রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তন সংলগ্ন ছোট মাঠটিতে ফুটবল খেলা চলছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক যারা তারা একটু বিলম্বে প্রাতঃভ্রমণে এসে ধীর গতিতে পার্কের ভিতর হাঁটাহাঁটি করছেন। এ সময়ে শিখা চিরন্তনের সামনের রাস্তায় দুজন তরুণ-তরুণীকে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তরুণীর হাত ধরে টানাটানি করছেন তরুণ আর তরুণী হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
হঠাৎ করে তরুণকে তরুণীর গায়ে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারতে দেখা যায়। এতে তরুণীর চশমা ছিঁটকে অনেক দূরে গিয়ে পড়ে থাকে। তরুণীর হাতের ভ্যানিটিব্যাগ জোর করে কেড়ে নিয়ে ভেতর থেকে একটি কাগজ বের করে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলেন ওই তরুণ। তরুণী কিছু না বলে সামনে দ্রুতগতিতে হাঁটতে থাকলে তরুণকে আরো ক্ষুব্দ হয়ে আবার গায়ে হাত তুলতে দেখা যায়। এবার তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়লে লোকজন জড়ো হয়ে তরুণকে আটক করে।
উপস্থিত লোকজনকে তরুণ জানান, তরুণী তার স্ত্রী। তার রাগ ভাঙাতে পার্কে এসেছেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মেজাজ খারাপ হলে গায়ে হাত তোলেন বলে স্বীকার করেন। এ সময় ঘ্টনাস্থলে জড়ো হওয়া জনতা তরুণকে ভর্ৎসনা শুরু করলে অবস্থা বেগতিক দেখে সেখান থেকে সটকে পড়ে।
তরুণ চলে যাওয়ার পর তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, সকাল ৯টায় তার পরীক্ষা। তার স্বামী পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছিঁড়ে ফেলেছে। এখন সে কেমন করে পরীক্ষা দেবেন বলে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তরুণী জানান, গত ১৭ মার্চ সে ভালোবেসে পনিম নামের ওই তরুণকে বিয়ে করেন। তার পরিবারের কারও এ বিয়েতে মত ছিল না। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় উকিল বাবা শ্বশুরের বাড়িতে কাজি ডেকে বিয়ে হয়। তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী খুবই ভালো কিন্তু স্বামী বদমেজাজি। এক মাস আগে বিয়ে হলেও পনিমকে সে ছোটবেলা থেকে চেনেন। তাদের উভয়ের গ্রামের বাড়ি জামালপুর।
তরুণী জানান, তার স্বামী একাই (দৈনিক আমাদের একাত্তরসহ) চারটি পত্রিকার সম্পাদক ও পূবালী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের থার্টি পার্সেন্ট শেয়ার হোল্ডার। গুলশান, বারিধারি ডিওএইচএসে একাধিক অফিস রয়েছে তার।
তরুণী হোম ইকোনোমিকস কলেজের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল রিলেশনশিপ বিভাগের বিএসসি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বর্তমান ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সিট পড়েছে। আজ সকাল ৯টা থেকে হোম ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পরীক্ষা ছিল।
আজকের ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে গিয়ে তরুণী জানান, ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় তিনি সারারাত পড়াশুনা করেন। সকাল বেলা স্বামী তাকে সঙ্গে নিয়ে আসার কথা। স্বামীর আইডিটি কার্ড খুঁজে না পাওয়ায় সে রাগারাগি শুরু করে। এ সময় শ্বশুর তার স্বামীকে বকাঝকা করলে সে তাকে নিয়ে আসবে না বলে জানায়। সে একাই বাসা থেকে পরীক্ষা দিতে রওনা হলে তাকে পিছন থেকে মাথায় ঘুষি ও লাথি মেরে ফেলে দেয়। মার খেয়েও সে বাসা থেকে বেরিয়ে বাসে ঢাকায় চলে আসে। তার স্বামী সিএনজি করে এসে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হাজির হয়।
পরীক্ষার দেরি আছে এবং জরুরি কথা আছে বলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে এসে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাকে ডিভোর্স দেবে বলে শাসায়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে মারধর করে, পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছিঁড়ে ফেলে, টাকা-পয়সা সব নিয়ে চলে যায়।
এ সময় উপস্থিত লোকজন তরুণীকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরে বিষয়টি জানাতে বললে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, কোন মুখ নিয়ে আমি তাদের কাছে যাবো। একমাসও বিয়ে হয়নি। এ সময়ের মধ্যে সে কয়েক দফায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মারধর করেছে। সম্প্রতি ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে মারধর করে নাক ফাটিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে।
স্বামী তাকে কেন মারধর করে জানতে চাইলে তরুণী জানান, তিনি কারণ জানেন না। তরুণীর কাছে বাসায় ফিরে যাওয়ার ভাড়া না থাকায় পার্কের নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী নাদিম নামে একজন মুরুব্বী ৩শ’ টাকা দিয়ে বাসায় ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
কেউ কেউ কথিত ওই সম্পাদক ও বিত্তশালী পরিবারের বখাটে যুবকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করলে তরুণী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ও একাই চারটি পত্রিকার সম্পাদক, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না। সংসার করলে তাকে মারধর খেয়ে করতে হবে।
Atikur Rahaman liked this on Facebook.
Sumon Aminul liked this on Facebook.
Abdul Mannan Mannan liked this on Facebook.