ঢাকা : ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা (বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার) ও ১৬৭ ধারায় আসামিকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ (পুলিশি রিমান্ড) সংশোধনে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
তবে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনার ওপর কিছু মোডিফিকেশন (সংস্কার) দেবেন বলে জানিয়েছেন আদালত। কী মোডিফিকেশন দেবেন তা লিখিত রায়ে জানা যাবে। এ ব্যাপারে আইনজীবীরা পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারেননি। তারা বলছেন, রায়ের কপি হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
মঙ্গলবার (২৪ মে) সকালে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। এ রায়ের ফলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও পুলিশি হেফাজতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, সেটিই বহাল থাকল।
৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে না পেলে আমরা এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলতে পারব না।’ তারা বলেন, ‘হাইকোর্ট যে রায় ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেগুলো বহাল থাকল। সরকারের আপিল খারিজ হয়ে গেল।’
গত ১৭ মে এ মামলার রায় ঘোষণা করতে মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন এ মামলার আপিলের শুনানি শেষ হয়।
ওই দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
এ মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইউনিভার্সিটি ইনডিপেনডেন্ট-এর ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ-কার্যালয়ে তার শামীমের মৃত্যু হয়।
সে ঘটনার বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ধারা (বিনা পরোয়ানায় কাউকে আটক) ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করেন।
তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে। এ রিটের চূড়ান্ত শুনানি করে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল হাই কোর্ট এ বিষয়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
এ রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে।
হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলো হলো
ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় (বিনা ওয়ারেন্টে/বিনা পরোয়ানায়) গ্রেপ্তার করতে পারবে না।
খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে।
ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়-স্বজনকে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।
ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন।
ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
জ. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
এসব নির্দেশনা ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল হাই কোর্টের সেই রায়ে।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করলে ২০০৪ সালে তা মঞ্জুর করা হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা সে সময় স্থগিত করা হয়নি।
এরপর গত ২২ মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ১৭ মে রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত।
Toriquzzaman Khan liked this on Facebook.
MD Sabbir Sun liked this on Facebook.
Addul Nur liked this on Facebook.
Abdul Mannan Mannan liked this on Facebook.
Atikur Rahaman liked this on Facebook.