ওরল্যান্ডোর একটি সমকামী নৈশক্লাবে সন্ত্রাসী হামলায় আনুমানিক পঞ্চাশজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা হত্যা করেছে তা জানা না গেলেও অন্যান্য সব সময়ের মত সবগুলো মিডিয়া উগ্রবাদী মুসলিমদের দিকেই আঙ্গুল উঠাচ্ছে। ২০১৫ সালের আদমশুমারী অনুসারে যুক্তরাস্ট্রে ৩৩০০০০০(৩.৩ মিলিয়ন) মুসলমান বাস করে। কট্টর মুসলিম বিরোধী ধনী ব্যবসায়ী যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপার্থী ডনাল্ড ট্রাম্ফ এই সুযোগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আরো কিছু বিষাগার করার সুযোগ পেলো।
সারা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে বহু যুগ ধরেই যুক্তরাস্ট্র চালিয়ে যাচ্ছে লুট, বোমাবাজী, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষন। ইরাকের তেলের খনি দখল করতে না পেরে ও মধ্যপ্রাচ্যের তেল পরিবহণের জন্য আফগানিস্তানের নিচে দিয়ে একটি পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ করাতে বাধা পেলে ৯/১১, ২০০১ সালে রিমোট প্লেনের মাধ্যমে যুক্তরাস্ট্র নিজেদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধবংস করে এবং সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে যুক্তরাস্ট্রের অর্থায়নে আফগানিস্তানে প্রতিষ্টিত তালেবানদের ও তালেবানদের নিয়ে প্রতিষ্টিত আল-কায়দাকে এই আক্রমণের জন্য দোষারোপ করে সারা বিশ্বে তা মিডিয়া ব্রেইন ওয়াশ ও প্রপোগান্ডার মাধ্যমে সত্য বলে প্রতিষ্টিত করে। এইভাবে সফলতার সাথে সাড়া বিশ্বে মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, গ্রেফতার করা হয়, নির্যাতন, ধর্ষন ও হত্যা করা হয়। আফগানিস্থান, পাকিস্তান ও বিশ্বের আরো কিছু মুসলমান দেশ থেকে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে যুক্তরাস্ট্রের আর্মি ঘাটি গুয়ানতানামো বে কিউবাতে বন্দী করে অমানবিক নির্যাতন চালানো অব্যহত রয়েছে। গুয়ানতানামো বে, কিউবার মার্কিন ঘাটিতে মুসলমান কয়েদীদের উপর নির্যাতন এত অমানবিক যা হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ইহুদীদের উপরে চালানো নির্যাতনকে হার মানিয়েছে।
গতকালকের ওরল্যান্ডের সমকামী নৈশক্লাবের ম্যাসাকার যে কেউ ঘটাতে পারে। অনেক খৃষ্টানও সমকামীদের ঘৃণা করে। যারা কোন ধর্ম মানেনা তাদের মধ্য অনেকেই সমকামীদের ঘৃণা করে। ঘৃণা অপরাধ, বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িকতা মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কোন বিরল ঘটনা নয়। এককালে আফ্রিকা থেকে মানুষজন ধরে এনে দাস হিসাবে বিক্রি করা হতো সাড়া বিশ্বে । সেইসব দাসেরা যুক্তরাস্ট্রে অনেক সংগ্রাম করেছে ঘৃণা ও বর্নবাদী অপরাধের বিরুদ্ধে। বর্ণবাদী, ঘৃণা অপরাধ, সাম্প্রদায়িকতা মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। সেদিন আফ্রিকান দাসেরা ছিল মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার শিকার, তারপর মেক্সিকানেরা সাম্প্রদায়িকতার শিকার ছিল এবং আছে , এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে মুসলমানেরা। যেকোন ধরণের হত্যাকান্ড ঘটলেই মুসলমানদের দায়ী করা হয়।
আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়দার মত সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সৃষ্ট করেছে আইসিস (ইসলামিক স্টেট সিরিয়া এন্ড ইরাক) সন্ত্রাসী গ্রুপ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করে যারা সেখানকার মানুষের সাধারণ জীবনযাপন ব্যাহত করে যাতে যুক্তরাস্ট্র হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং সেইসব দেশে প্রবেশ করে সেইসব দেশের সম্পদ লুট করতে পারে। পালেস্টাইনের জমিগুলো দখল করে সেখানে ইহুদীদের বসবাসের জন্য বিলাসবহুল ইমারত তৈরি করার জন্য বিগত ৭০ বছর ধরে পালেস্টাইনীদের উপরে জুলুম চলছে। ইসরায়েলের জেলগুলোতে সব কয়েদীরাই পালেস্টাইনী। হিটলারের কায়দায় পালেস্টাইনীদের উপরে নির্যাতন চলছে যুগ যুগ ধরে। বিশ্বের বেশীরভাগ জনপ্রিয় মিডিয়াগুলো যেহেতু ইহুদীদের মালিকানাধীন তাই পালেস্টাইনী গনহত্যার জন্য ইসরায়েলকে কোন দিন কেউ সন্ত্রাসী বলেনা। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করে এবং পালেস্টাইনীদের উপরে বোমা হামলা করে বলা হয় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা করার অধিকার আছে। পালেস্টাইনীদের উপরে জুলুম সন্ত্রাস নয়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার অধিকার। এভাবেই গনহত্যাকে কখনো সন্ত্রাস আর কখনও অধিকার হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ওরল্যান্ডো সমকামী নৈশক্লাবে গতকালকের হত্যাকান্ডও একটি সন্ত্রাসী আক্রমণ। ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে মুসলিম হত্যার মত হতে পারে এটাও একটি সাজানো রাজনৈতিক নাটক। ওরল্যান্ডোর নৈশক্লাবে সেরাতে যারা ছিলেন, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের জন্য সমবেদনা জানাচ্ছি। বাংলাদেশে হোক আর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে হোক আর পালেস্টাইনে, পুঁজিবাদী স্বার্থে, পুজিপতিদের দালালদের মাধ্যমে সিস্টেমেটিক রাজনৈতিক পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কখনও গ্রহনযোগ্য নয়।