ক্রসফায়ারে নিহত যুবকের আসল পরিচয় কি?

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় শনিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ব্লগার অভিজিৎ রায় ও নিলাদ্রী নিলয় হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত এক সন্দেহভাজন ব্যক্তি ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর পুলিশ বলেছিল নিহত ব্যক্তির নাম শরিফ। তিনি অভিজিৎ রায় ও নিলাদ্রী নিলয় হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলো। অভিজিৎকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেখানকার ভিডিও ফুটেজে শরিফুলের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে পুলিশের দাবি। এছাড়া নিহত এই ব্যক্তি সমকামীদের পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহায মান্নান হত্যাসহ আরো সাতজন ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি অন্তত পাঁচটি নামে পরিচিত ছিলো বলে গোয়েন্দা পুলিশের ভাষ্য। কে এই ব্লগার হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ সেটা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে জনমনে। জানা গেছে নিহত ব্যক্তির বাড়ি সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছাতে। তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ জানিয়েছেন, কলেজের কাগজপত্রে তার নাম মো. মুকুল রানা নামে আছে। সে ২০০৮ সালে এসএসসি পাশ করে, ২০১০ সালে এইচএসসি। এবং ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষের পর সে আর কলেজে আসেনি। সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে মুকুলের লাশ শনাক্ত করেন তার দুলাভাই হেদায়েতুল ইসলাম ও চাচাত ভাই রহমত আলী। এ সময় তারা মুকুলের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখান। যার নম্বর, ১৯৯৩৮৭১৮২৫৪০০০০৬৮। এতে মুকুলের পিতার নাম মো. আবুল কালাম আজাদ এবং মাতার নাম মোছা. ছকিনা লেখা হয়েছে। তার জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর। তিনি চলতি বছরের ২৩শে ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন বলে দাবি করেছেন তার বাবা আবুল কালাম আজাদ। গতকাল টিভিতে খবর দেখে তিনি ছেলের ব্যাপারে জানতে পারেন। তিনি বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় যশোরের বসুন্দিয়া এলাকা থেকে তাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। সেই পক্ষে মাসুদ রানা নামের এক ছেলে আছে। তিনি চিংড়ি ঘেরে কাজ করেন। দ্বিতীয় বউয়ের এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে বড়, মুকুল রানা। মেয়ের নাম শারমীন সুলতানা রিমি। রিমি সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আবুল কালাম আজাদের দাবি, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঢাকায় অন্য কোন দলের সঙ্গে তার ছেলে জড়িয়ে পড়েছিল কি না, তা তিনি জানেন না। নিহত শরিফুলের বোন রিমির দাবি, তার ভাই মুকুল খুব মেধাবী ছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনলাইন মুখপত্র ডিএমপি নিউজে গতকাল রোববার বলা হয়, শনিবার রাত পৌনে তিনটার দিকে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল মেরাদিয়া এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় সন্দেহজনকভাবে তিন মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাওয়া করে। এ সময় হঠাৎ মোটরসাইকেল আরোহীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় দুজন দৌড়ে পালাতে সক্ষম হলেও গোলাগুলির একপর্যায়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরিফ গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নিহত তরুণের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয় রোববার বিকালে। খিলগাঁও থানার এসআই আল মামুন রিপোর্টে নিহতের নাম শরিফুল উল্লেখ করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অভিভাবক ছাড়া এ নামে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস মেহেদী। ফলে অজ্ঞাতনামা (২৫) হিসাবে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে লাশ ঢামেকের মর্গে রাখা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. দিদার আহাম্মদ দাবি করেন, নিহত শরিফুল বিভিন্ন নামে গোপনে সক্রিয় ছিল। অভিজিৎসহ আরও ছয়টি খুনে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল সে। তিনি আরও বলেন, অভিজিৎ হত্যাকান্ডের তদন্তে সংগ্রহ করা সিসি টিভি ফুটেজে তাকে দেখা গেছে। বিভিন্ন সময় ব্লগার, প্রগতিশীল লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন যে ছয় জঙ্গি সদস্যকে ধরিয়ে দিতে পুলিশ সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল তাদের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *