বাংলাদেশির প্রাণ বাঁচাতে ভারত থেকে এলো বিরল রক্ত

ঢাকা : মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। বছর পঁচিশের এক তরতাজা যুবক। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। বাড়িতে রয়েছেন অসুস্থ মা। গত ২১ মে ঢাকায় এক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন কামারুজ্জামান। ঢাকারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে চিকিত্সকরা দেখেন কামারুজ্জামানের রক্তের গ্রুপ একেবারে বিরল। দেশের কোনো ব্লাড ব্যাংকেই খোঁজ মেলেনি ওই গ্রুপের রক্তের। এই বিরল ব্লাড গ্রুপের নাম ‘বম্বে’।

তাই অনলাইনের মাধ্যমে এ ধরনের ব্লাড গ্রুপের খোঁজ শুরু করেন কামারুজ্জামানের পরিবার ও বন্ধুরা। ভারতেও মাত্র ৪০০ জনের দেহে বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনই শুধু রক্ত দান করেন। খুঁজতে খুঁজতে তারা পৌঁছে ‌যান মুম্বাইয়ের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার বিনয় শেট্টির কাছে।

বিষয়টি জানতে পেরে নিজেদের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশি ওই যুবককে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন চার মুম্বাইবাসী। তারা হলেন- স্বপ্না সবন্ত, কৃষ্ণনন্দ কোরি, মেহুল ভেলেকর ও প্রবীণ শিন্ডে।

গত বৃহস্পতিবার রক্ত নিতে মুম্বাই যান কামারুজ্জামানের সহকর্মী শেখ তুহিনুর আলম। সেখান থেকে চার ব্যাগ রক্ত নিয়ে শুক্রবার দেশে ফিরেন তিনি।

তবে ভারত থেকে রক্ত আনা সহজ কাজ ছিল না। কারণ ভারতের কাস্টমস আইনে যে কোনো দেহাংশ বিদেশে রপ্তানি বা পাঠানো নিষিদ্ধ। বিনয় শেট্টি বলেন, ‘বিশেষ ক্ষেত্রেই সেই রক্ত ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে ‌যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। আমাদের তাই প্রচুর অনুমতি নিতে হয়েছে।’

ভারতের বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কামারুজ্জামানের সহকর্মী তুহিনুর আলম বলেন, ‘আমরা তো ওর (কামারুজ্জামান) বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। তার বাঁ হাত ও পায়ের হাঁড় ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে। কোমরের হাঁড়ও ভেঙে গেছে। ডাক্তাররা বলেছেন- তাকে সারিয়ে তুলতে অস্ত্রোপচার করতেই হবে। কিন্তু তাতে বাধ সাধে তার রক্ত।’ ৎ

তিনি বলেন, ‘রক্তের সন্ধানে আমরা অজস্র ফোন করেছি। গোটা ঢাকা শহরের কোনো ব্লাড ব্যাংক বাদ দিইনি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তো বম্বে ব্লাড গ্রুপের নামই শোনেনি। কামারুজ্জামানের পরিবারের মধ্যে শুধু তার বোনের রক্ত ম্যাচ হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা রক্তদানের উপ‌যুক্ত ছিল না।’

তুহিনুর আরো বলেন, ‘কামারুজ্জামান পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সেই অর্থে ভারত শুধু একটা প্রাণ বাঁচাল না, বাঁচাল একটা গোটা পরিবারকে।’

বম্বে ব্লাড গ্রুপ কী?
বম্বে ব্লাড গ্রুপ কী তা জানার আগে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে কয়েকটা তথ্য জেনে নেয়া যাক। ‘এ’ গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন ‘এ’ এবং অ্যান্টিবডি ‘বি’ থাকে। আবার ‘বি’ গ্রুপের রক্তে অ্যান্টিজেন ‘বি’ এবং অ্যান্টিবডি ‘এ’ থাকে। ‘এবি’ গ্রুপের রক্তে ‘এ’ ও ‘বি’ অ্যান্টিজেন থাকে। কিন্তু কোনো অ্যান্টিবডি থাকে না। এই তিনটি গ্রুপের রক্তেই অ্যান্টিজেন ‘এইচ’ থাকে। আর ‘ও’ গ্রুপের রক্তে শুধু অ্যান্টিজেন ‘এইচ’ থাকে। আর অ্যান্টিবডি থাকে ‘এ’ ও ‘বি’। কিন্তু ‘ও’ পজেটিভ রক্তের গ্রুপের অনেকসময় অ্যান্টিজেন ‘এইচ’ থাকে না। আর একেই বম্বে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়। একে ‘এইচএইচ’ গ্রুপও বলে।

‘এইচ’ অ্যান্টিবডি থাকার জন্য অন্য কোনো রক্ত এই গ্রুপের বাহকদের দেয়া যায় না। শুধুমাত্র বম্বে ব্লাড গ্রুপের রক্তবাহকরাই তাদের রক্ত দিতে পারেন। অথচ যে কোনো গ্রুপের মানুষকে বম্বে ব্লাড গ্রুপের বাহকরা রক্ত দিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.