ঢাকা: ভারতে কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছেন আনসার শেখ। কিন্তু এই সফলতা অর্জনের আগে তাকে কঠিন অসহিষ্ণু অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল যা শুনলে অবাক হতে হয়। এমনকি নিজের পরিচয় পর্যন্ত গোপন করতে হয়েছিল। কেননা বর্তমানে ভারতের এমন অবস্থা যে, মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে কোনো হিন্দু বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া পর্যন্ত দিতে চায় না। তাই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় পুনে শহরে আনসারকে একটি হিন্দু নাম নিয়ে থাকতে হয়েছিল।
পরীক্ষায় প্রথমবারের চেষ্টাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হওয়ার পর অচিরেই তিনি দেশের কোনও জেলায় কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাবেন বলে আশা করছেন।
পুনে শহরে আনসারের নাম ছিল শুভম। এটি ছিল তারই এক হিন্দু বন্ধুর নাম। দু বছর ধরে ছদ্ম পরিচয়ে থাকার পর শুভম মানে আনসার অবশেষে তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পেরেছেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পরীক্ষায়। এখন তিনি নিজের পুরনো নামে ফিরে গেছেন। কিন্তু তার এই অভিজ্ঞতা ভারতীয় সমাজে মুসলিমদের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের সাবেক মুসলিম আমলাদের অনেকে বলছেন, পরীক্ষায় কোনো রকম হয়রানীর শিকার না হলেও ধর্মের কারণে চাকরিজীবনে তাদের নানা বৈষম্য মোকাবেলা করতে হয়েছে।
বাইশ বছরের আনসার শেখের বাড়ি মহারাষ্ট্রের জালনা জেলায়। তিনি এক অটোরিক্সা চালকের ছেলে। গরিব পরিবারের মেধাবী যুবকটি দেশের সর্বোচ্চ আমলা বা আইএএস হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন কাছের বড় শহর পুনেতে। কিন্তু মুসলিম নাম শুনেই তাকে কোনো বাড়িওয়ালা ভাড়া দিচ্ছিল না। তখন বাধ্য হয়ে এক হিন্দু বন্ধুর নাম ভাঙিয়ে পুনে শহরে আশ্রয় মেলে তার।
সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা স্মরণ করে আনসার বলেন,‘শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে তারা আমাকে বাসা দিতে চাচ্ছিল না। মুখের ওপর বলে দেয় আমাকে থাকতে দিতে পারবে না। তবে আমি নিশ্চিত, শুধু মুসলিম নয়, একলা একজন নারী বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরও ভারতে একই অভিজ্ঞতা হবে।’
তবে এই প্রত্যাখ্যানে ভেঙে পড়েননি আনসার। নাম গোপন করেই সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে নেন। তার ভাষায় ‘এই ঘটনাটা কিন্তু দেশের পরিস্থিতি পাল্টানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেই আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে।’
ভারতের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথমবারের চেষ্টাতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন আনসার শেখ। খুব শ্রীঘ্রই তিনি দেশের কোনও জেলায় কালেক্টর বা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন আনসার শেখ
এদিকে তার এই সাফলৌ তার গ্রামের বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার দরিদ্র বাবা শেখ ইউনুস ভুলতে পারেন না কত কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ও ক্লাস টেনে পড়তেই আমাদের ভিটেমাটি বেঁচে ওকে পড়িয়েছি। তারপর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, ওর মায়ের রোজগারের পয়সা তিল তিল করে জমিয়ে ওকে প্রতি মাসে পড়াশুনোর জন্য ৫/৬ হাজার টাকা করে পাঠাতাম। ছেলের জন্য অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু আজ আমি ভীষণ আনান্দত। মনে হচ্ছে যেন আমরা নতুন জীবন পেয়েছি।’ বিবিসি প্রতিনিধি মনে করেন, শুধু মাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারণেই ভারতীয় সমাজে আনসারের পরিবারটিকে এত কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে পুনেতে আনসার শেখের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার ঘটনাটি।
ভারতের একজন সাবেক আইএএস অফিসার ও পশ্চিমবঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন প্রধান সৈয়দ নুরুল হক বিবিসিকে জানান, পরীক্ষায় না হলেও, চাকরি জীবনে কিন্তু মুসলিম আমলাদের ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। তার ভাষায়, ‘মুসলিম বলে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বা অন্য কোনও পরীক্ষায় নম্বর পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু চাকরিজীবনে দেখলাম যখনই কোনও ভাল পোস্টিংয়ের প্রশ্ন এল, তখনই কিন্তু মুসলিম প্রার্থী বলে খারাপ পোস্টিং পেতাম।’
তাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফলতা পাওয়ার পর তার গর্বিত উচ্চারণ,‘আমি শুভম নই, আনসার শেখ। হিন্দু নই মুসলিম।’ কিন্তু আনসারের লড়াই হয়ত এখানেই শেষ হচ্ছে না। ভারতের মত দেশে আগামীতে চাকরিজীবনে এই নামের জন্য তিনি আরও নতুন কোনও ভোগান্তির শিকার হবেন না, সেটি কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
Ariful Islam Jony liked this on Facebook.
Armaan Bappy liked this on Facebook.
Mehedi Hasan Chowdhury liked this on Facebook.
Sumon Aminul liked this on Facebook.
Kamal Uddin liked this on Facebook.
Mohammad Karimudin liked this on Facebook.
Aysha Khaled liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Md Biplob liked this on Facebook.
Sayed Islam liked this on Facebook.
লালমনিরহাট জেলা liked this on Facebook.