সাড়া দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বেওয়ারিশ লাশ

আবুল খাঁয়ের নামের এক ভদ্রলোক ফেসবুকে এই পোস্ট দিয়েছেন।
dead1
“সকল এফ,বি বন্ধুরা দ্রুত শেয়ার করলে আল্লাহ্ পাক চাহেতো এই মৃত মহিলার পরিবার তাকে বাড়িতে নিতে পারবে , গতকাল
ঢাকা বরিসাল মহাসড়কে সমাদ্দার বিরিজের দুর্ঘটনায় মাদারীপুর জেলায় আল্লাহর এই বান্দি সহ ৮ জন মারা গেছে, এই মহিলাটির কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি সবাই শেয়ার করে জানিয়ে দিন, মহিলা টি মাদারীপুর সদর হাসপাতালে আছে।”

ফেসবুকে এই ভদ্রলোক এই শেয়ার দিয়ে যে কাজটা করছেন সেটা তো টিভির করার কথা, রেডিওর করার কথা, পুলিশের করার কথা, ওরা কি করছে? কার দায়িত্ব কে পালন করছে?

এখন কানাডাতে যদি সড়ক দুর্ঘটনা হয় তাহলে বাংলাদেশে বসে মানুষ জানতে পারে। জাপানে যদি সড়ক দুর্ঘটনা হয় বাংলাদেশের উটকো মেকী সহানুভুতি সম্পন্ন মানুষেরা সব শোক করা শুরু করে আর বাংলাদেশে যদি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন জানতে পারেনা। সেই খবর কোন মিডিয়াতে আসেনা। ব্যক্তিগত প্রচেস্টাতে সেই খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর আত্মিয়স্বজনেরা যদি ফেসবুকে না থাকে তাহলে মৃত্যুর খবর তাদের পাওয়ার কথা নয়। বাংলাদশে অনেক মানুষ অভুক্ত থাকে। বাংলাদেশের ফকীর, অভুক্ত, শিশু, কিশোর, মুচি, মেথর সবার হাতেই মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিয়ে সবার থেকেই মুনাফা করতে সমর্থ হয়েছে মোবাইল কোম্পানীগুলো কিন্তু বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাতে মৃত ব্যক্তিকে সনাক্ত করে তার পরিবারের কাছে খবর  পৌছে দিতে এখনও মধ্যযুগীয় পন্থা অবলম্বন করতে হয়। তার কারণ কি?

কানাডা, মার্কিনযুক্তরাস্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, জার্মান এইসব দেশের নাগরিকদের জীবণের মূল্য অনেক। বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবণের কোন মূল্য নেই। হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকেরা বিশ্বের নানা দেশে ল্যাঞ্ছিত হচ্ছে। বাদ দিলাম অন্য দেশের কথা। নিজভূমেই নাগরিকেরা নিপীড়িত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে নিজেরা নিজেদের দ্বারা অথবা ভারতের রাজ্যসরকারের দ্বারা ।

নদীর পানি চলে গেছে ভারতে। বাংলাদেশের নদীনালাখালেবিলে এখন আর মাছ নেই। লাশ ভাসে। সড়কে পড়ে থাকে ধর্ষিতা মেয়ের লাশ। ক্যান্টনমেন্টের মাঝখানে পড়ে থাকে ধর্ষিতার ছিন্নভিন্ন লাশ। বেশীরভাগ খবর আর লাশের ছবি সাধারন মানুষের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে আসে ফেসবুক পোস্টে।

বাংলাদেশ বাদে বিশ্বের যেকোন দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে টিভি যাবে, পুলিশ যাবে, মৃত ব্যক্তিদের আত্মিয়স্বজণের কাছে খবর নিয়ে পুলিশ যাবে যাতে আত্মিয়েরা এই মৃত ব্যক্তির ফিরে আসার অপেক্ষা না করে, যাতে তারা জানতে পারে তাদের আত্মীয়টি মারা গেছে, যাতে তারা দাফণের ব্যবস্থা করতে পারে। বাংলাদেশের পুলিশ র‍্যাব এরা এসব কিছু করেনা। নাগরিকের সেবা করার জন্য বাংলাদেশের পুলিশ বা র‍্যাবের কোন দায় দায়িত্ব নাই। বাংলাদেশ পুলিশ ও র‍্যাব ব্যস্ত থাকে ইয়াবার চালান থেকে তাদের শেয়ার নেবার, মানুষকে গ্রেফতাঁর করে তাদের পরিবারকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেবার কাজে, ব্যস্ত থাকে চান্দা আদায়ের কাজে, ব্যস্ত থাকে রাজনৈতিক নেতা নেত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন মানুষ হত্যার কাজে, গুমের কাজে, বিভিন্ন দাগী খুনীদের নিরাপত্তা দেবার কাজে, বাংলাদেশের খুনীরা হলো ভেরি ইমপোরটান্ট পারসন অ্রর্থাৎ ভি আই পি তাই বাংলাদেশের খুনীদের বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব  প্রটেকশন দেয় বা নিরাপদ রাখে। খুন, লুট ও ধর্ষন বাংলাদেশের জাতীয় শিল্প আর এই শিল্পকে রক্ষা করার কাজেই পুলিশ ও র‍্যাব ব্যস্ত থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ ও র‍্যাব নিরাপত্তা দেয় মাদকদ্রব্য চোরাচালানীদের । এই নিরাপত্তার বিনিময়ে পুলিশ ও র‍্যাব মোটা টাকা কামায় করে। এইভাবেই বাংলাদেশ পুলিশ ও র‍্যাব জনগণের জীবণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে জনগণের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে। ফলে কোন জাগাতে কোন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে পুলিশ গেলেও মৃত ব্যক্তিকে হাসপাতাল মর্গে ফেলে রেখে দেওয়ার পরে উপরে বর্নিত ব্যস্ততার কারণে আর কোন অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়না ।

তাই মশামাছির মত বাংলাদেশের আনাচে কানাচে বেওয়ারিশ লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।

৭ thoughts on “সাড়া দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বেওয়ারিশ লাশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *