যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ধর্ষিত হই

ঢাকা : ভালো কাজের আশায় মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সান্দ্রা ওয়োরান্তু। কিন্তু সেখানে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণ ও যৌন দাসত্বের শিকার হন তিনি।

২০০১ সালের জুন মাসে ইন্দোনেশিয়া থেকে তিনি আমেরিকায় আসেন। তার কাছে মনে হয়েছিল আমেরিকা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি আর সম্ভাবনার একটি দেশ।

যে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে তিনি আমেরিকায় যান, তাদের এক প্রতিনিধি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে তাকে গ্রহণ করেন। কিন্তু তিনি জানতে পারেন, নিউইয়র্ক থেকে ৮০ মাইল দূরে শিকাগোর একটি হোটেলে তার কাজ ঠিক করা হয়েছে।

ওয়োরান্তু বলছেন, ‘আমি আমেরিকায় একেবারেই নতুন। আমার বয়স মাত্র ২৪, তাই আমি বুঝতেও পারছিলাম না কীসের মধ্যে আমি জড়িয়ে পড়ছি।’

ফ্রান্সে পড়াশোনা করার পর, ইন্দোনেশিয়ার একটি ব্যাংকে অ্যানালিস্ট হিসাবে কাজ করতেন সান্দ্রা ওয়োরান্তু। গত দশকে দেশটি মন্দায় পড়লে আরো অনেকের মতো তিনিও চাকরি হারান।

তখন সংবাদপত্রে বিদেশি চাকরির একটি বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন আমেরিকার হোটেল খাতে এই চাকরিটি তাকে প্রস্তাব করা হয়। এজন্য তাকে ২৭০০ মার্কিন ডলার দিতে হয়।

তাকে মাসে পাঁচ হাজার ডলার বেতন দেয়ার কথা বলা হয়। ফলে নিজের ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে আমেরিকার উদ্দেশে রওনা হন সান্দ্রা ওয়োরান্তু।

ওয়োরান্তু বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রথমে তারা আমাকে একটি গাড়িতে তোলে। এরপর আরেকজন ড্রাইভারের আরেকটি গাড়িতে আমাদের তোলা হয়। এভাবে আরো দুইবার গাড়ি বদলে শেষে এমন একজন ড্রাইভারের হাতে আমাদের তুলে দেয়, যে একটি পিস্তল দেখিয়ে আমাদের ব্রুকলিনের একটি বাসায় নিয়ে যায়। তখনি আমি বুঝতে পারি, আমি একটি চক্রের হাতে পড়েছি। কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় আমাদের করার কিছু ছিল না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওই বাসায় ঢুকেই আমি দেখতে পাই, একটি ছোট মেয়েকে কয়েকজন মিলে মারধর করছে। এটা হয়তো আমাদের জন্যই একটি সতর্কবার্তা ছিল।’

ওয়োরান্তু বলেন, ‘আমেরিকায় প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাকে জোর করে যৌনকাজে বাধ্য করা হয়। আমাকে ত্রিশ হাজার ডলার দিয়ে তারা কিনেছে বলে আমাকে জানায়। এরপর তারা আমাকে নানা স্টেটের নানা হোটেল, ব্রোথেল, বাসা আর ক্যাসিনোতে নিয়ে যায়। একেকটি জায়গায় আমাকে সর্বোচ্চ দুইদিন আটকে রাখে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের অপেক্ষায় প্রায় চব্বিশ ঘণ্টায় আমাদের নগ্ন করে আটকে রাখা হতো। কোন গ্রাহক না এলে তখন আমরা কিছুটা ঘুমানোর সময় পেতাম।’

প্রায় তাকে বিভিন্ন হোটেল বা ক্যাসিনোতে নিয়ে যাওয়া হত। সেখানে সবসময়েই পিস্তল নিয়ে একজন তার পাহারায় থাকত।

‘আমি যেন অনেকটা পুতুলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। মারধরের ভয়ে তারা যা বলত, তাই করতাম। শুধুমাত্র টিকে থাকার চেষ্টা করছিলাম’, বলেন ওয়োরান্তু।

একদিন এই চক্রের কাছ থেকে পালিয়ে একটি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে নিজের কাহিনি খুলে বলে সান্দ্রা ওয়োরান্তু। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা তাকে বিশ্বাস করেননি। ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসে গিয়েও তিনি কোনো সহায়তা পাননি। পরে রাস্তায় রাস্তায় অনেকদিন ঘুরে বেড়ান।

পার্কে দেখা হওয়া একজন নাবিক এফবিআইকে খবর দিলে তারা তার তথ্য যাচাই করে দেখে। পরে ডিটেকটিভরা ব্রুকলিনের সেই বাসায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে। সেই দিনটা ছিল সান্দ্রা ওয়োরান্তুর কাছে যেন স্বাধীনতার একটি দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *