প্লাস্টিকের বাসন আছে, বদনা আছে, টেবিল আছে, চেয়ার আছে, আবার ক্রেডিট কার্ডও প্লাস্টিকের। আমি তো কারু হৃদয় হাতে নিয়ে দেখিনি তা কি দিয়ে তৈরি। সেই হৃদয় প্লাস্টিকের হতে পারে বা কাগজের বা পাথরের বা সিলিকণের, সেই হৃদয় যা দিয়েই তৈরি হোক না কেনো সেই হৃদয় থেকে আসা ভাবনা, কথা, লেখা, গান, কবিতা, বলে দেয় আসলে হৃদয়টি কি দিয়ে তৈরি। বিবাহ প্রথার সমালোচনা করে ইংরেজীতে বলা হয় – marriage institution is a legal prostitution অর্থাৎ বিবাহ প্রথা আইনী বেশ্যাবৃত্তি । ভাবছি বিবাহ প্রথাই আইনের ভূমিকা কি ? বিয়ে করার জন্য আইন লাগবে কেনো ? বিয়ে করার জন্য বিয়ে রেজিস্ট্রি করা লাগবে কেনো ? বিয়ে তো হয় নারীপুরুষের মাঝে বা নারীর সাথে নারীর বা পুরুষের সাথে পুরুষের। সেখানে এত সাজগোজ কেনো করা লাগবে? এত মানুষকে দাওয়াত দেওয়া কেনো লাগবে? এত খরচ কেনো? তাহলে কি বিয়ের সাথে ব্যবসা জড়িয়ে আছে?
বিয়ের জন্য শাড়ী, চুড়ি, আলতা, নোকল, টিকলী, জুতা, পাগড়ি, পাঞ্জাবী, গাড়ী, গরু, চাল, মসলা, কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া, বা হোটেল বা রেস্ট্রুরেন্ট ভাড়া করা ইত্যাদি এইসব কিছুই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনা হয় এবং অনেক টাকা খরচা করে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের চাইতে বিয়ের লেবেল লাগানো জিনিষের মূল্য অনেক বেশী। বিয়ের জিনিষের অনেক দাম হবার কারণে বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা প্রচুর মুনাফা করে থাকে। প্রতিদিন কারু না কারু বিয়ে লেগেই আছে। প্রতিদিন মানুষ কোটি কোটি টাকা খরচা করছে বিয়েতে। বিয়ে শুধু আইনত বেশ্যাবৃত্তিই নয় এটা একটা বাণিজ্যও বটে।
বয়স্প্রাপ্তির পরে যৌন মিলনের জন্য একজন নারী একজন পুরুষকে জীবন সাথী হিসাবে বেছে নেয়। বা একজন পুরুষ অন্য একজন পুরুষকে জীবন সাথী হিসাবে বেছে নেয়। বা একজন নারী অন্য একজন নারী জীবন সাথী হিসাবে বেছে নেয় । এটা নির্ভর করে যে যার প্রতি আকৃষ্ট সেই আকর্ষণের উপর। সমাজে বেশীরভাগ মানুষ যা করে তা যদি অন্য একজন না করে তাহলেই সে ব্যপক সমালোচনার সন্মুখীন হয়। তবে সমাজের বেশীভাগ মানুষ যা করছে সেটাতে সমাজের কিছু মানুষের আগ্রহ না থাকাটা দোষের কিছু নয়। সমাজে বসবাসরত মানুষেরা সবাই স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দমত জীবন সাথী বেছে নেবার অধিকার রাখে। সমাজের সবাই একসাথে যৌন মিলন করেনা। যে যার সাথে এই মিলন করে সুখ পাবে সে তার সাথেই করুক আর এই ব্যপারে যখন অন্য মানুষেরা নাক গলায় বা বিধিনিষেধ আরোপ করে বা ঘৃণা করে বা বাধার সৃষ্টি করে তখন বুঝতে হবে এইসব ঘৃণা আর বিধিনিষেধ আর বাধার পেছনে কোন বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে।
বিয়ে রেজিস্ট্রি করার পেছনে বাণিজ্যিক স্বার্থ রয়েছে। তাতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার টাকা পাবে। আইন বিভাগ টাকা পাচ্ছে । স্টাম্প পেপার বিক্রি হলে। বাজারের অনেক ধরণের ব্যবসায়ীরা মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছে। ভারতের তামিল নাড়ুতে মেয়ে সন্তানের যখন মাসিক হয় তখন খুব জাকজমক করে তা পালন করা হয়। মাসিক একটি অত্যন্ত বিব্রতকর ও অস্বস্থিকর অবস্থা। প্রতি মাসের সাত দিন অত্যন্ত বিশ্রীভাবে কাটে। সেটাকে উতযাপন করার কি আছে ? তাতে ব্যবসায়িক লেনদেন বৃদ্ধি পায়। তামিল নাড়ুতে অনেক মেয়েই জন্ম নিচ্ছে প্রতি মূহুর্তে এবং ১০ থেকে ১২ বছর বয়সের মধ্য তাদের সবারই মাসিক হবে। তখন ব্যবসায়িরা অনেক পন্য বিক্রি করতে পারবে মাসিক হবার আনন্দ উতযাপন করার জন্য।
প্রাকৃতিক কারনে যৌন মিলন ঘটাতে যেয়ে নারী পুরুষেরা যার যার সাথী বেছে নেয় আর এই মওকায় বাণিজ্য এসে সমাজের মানুষগুলোকে এমনভাবে আস্টেপিষ্টে জড়িয়ে ফেলেছে যে মাঝে মাঝে মনে হয় “যৌন মিলন” বিয়েতে একটা গৌন ব্যাপার, শাড়ী, চুরি, গহনা, মেহমান আর যৌতুকই বিবাহের মুখ্য ব্যাপার। বিয়ের আসরে যখন সব মেহমান চলে যায়, সব খাবার সবার পেটে হজম হয়ে যায়, সব আলো নিভে যায়, যখন নারী পুরুষ মিলিত হয় তখন তারা সবাই কি একজন অন্যজনকে ভালবাসে?
অনেক বিয়েতে স্বামী স্ত্রী কেউ কারুকে চিনেইনা জানেই না হয়তো বা দেখেছে কিছুক্ষণের জন্য। এত মানুষ খাইয়ে এত খরচা করে কিভাবে একজন অপরিচিত মানুষেরা সাথে যৌন মিলন করা যেতে পারে ? বেশ্যারা কি করে বা বেশ্যাদের কাছে যারা যৌন মিলন ক্রয় করে তারা কি করে? তারা যা করে সেই একই কাজ বিবাহিত নারী পুরুষ করছে। পার্থক্য শুধু একজন নারীকে একজন পুরুষ সাড়া জীবন ভোগ করছে আর একজন নারীকে অনেক পুরুষ ঘন্টাখানেকের জন্য ভোগ করছে। এই ভোগের বিনিময়ে বউ পাচ্ছে ঘর, নিরাপত্তা, শাড়ী, গহনা আর বেশ্যা পাচ্ছে টাকা। সেই টাকা দিয়েই বেশ্যা ঘর ভাড়া দিচ্ছে, শাড়ী কিনছে, আর বেশ্যার জন্য নিরাপত্তা দিচ্ছে গোটা সমাজ বা সমাজে যারা বেশ্যা প্রথার প্রতিষ্টা করেছে নিজেদের এক্সট্রা আনন্দের জন্য তারা । এই বউ যখন সমাজে বের হয় তখন অমুকের বউ বলে সন্মান পায় কারণ এই বউ হবার জন্য সমাজের অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্টান অনেক মুনাফা করেছে । বেশ্যা হবার জন্য সমাজের বাণিজ্যিক প্রতিষ্টানগুলো তেমন কোন মুনাফা করতে পারে নাই।
এই বিয়ে যখন ভেঙ্গে যায়। তালাক হয়ে যায় তখন সমাজের সকল বানিজ্যিক লেনদেন শেষ শুধু তালাকের আইনজীবিদের বাণিজ্য করার পালা। বিয়েতে “বিশ্বাস ” শব্দটি সম্পুর্ন অনুপস্থিত থাকে বলেই আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়। বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়। অনেক মানুষ খাইয়ে সাক্ষী রাখা হয়। ভিডিও করা হয়। ছবি উঠানো হয়। সব সাক্ষীসাবুদ, রেজিস্ট্রি কিছুই কাজে আসেনা – ঘুরে ফিরে সেই দুই মনের মিলনে যেয়েই সব পথে শেষ হয়ে যায়। দুই মনের মিল যদি না থাকে তাহলে এত খরচার বিয়ে নিমেষে তালাকে এসে আটকে শেষ হয়ে যায়।
বিয়েতে এত খরচা করা হয় দুইপক্ষের সান্তনার জন্য। লোক দেখাবার জন্য। সারাজীবন এক সাথে বসবাস করার জন্য প্রথম মিলনের দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য। কারণ যা কিছুই হোক না কেনো। মিলনে যত সন্তাণের উৎপাদনই হোক না কেন, যারা মিলন করছে তাদের ভেতর যদি “মানুষ” অনুপস্থিত থাকে তাহলে সব কিছুই প্লাস্টিকের মত অনুভূত হবে। যদি অনুভূতি থাকে। সেই বোধ থাকে। ভালবাসার পাবার জন্য আকাঙ্ক্ষা থাকে দেবার জন্য হৃদয় থাকে। আর যদি হৃদয় প্লাস্টিকের হয় তাহলে নারীপুরুষে সব করছে যা কিছু করা দরকার শুধু ভালবাসা অনুপস্থিত। সবাই দেখছে আহা কি সুন্দর পরিবার আর ভেতরে খোকলা। লোক দেখানো ভালবাসাও থাকে সেই ভালবাসাও প্লাস্টিকের।
প্লাস্টিকের হৃদয় নিয়ে দুইজন অপরিচিত মানুষ যুগ যুগ ধরে বসবাস করে এক ছাদের নিচে।
দুইজনের প্রতি দুইজনের যদি ভালবাসা থাকে তাহলে আইন কেনো লাগবে? বাজারের হাজার রকমের ব্যবসায়ীদের কাছে কেনো যেতে হবে? অপরিচিত একজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য কি এত ধুমধাম করার দরকার আছে?
অতীতে মসজিদে খোর্মা বিতরণ করে আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে নারী পুরুষের বিবাহ হতো। মসজিদে যারা ইবাদত করতে আসতেন তারাই সাক্ষী হতেন। পবিত্র কোরাআন মজিদে স্পষ্ট করে বলা আছে কে বিবাহ করতে পারে আর কে বিবাহ করতে পারেনা। যে পুরুষের বউকে ভরণপোষণ দেবার ক্ষমতা নাই সে পুরুষের বিবাহ করা যোগ্যতা নাই। ইসলাম ধর্মে কোন যৌতুক প্রথা নাই। নারী ও শিশুদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের উপরে দেওয়া হয়েছে। মেয়েরা যদি চাকুরী করেও আর যদি তারা ইচ্ছা করে তাহলে সংসারে টাকা দিতে পারে আর সেটাকে বলা হয় চ্যারিটি। সংসার চালানোর দায়িত্ব মেয়েদের উপরে বর্তায় না। স্ত্রীকে উপহার দেওয়া ও সন্মান করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া আছে। ধর্মে যখন এত সুন্দর করে সব নিয়ম করে দেওয়া আছে তখন ইসলাম ধর্ম অনুসারেই মসজিদে খোর্মা দিয়ে যদি বিবাহ সম্পন্ন হয় তাহলে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য বিয়ে একটি স্বাভাবিক ও সহজ প্রাকৃতিক ব্যাপার হবে।