বহু প্রতীক্ষিত মাস রমজান আসতে আর সবে কয়েকটা দিন বাকি। রোজা রাখার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য বেশ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার মধ্যে দিয়ে এই মাসটি পালন করে থাকে। এই সময় সবজায়গায় ছোট বড় সবার মধ্যেই দেখা যায় উৎসবের আমেজ। শপিং মলগুলো এবং রাস্তার ধারে দোকানীদের বিভিন্ন রকমের খাবারের পসরা দেখে বুঝে নিতে হবে এখন চলছে রমজান মাস। বাংলাদেশে তেমন একটা লক্ষ্য করা না গেলেও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নানরকম ব্যানার ফেস্টুন ও আলোকসজ্জা দিয়ে বরণ করা হয় রমযান মাসকে। মসজিদগুলোতে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। চারদিকে সর্বদাই একটা উৎসবমুখর পরিবেশে কাজ করে। তবে এখন প্রশ্ন হলো যে, একটি মাসকে কেন্দ্র করে এতো আয়োজন তা নিয়ে সৌদি মুসল্লিদের কার কি ভাবনা?
মুসলমানরা মনে করে থাকেন রমজান হলো পাপমোচনের মাস। এই মাসে বেশি করে ইবাদত বন্দেগি করলে আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি পাওয়া যায়। কারণ এই মাসেই নাজিল হয়েছিল মুসলিম ধর্মালম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরাণ। নিজেকে শুধরিয়ে নেয়ার উত্তম সময় হলো রমজান মাস। কোন মানুষই আদর্শ মানুষ হয়ে জন্মগ্রহন করে না। ভালো মন্দের সমন্বয়েই তৈরি মানব জাতি। তাই নিজেকে পবিত্র করার জন্য এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য রমযান মাসকে উত্তম বলে মনে করা হয়। রমজান সম্পর্কে প্রিয় নবী মহানবী (সা:) বলেছেন, ‘রমজান মাসে আল্লাহার রহমতের দরজা খুলে যায়, তোমরা বেশি করে তার ইবাদত বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের জন্য স্বর্গের দরজা খুলে রেখেছেন। এই পবিত্র মাস জুরে নরকের দরজা বন্ধ রাখা হবে। শয়তানকে সারাটা মাসব্যাপী শেকলে বেধে রাখা হবে। এই মাসের এক একটি রাত হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম।’
রোজা শুধুমাত্র শারিরীক কর্মকাণ্ড নয়। এটা নিজের শরীর ও আত্মার কাছে একটি প্রতিশ্রুতি স্বরূপ। এই মাসে সরাসরি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায় নামাজের মধ্যে দিয়ে। এই সময়ে শরীরে প্রত্যেকটি অংশই নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এই মাসে মানুষ মিথ্যা, গীবত এবং নানরকম অপকর্ম থেকে বিরত থাকে। কানে শুধু মাত্র ধ্বনিত হয় পবিত্র বাণী। চোখ হারামের দিকে তার দৃষ্টি নিয়ন্ত্রন রাখে। পা সেখানে কখনোই যায় না যেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ। এই মাসে আমরা আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কগুলো পুনরায় নতুন করে সাজাতে পারি। যদি নিকট আত্মীয় স্বজনকে কোন কারণে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে এই মাসই উত্তম মাস তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার। এই মাসে সবরকম অহংকার ভুলে যাওয়ার উত্তম মাস। এই মাসে নিজে খাওয়ার চেয়ে অন্যকে খাওয়ানোর মধ্যে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। ধনী গরিব এক কাতারে অবস্থান করার উত্তম মাস রমজান। এই মাসে ধনীরা উপলদ্ধি করতে পারে ক্ষুধার কষ্ট।
রমজান মাস নিয়ে সৌদি আরবের কিছু নাগরিককে প্রশ্ন করা হলে তারা বিভিন্নভাবে রমজান মাস সম্পর্কে তাদের ভাবনার কথা জানান। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল আপনার কাছে রমজান মানে কি? নীচে তাদের ভাবনার কথা তুলে ধরা হলো।
তানহা, একজন কর্মজীবী
এই মাসটিতে আমি রাগ, ঘৃণা, হিংসা সবকিছু ভুলে যাই এবং পরিবারের সবার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করি। যারা আমাকে কখনো কোন কারণে কষ্ট দিয়েছেন আমি তাদের মাফ করে দেয়ার চেষ্টা করি এবং আমিও যাদের কষ্ট দিয়েছি তাদের কাছে মাফ চেয়ে নেই। দিনের বেশিরভাগ সময় আমি নিজেকে নামাজ পড়া ও প্রার্থনার মধ্যে ব্যস্ত রাখি।
ওয়াহিদ, কর্মজীবী
আমি হলাম হোয়াট অ্যাপস, ফেসবুক এবং ইউটিউবে আসক্ত। এই মাসে আমি সেগুলো থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করি। আমি আমার সকল কাজ ফেলে সারাদিন কুরআন পড়ায় নিজেকে ব্যাস্ত রাখি। কারণ এই মাসে আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়া যায়।
আয়েশা, নার্স
আয়েশা বলেন রমজান আমাদের নিজেদের নিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই মাসে আমি অনুভব করি আমি কোথা থেকে এসেছি এবং কোথায় যাব। এই মাসে আমি বেশি করে দান খয়রাত করি। রোজা রেখে গরীব মানুষের কষ্ট উপলদ্ধি করার চেষ্টা করি। তখনই আমি বুঝি সিরিয়া, ফিলিস্তান এবং ইরাকের মানুষ দিনের পর দিন কিভাবে ক্ষুধার যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছে।
সানা, ছাত্রী
আল্লাহর ক্ষমা ও সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য এই মাস অপেক্ষা উত্তম মাস আর হয় না। আমি এই সময় টিভি দেখা কমিয়ে দিয়ে সেই সময়টাতে কোরান তেলাওয়াত করি। বাজে কাজে টাকা অপচয় না করে সেই টাকা গরিবদের দেয়ার চেষ্টা করি।
রিচার্ড, একজন অমুসলিম
তিনি বলেন এটা প্রবাসে আমার দ্বিতীয় রমজান। যদিও আমি রোজা রাখি না তবুও আমি আমার মুসলিম সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই মাসে সংযত থাকার চেষ্টা করি। আমি কখনো রোজাদার মানুষের সামনে খাই না। মুসলিম সহকর্মীদের সবসময় কাজে সাহায্য করি কারণ তারা রোজা রেখে দুর্বল হয়ে পরে। তারা যখন নামাজ পড়তে যায় তখন তাদের কাজগুলো আমি করে দেই।
সকল বক্তব্য থেকে একটি কথাই উঠে আসে রমজান মাসে যে যার মতো পাপ মোচনের চেষ্টা করে। তবে এই একটি মাসকে কেন্দ্র করে তারা যা করে সারাবছর অনেককেই তা করতে দেখা যায় না। তাহলে প্রশ্ন হলো আল্লাহ কি তাহলে বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে বান্দাদের খোঁজ খবর রাখেন না। যদি রেখে থাকে তাহলে রমজান মাসের মতো বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও আমাদের রমজান মাসের তাৎপর্য মনে রাখতে হবে এবং সেইভাবে চলতে হবে। বছরের অন্যান্য দিনগুলোতেও তাই করতে হবে যা আমরা রমজান মাস উপলক্ষ্যে করে থাকি। তাহলেই প্রকৃত ভাবে ধনী গরিবের ভেদাভেদ অন্যায় অরাজকতা আর থাকবে না। আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করলে শুধু রমজান মাস নয় গোটা বছরই তার আদর্শে নিজেকে সংশোধন করতে হবে, আর তাতেই একদিন পৃথিবীতেই স্বর্গ পাওয়া সম্ভব।