যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরুনোমাত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে কারাফটকেই নিহত হয়েছেন হেমায়েত উদ্দিন (৩৮) নামে এক ব্যক্তি। শহরতলির মণ্ডলগাতি এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত ওই অঞ্চলের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন দাবি করেছেন।
যশোর কোতোয়ালি থানার এএসআই নাহিয়ান বলেন, একটি অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়ে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়েছিলেন হেমায়েত। সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা কারা ফটকের সামনেই তাকে গুলি করে হত্যা করে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার শাজাহান আহমেদ বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুক্তি পেয়ে হেমায়েত কারা ফটক পার হয়ে সামনের রাস্তা পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলযোগে এসে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।’
‘কারাগারের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত রক্ষীরা দুর্বৃত্তদের ধাওয়া করে। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলের একটি দুই দফা পড়ে যায়। ফলে দুর্বৃত্তরা সেটি ফেলেই পালিয়ে যায়।’
সিনিয়র সুপার বলেন, ‘কারারক্ষীরা আমাকে বিষয়টি ফোনে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসি। রক্ষীদের কাছ থেকে জানতে পারি, দুর্বৃত্তরা হেমায়েতকে লক্ষ্য করে প্রথম দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে পড়ে থাকা হেমায়েতের মাথায় আরেক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়।’
এদিকে, গুলিবিদ্ধ হেমায়েতকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান কোতোয়ালি থানার এসআই শাহাবুল। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুন রাত আটটায় জানান, হাসপাতালে আনার আগেই হেমায়েতের মৃত্যু হয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (খ সার্কেল) বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার সরকারি বাসভবনের সামনে (জেলখানা-লাগোয়া) এক যুবককে দুর্বৃত্তরা গুলি করে পালিয়ে গেছে। উপস্থিত লোকজনের সহায়তায় কোতোয়ালি থানার এসআই শাহাবুল তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।
তবে থানার এসআই নাহিয়ান জানান, হেমায়েতের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে হত্যা, বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র মামলাও আছে। হেমায়েত মণ্ডলগাতি এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করতেন বলে জানান থানার এই কর্মকর্তা।
এদিকে, হেমায়েত হত্যাকাণ্ডের খবর জানামাত্র রাত সোয়া আটটার দিকে জেনারেল হাসপাতালে যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিতকুমার নাথ। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, হেমায়েত আওয়ামী লীগ কর্মী। তবে তার কোনো পদ-পদবি ছিল না।
মোহিতনাথ স্থানীয় লোকজনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘তফশিডাঙ্গার মামুন, কৃষ্ণবাটির মনা ও বাবু এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।’
নিহত হেমায়েত উদ্দিন মণ্ডলগাতির জিন্নাত ওরফে জিন্নাত কসাইয়ের ছেলে।
ছেলের কারামুক্তির কথা শুনে জেলগেটে এসেছিলেন হেমায়েতের মা রোকেয়া বেগম। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা মোহিতকুমার নাথের সহযোগী জনৈক মিঠু তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। ফেরার পথে তিনি ছেলে খুন হয়ে যাওয়ার কথা শুনে হাসপাতালে ফিরে আসেন।
রোকেয়া বেগমের অভিযোগ, ‘একই এলাকার হাসান, আজিজুল, কৃষ্ণবাটি গ্রামের মনা, বাবু, ফিরোজের সঙ্গে হেমায়েতের পূর্বশক্রতা ছিল। তারাই আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে।’