কাশিমপুর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেম

ঢাকা : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতনেতা মীর কাসেম আলীকে গাজীপুরের কাসিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নেছার আলম জানিয়েছেন, সোমবার (২০ জুন) বেলা ১২টার দিকে মীর কাসেম আলীকে কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। সকাল সোয়া ৭টার দিকে মীর কাসেমকে ঢাকায় উদ্দেশে পাঠানো হয়। দুপুরের আগেই পৌঁছান তিনি।

ঢাকা কারাগারে পৌঁছালে তাকে কনডেম সেলে রাখা হয় বলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেলসুপার জাহাঙ্গীর কবির জানিয়েছেন। মীর কাসেমকে কেন ঢাকায় আনা হয়েছে, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে এখানে রাখার জন্যই আনা হয়েছে। তিনি এখানেই থাকবেন।’

গত ১৯ জুন জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী খালাস চেয়ে আপিলের রায়ের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেমের আইনজীবীরা এ আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে ৬৮ পৃষ্ঠায় ১৪টি যুক্তি দেখান তারা।

গত ৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ পায়। রিভিউ নিষ্পত্তি ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা— নিয়ম অনুযায়ী এ দুটি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তবেই দণ্ড কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে পারবে সরকার।

আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের বাধ্যবাধকতা ছিল মীর কাসেম আলীর। সে হিসেবে নির্ধারিত সময়ের এক দিন আগেই তিনি রিভিউ আবেদন করেন।

পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা তিনবার কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে নিয়মিত দেখাও করেছেন।

৬ জুন দুপুরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে রয়ের অনুলিপি বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনালে) পাঠানো হয়। ওইদিন সন্ধা সাড়ে ৭টার দিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে মীর কাসেমের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারকরা। লাল কাপড়ে মুড়িয়ে পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিসি অফিস তথা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়।

পরের দিন ৭ জুন মঙ্গলবার সকালে কাশেমপুর কারাগারে পার্ট-২ এ মীর কাসেম আলীকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।

আপিলের রায়ে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে এক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখা হয়। এর মধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগে হত্যার দায় থেকে এই জামায়াত নেতা অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগ সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখা হয়।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.