বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় চলে এলেন বিএনপির নতুন যুগ্ম মহাসিচব আসলাম চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় হাত মিলিয়েছেন ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ এর এজেন্টদের সাথে।তবে চট্টগ্রাম বিএনপি এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ‘এ বিএনপি নেতা গত ৫ মার্চ ভারতে চারদিনের সফরে গিয়ে মোসাদের সদস্য ইসরাইলের প্রভাবশালী নেতা মেন্দি এন সাফাদির সাথে কয়েক দফা গোপন বৈঠকে মিলিত হন। আসলাম চৌধুরী ছাড়া এ বৈঠকে চট্টগ্রামের একজন সাংবাদিকসহ খুলনার মোসাদের এজেন্ট শিপন কুমার বসু অংশ নেন।’
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে ‘মোসাদ’র সাথে আসলাম চৌধুরীর বৈঠকের খবরে গত চারদিন ধরে চট্টগ্রামেসহ সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। আসলামের এ ঘটনায় খোদ চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারাও বিস্মিত। তবে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়ে কোনো নেতা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে সরকার উৎখাতে আসলাম চৌধুরীর এমন ষড়যন্ত্রে ফুঁসে উঠছেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা। নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। গত রবিবার নগরের দারুল ফজল মার্কেট চত্বরে নগর আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।
মোসাদ’র এজেন্টদের সাথে বৈঠক সম্পর্কে আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোর কাছে দাবি করেন, ‘দিল্লি থেকে ট্যুরিস্ট বাসে করে লোটাস টেম্পলে যাওয়ার পথে বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা শিপন কুমার বসুর সাথে তার পরিচয় হয়। এ সময় তার সাথে থাকা আরও দুয়েকজন বাংলাদেশি ও ইসরাইলের মেন্দি সাফাদি নামক এক ব্যক্তির সাথেও তার পরিচয় হয়। এরপর লোটাস টেম্পলে গিয়ে তারা একসাথে ছবি তুলেন।’
২০১৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চট্টগ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ধারাবাহিক সহিংসতার মূল মদদদাতা হিসেবে আসলাম চৌধুরী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে এসব সহিংসতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়েছিল।
সূত্র মতে, এ বিএনপি নেতার সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ১৪ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বিএনপির ‘তারকা’ নেতা বনে গেছেন তিনি।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার এই নেতা ২০০২ সালে জিয়া পরিষদের মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। তিনি তখন জিয়া পরিষদ, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন তিনি। জেলা বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে না হতে দুই বছরের মাথায় জেলার সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন তিনি। পাশাপাশি জায়গা করে নেন কেন্দ্রেও, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছ থেকে ‘কেড়ে নেন’ সভাপতির পদ। তার দুই বছর পর এখন দলের যুগ্ম মহাসচিবের মতো পাওয়ারফুল পদে আসীন হয়েছেন নানা সময়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত এ বিএনপি নেতা।
জানা গেছে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরুর আগে এ বিএনপি নেতা বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে কলেজের শিক্ষকতায় যোগ দেন। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ১৯৯৬ সালে তিনি এফসিএ পাশ করেন। এরপর একটি সিমেন্ট কোম্পানির অর্থ ব্যবস্থাপক পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে আরেকটি সিমেন্ট কোম্পানিতে সিএফও (হিসাব বিভাগের প্রধান) পদে কর্মরত ছিলেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এর মধ্যেই তিনি ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে আসলাম চৌধুরী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং শিল্পপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। এসব প্রতিষ্ঠানের নামেই তিনি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নিয়েছেন।
Sohel Biplob liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.