্রায় না খেয়ে থাকেন। ঈদ আসবে না গন্ডামারা গ্রামে যেখানে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার অপরাধে পুলিশেরা গ্রামবাসীর জীবন জাহান্নাম করে তুলেছে। ঈদ আসবেনা বান্দরবনের সেইসব মানুষের জীবনে যারা না খেয়ে বা কলা পাতা খেয়ে আছেন। ঈদ আসবে না সেইসব মাবাবার জীবনে যাদের সন্তানকে ধর্ষন করে হত্যা করা হয়েছে । ঈদ আসবেনা সেইসব পরিবারের জীবনে যাদের সন্তানদের ভারতের সীমান্তে হত্যা করা হয়েছে । এমন অনেক মানুষের জীবনেই ঈদ আসবেনা।
ঈদ অর্থ খুশী। খুশী হতে কি কি দরকার?
এক একজনের খুশী হবার উৎস এক এক রকম।
বাংলাদেশে ভারতের রাজ্য সরকার খুশী হয় টাকা, ক্ষমতা বিলাস আর লাশে।
বাংলাদেশ পুলিশ খুশী হয় ঘুষে বা ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা করে বা নিরীহ মানুষকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দিয়ে তাদের উপরে অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে টাকার জন্য তাদের পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
ভারতের রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা খুশী হয় বিভিন্ন জাগাতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে লুট, খুন ও ধর্ষন চালিয়ে।
অন্যের জীবনে দুঃখ এনে অনেকেই এইভাবে খুশী হয়।
গোটা সমাজের চালাক, স্বার্থপর মানুষেরা সব চুপচাপ যার যার আপন প্রান বাঁচিয়ে ঈদ উৎযাপন করবে।
এক মাস রোজা রেখে আমি অনুভব করি যারা না খেয়ে থাকে কিভাবে তাদের দিন আর রাত কাটে। আমি সেহরী না খেয়েই বেশীরভাগ রোজা পালন করেছি। ফলে কোন কোন দিন ২৪ ঘন্টারও বেশী না খেয়ে থেকেছি। একজন মানুষ যখন না খেয়ে থাকে তখন না খেয়ে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে যায়। শরীর ক্ষীণকায় হয়ে যায়। দূর্বল হয়ে যায়। মাথা ঘুরে। কোন কাজ করার ক্ষমতা থাকেনা। কিন্তু বেঁচে থাকার ইচ্ছা মানুষের এতই প্রবল যে অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ তার শরীরটাকে ঠিকই টেনে নিয়ে চলে কোন কাজ পাবার আশায়। আমিও প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠি আমার শরীর টেনে নিয়ে চলি কাজ করি জীবিকা নির্বাহের জন্য। বেঁচে থাকা এক নেশার মত। রোজা পালণের মধ্য দিয়েই মানুষ উপলবব্ধি করবে একজন ক্ষুধার্ত মানুষের কস্ট । ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে যেয়ে দাঁড়াবে এবং নিজের খাদ্য তার সাথে ভাগ করে খাবে। আমরা যারা মুসলমান তাদের উপরে নির্দেশ দেওয়া আছে অন্য একজন ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে থাকার জন্য। তাকে সাহায্য করার জন্য। তাকে এমনভাবে সাহায্য করতে হবে যাতে সে অন্য আর একজনকে সাহায্য করার যোগ্য হয়ে উঠে। ক্ষুধার্ত মানুষের কস্ট অনুভব করে, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে, ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা হ্রাস করেই মাস শেষে ঈদ আসে। সেখানেই খুশী অপেক্ষা করে।
তেমন একটা ঈদ কি এসেছে বিশ্বের কোন দেশে?
হয়তো আসেনি।
হয়তো আসবেনা কোনদিন।
অনেকেই মুসলমান নন, ইসলামের নির্দেশিত ফরয পালন করেন না, অন্ধের মত ইফতারির পাহাড়ের সামনে সারাদিন না খেয়ে বসে থাকেন আর মাস শেষে শপিং মলে ভীর করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে মুনাফা করতে সাহায্য করেন ঈদের কেনাকাটা করেন। আমি ঠিক জানিনা ওরা কি করে বা না করে। তবে এটুকু বলতে পারি ইসলামের সাথে ওদের কোন সম্পর্ক নেই। শপিং মল থেকে বেড়ুলেই দেখা যাবে গার্বেজের স্তুপ আর সেখানে অগুনিত মানুষ গার্বেজ থেকে খাবার সংগ্রহ করে খাচ্ছে। শপিং মলে ঈদের কেনাকাটা চলছে। গাড়িতে করে বা বাসে করে বাসায় যেতে যেতে দেখা যাবে অগুনিত কঙ্কালসার মানুষ, ক্ষুধার্ত মানুষ, ইসলামহীনতার এক সুস্পষ্ট চিত্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কুৎসিত কদাকার সম্পদশালী স্বার্থপর, চোর, ডাকা্ত, খুনী ও ধর্ষকেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে আর অন্যদিকে অগুনিত মানুষ বেকার ও ক্ষুধার্ত, ধীরে ধীরে হয় অপরাধের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে না হয় মৃত্যুর দিকে।
এমন একটা সমাজে যারা কস্টে আছেন যারা ক্ষুধার্ত আছেন তাদের জীবনে প্রতিদিনই রোজার মাস। তাদের জীবনে রোজার মাস শেষ হয়না। তাদের জীবনে কোনদিন ঈদ আসেনা।