শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ বিড়ম্বনায় প্রবাসী যাত্রীরা

ঢাকা: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সরকারি ছুটির দিন শুক্রবারও নজিরবিহীন ‘লাগেজ জটে’ ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লাগেজ পাচ্ছেন না অনেকে। আবার ঠিক কখন কনভেয়ার বেল্টে লাগেজ ছাড়া হবে, সে কথা জানার মতোও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।

শুক্রবার (১০ জুন) বিকেল ৩টার দিকে বিভিন্ন ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণকারী একাধিক যাত্রী এমনই অভিযোগ করেছেন বাংলানিউজে।

ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, ফ্লাইট অবতরণের পর ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষ করতে সময় লেগেছে ৫৫ মিনিট। তারপর আরও ঘণ্টাখানেক বসে থেকেও লাগেজের দেখা পাইনি। ঠিক কখন লাগেজ আসবে সে কথা জানার জন্যও কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন লাগেজ এলেই ছাড়া হবে।

বিমানবন্দর সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় ঘণ্টায় ছয়টি ফ্লাইট অবতরণ করেছে শাহজালাল বিমানবন্দরে। রিয়াদ, জেদ্দা, ইয়াঙ্গুন ও কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন গন্তব্য থেকে এসেছে এ ফ্লাইটগুলো। এরমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। অর্থাৎ গড়ে ১৫ মিনিটে মাত্র একটি ফ্লাইট নেমেছে ‘আন্তর্জাতিক’ খেতাবধারী বিমানবন্দরটিতে।

যাত্রীরা বলেন, এই সময়ে কার্যক্রম সারতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অবস্থা একেবারে হযবরল। অথচ এমন অনেক এয়ারপোর্ট রয়েছে, যেখানে প্রতি মিনিটে একটি করে ফ্লাইট ওঠানামা করে।

তারা বলেন, এ ছয়টি ফ্লাইটের যাত্রীদের লাগেজ হ্যান্ডেলিং করতে এয়ারপোর্টে যে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা হাস্যকর এবং ভয়ানক বিরক্তির। কনভেয়ার বেল্টের সামনে কয়েকশ‘ যাত্রীকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লাগেজ না পেয়ে কনভেয়ার বেল্টের ওপরেই বসে পড়েন। দীর্ঘ যাত্রার পর তাদের চোখেমুখে দেখা যায় ক্লান্তির ছাপ।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, অনেক আগ থেকেই এমন বিড়ম্বনা থাকলেও দিনে দিনে অসহনীয় মাত্রা নিচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ ব্যবস্থাপনা। এসব নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠলে কিছুতেই সুরাহা হচ্ছে না। যেন দেখার কেউ নেই।

গত শুক্রবার (৩ জুন) ঢাকায় ফেরা তুষার নামে এক যাত্রীর অভিজ্ঞতাও একই রকম। ওই দিন ভোর ৫টায় ফ্লাইট থেকে নেমে ইমিগ্রেশনে লাইনে দাঁড়াতে হয় তাকে প্রায় ৪০ মিনিট। আর লাগেজ পেতে সময় লাগলো আরও ৪০ মিনিট। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে যায় তার এয়ারপোর্ট থেকে নিস্তার পেতে।

তুষার জানান, কনভেয়ার বেল্টের সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের হাপিত্যেশ করতে দেখেছেন তিনি। তুষার যখন কনভেয়ার বেল্টের ঠিক ‍মুখে গিয়ে দাঁ‍ড়িয়ে ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করছেন, ঠিক তখন একহাত দূরে প্রাচীরের ওপার থেকে লাগেজগুলো ধপাধপ কনভেয়ার বেল্টে ফেলা হচ্ছিল।

তুষার অভিযোগ করেন, লাগেজ ছুড়ে ফেলা দেখে অনেক যাত্রীই ধীরে ফেলতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অনেকের ব্যাগের লক ভাঙতে, কারো কারো ব্যাগের ভাঙা চাকা কনভেয়ার বেল্টে গড়াগড়ি খেতেও দেখেন তিনি।

বিমানবন্দরের কর্মীদের বিরুদ্ধে যাত্রীরা ‍অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে তাদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন-সমালোচনা ক্রমেই বাড়ছে।

যাত্রীরা বলেছেন, তাদের ব্যবহার দেখলে মনে হয়, তারা যেন করুণা করছেন আমাদের। লাগেজগুলো যেভাবে ছুড়ে ফেলা হয়। খুব খারাপ লাগে। এই এয়ারপোর্ট দিয়ে দু’বার যাতায়াত করলে উন্নত মানের পোক্ত ব্যাগও নষ্ট হয়ে যায়।

এমন ‘আন্তর্জাতিক’ মানের এয়ারপোর্টে কেন আসবেন বিদেশিরা? এভাবে ক্ষোভও ঝাড়েন যাত্রীরা।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পারিচালক জাকির হাসানের মোবাইলে কল করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.