সাঁড়াশি অভিযানে আটক হচ্ছে সাধারণ মানুষ

ঢাকা : গুপ্তহত্যা দমনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানের নামে সাধারণ মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনের সীগাল রেস্টুরেন্টে এক ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল খেলাফত মজলিস এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে।

প্রসঙ্গত, গুপ্তহত্যাসহ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে শুক্রবার থেকে সারাদেশে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ অভিযানের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬শ জনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে, অভিযানের নামে অল্প বয়সী ছেলে, সাধারণ মানুষ আর বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ধরা হয়েছে।’
গুপ্তহত্যার ছুতোয় বিরোধী মতকে দমন করতেই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘সাঁড়াশি অভিযানের কথা বলে ইতোমধ্যেই ক্রসফায়ার বা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বেড়ে গেছে। ৯ জন ইতিমধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে জীবনযাপন সম্ভব নয় এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশে এখন কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নন। কেউ শান্তিতে নেই। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, এমনকি ধর্ম পালনের অধিকারও। মানুষ তাদের প্রত্যেকটি দিন আজ আতঙ্কে কাটাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘গুপ্তহত্যা চলছেই। শুধু ব্লগার বা সংখ্যালঘুরাই নয়, ইসলাম ধর্মেরও সাধারণ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। যারা ধর্মে বিশ্বাস করে না তাদেরও যেমন হত্যা করা হচ্ছে, তেমনি যারা ধর্মে বিশ্বাসী তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে।’

ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশে বিরোধী কোনো পক্ষ রাখতে চাচ্ছে না। গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রের মুখোশ পরে সরকার ফের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে চায়। কিন্তু এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। কোনো স্বৈরশাসক এভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার জনগণ ও ২০ দলীয় জোটের অনেককে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। কারণ, মানুষ এতে বিভ্রান্ত হবে না। বরং তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।’

খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা জোবায়ের আহমেদ চৌধুরী ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন। দলের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি।

ইফতারে ২০ দলীয় জোটনেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, কল্যাণ পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল কবির ভুইয়া, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল করিম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ প্রমুখ। তবে জামায়াতের ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

২০ দলীয় জোটের বাইরে এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন ও খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদীও উপস্থিত ছিলেন।

খেলাফত মজলিসের নেতাদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, নায়েবে আমীর সৈয়দ মাওলানা মুজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক এম কে জামান, শেখ গোলাম আজগর প্রমুখ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- দৈনিক নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রমুখ।

ইফতারের পূর্বে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *