খুব শব্দ করে হাসতে গেলে অনেকেই কাশতে পারেন সেটাই স্বাভাবিক আর তার অর্থ অসুস্থতা নাও হতে পারে। হাসি ও কাশি একই নার্ভ ব্যবহার করে তাই হাসতে গেলে কাশি হতে পারে। তবে হাসি ছাড়াও অন্য সময় যদি কাশি হয় তাহলে তার কারণ অনুসন্ধান করা যেতে পারে। যারা ধূমপান করেন তাদের কাশির কারণ হলো ধূমপান। যারা ধূমপান করেন না অনেক কারনেই তারা কাশতে পারেন।
হাসি এবং হাসতে হাসতে কাশি – এর বেশ কিছু কারণ আছে। এইসব কারনের অন্যতম হলো এ্যজমা বা হাফানী। অনেকভাবে এ্যাজমা বা হাফানী হতে পারে। ঠান্ডা লেগেও হাফানীর সূত্রপাত হতে পারে। ঠান্ডা অনেকভাবে লাগতে পারে। যেমন অনেক গরমে অনেকেই জানালা খুলে ঘুমায় কিন্তু রাত ভোর হলে তখন আর গরম থাকেনা, সূর্য উঠার আগে হীম হীম ঠান্ডা বাতাস জানালা দিয়ে আসে। সেই ঠান্ডা বাতাস নাক দিয়ে টেনে নিলে অনেক সময় থল থলে শেলোস্যা বুকে জমে । শ্বাস প্রশ্বাসের নালীতে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্রাশের মত আছে সেগুলো ভারী করে দেয় হীম হীম বাতাস ফলে মুখ দিয়েও শ্বাস নেওয়া কস্টকর হয়। মুখ, নাক বন্ধ হয়ে আসে, গলা খুশ খুশ করে, শুখনো কাশি হয় আর শ্বাস নিতে কস্ট হয় আর সে থেকেই অনেকের হাফানী হয়। তখন যদি ইনহেইলার নেওয়া যায় তাহলে শ্বাসনালী প্রশস্ত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করে। ভারী জিনিষ উঠালেও বুকে ব্যাথা লেগে শ্বাসকস্ট হতে পারে এবং হাফানী বা এ্যাজমা হতে পারে। এলার্জী থেকেও শ্বাস কস্ট হতে পারে। যখন গাছে নতুন পাতা আসে, ফুল আসে তখন অনেকেই শ্বাস কস্টে বা হাফানীতে ভোগেন। দৌড়াতে গেলে অনেকেই শ্বাস নিতে পারেননা।
নাক ও গলার শ্বাসনালী একবার দুর্বল হয়ে গেলে তা সবল করতে অনেক সময় লাগে বা কখনো সবল হয় না তাই হাফানী বা এ্যাজমা চুপচাপ বুকে বাসা বেঁধে রাখে। হাসতে গেলে কাশি আসে ।
এ্যাজমা বা হাফানী হবার আরো অনেক কারণ আছে। দুঃশ্চিন্তা করলে এ্যাজমা বা হাফানী হতে পারে। রাতে ঠীকভাবে ঘুম না হলে এ্যাজমা বা হাফানী হতে পারে। দুঃশ্চিন্তা থেকে আপনি নিজেকে কিভাবে বাঁচাবেন ? আপনার আশে পাশে যে সমস্যাগুলো আছে, সবগুলো সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো আপনি হয়তো নিয়ন্ত্রন করেন না। যদি তাই হয় তাহলে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবেনা বরং আপনি অসুস্থ হয়ে যাবেন। ঘুমানো অনেকটা অভ্যাসের ব্যাপার। দুঃশ্চিন্তা করলেও রাত ঘুম ভাল হয়না। অনেক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ দিনরাত মগজের ভেতরে এইসব সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে তারপর রাতে যদি ঘুম আসেও তখন অনেক রকমের বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন দ্যাখে। সমস্যার সমাধান তো হয়না বরং নিজের শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, ঘুম হয়না, শ্বাস কস্ট হয়, হাসতে গেলে কাশি আসে।
এক এক মানুষের এক একভাবে হাফানী হতে পারে। ধুলো, বাতাস, নতুন ফুল বা পাতা থেকে এলার্জী বা যেকোন দ্রব্য থেকে এলার্জী, ধূমপান থেকে, বুকে ব্যাথা লেগে, অতিরিক্ত ব্যায়ামের কারণে, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে, এসিড রিফেক্সের কারণে (এসিড রিফেক্স এর কিছু কারনের মধ্য অন্যতম হলো খালি পেট থাকা। খাদ্যনালীতে এক ধরণের লালা আছে যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে এই লালার কাজ হলো খাদ্যকে গুড়িয়ে দেওয়া যাতে আমাদের শরীর তা হজম করতে পারে। পেটে খাবার না থাকলে এই লালা কিছু পায়না তখন শরীরের অংশগুলোকে খাবার মনে করে গুড়িয়ে দিতে থাকে ফলে ক্ষতের সৃষ্টি করে তখন এক ধরনের বিশ্রী গন্ধ পেট থেকে গলা দিয়ে উঠে আসে এবং সেটা থেকেও শ্বাস কস্ট হতে পারে। কম করে হলেও সেজন্য সময় মত যেকোন খাবার খাওয়া উচিৎ )।
হাসা থেকে কাশি এবং কাশতে কাশতে এক সময় শ্বাস কস্ট শুরু হয়। হাসির কারণ কিন্তু কাশি নয়। শ্বাসনালী আগে থেকেই সংকুচিত হয়ে থাকে উপরে বর্নিত এক বা একাধিক কারণে। সেজন্য হাসির সময়ে কাশি আসে।
সবার হাসা উচিৎ । হাসলে শরীর সুস্থ থাকে। তবে হাসলে যদি কাশি আসে তখন অনেকেই হাসতে চায়না এই ভয়ে যে হাসলেই কাশি হবে। সেজন্য কাশি যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করা দরকার। সব খাবারে আদা ব্যবহার করলে কাশি কম হবে। ফ্রিজ থেকে খাবার খাওয়া বা পানি পান পরিহার করতে হবে। কুসুম কুসুম গরম পানিতে মধু, লবন, লেবুর রস দিয়ে তা পান করলে কাশি কমে। তুলসীপাতা ও মধু কাশি কমতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর সময় জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে হবে। ফ্যান ছেড়ে ঘুমালে গলায় হালকা স্কার্ফ লাগিয়ে ঘুমাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেনো ঘাম না হয় আর ঘাম শরীরে বসেও ঠান্ডা লাগতে পারে। পাহাড়ের অধিবাসীরা ঠান্ডা লেগে কাশি প্রতিরোধ করার জন্য লবন দিয়ে চা পান করেন।
এ্যাজমা বা হাফানী সম্পূর্নভাবে ভাল হয়না তবে এটাকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। সব মানুষের একই কারণে হাফানী হয়না। এক এক মানুষের এক এক কারণে হাফানী হয় । সেজন্য প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হবে কি করার পরে শ্বাস কস্ট হয়। প্রতিদিন ডায়েরী রাখতে হবে। তাহলেই জানা যাবে হাফানীর ট্রিগার । ট্রিগার জানা গেলেই সেই কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে তাহলেই হাফানী নিয়ন্ত্রনে রাখা যাবে।
অনেকের ঝগড়া বা বিতর্কে হাফানী হয়। তাদের বিতর্কে এড়িয়ে যেতে হবে।
অনেকেরই ঠান্ডা লেগে হাফানী হয় । তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যেন ঠান্ডা না লাগে।
অনেকেরই কোন এক খাবার খেলে এলার্জী হয় এবং তা থেকে হাফানী হয় তাদের উচিৎ এই বিশেষ খাদ্যকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তা খাওয়া সম্পুর্নভাবে বন্ধ করতে হবে।
অনেকেরই দুঃশ্চিন্তা করলে হাফানী হয় তাদেরকে দুঃশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রথমে হাফানীর কারণ জানতে হবে তারপর সেই কারণকে নির্মুল করেই হাফানীকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।
যখন হাফানী সম্পুর্নভাবে নিয়ন্ত্রনে এসে যাবে তখন হাসলে আর কাশি হবেনা।
পীঠে বা মেরুদণ্ডে যাদের বাথা আছে (এই ব্যাথা হবার অন্যতম কারণ ভারী জিনিষ উঠানোর ফলে মেরুদণ্ডে চাপ সৃষ্টি, চলাফেরা কম করা ইত্যাদি), হাসতে গেলে তাদের কাশি হতে পারে। সংকুচিত শ্বাসনালীর কারনেই কাশি হয়। সংকুচিত শ্বাসনালীকে প্রশস্থ করার জন্য উপরে বর্নিত সম্ভাব্য উপায় থেকে নিজের শরীরের জন্য প্রযোজ্য একটি উপায় বেছে নিতে হবে বা নিজেকেই একটি উপায় বের করে নিতে হবে।
শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য হাসুন। আর কাশি যদি হাসিতে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে কাশির কারণ খুঁজে বের করে সেই কারণকে নির্মুল করে কাশিকে শরীর থেকে বহিস্কার করুন। ভাল থাকুন। ক্ষুদ্র জীবন প্রবাহে সুস্থ সময় অতিবাহিত করুন।