হালাল ও হারাম (যাদের জন্য প্রযোজ্য)।

ইলোরা জামান 

হালাল দেশে বসে অসাবধানতায় হারাম খাচ্ছেন না তো? একটু সাবধান করবার জন্যই এই লিখাটি। কারণ সম্প্রতি প্রাণ কোম্পানীর একটি পণ্যে হারাম উপাদান পাওয়া গিয়েছে। ছবিটি নীচে মন্তব্যে দিচ্ছি।

.

বিদেশে এসে হালাল এবং হারাম খাবারের পার্থক্য করতে বাধ্য হতাম। কি কি উপাদান থাকলে তা হালাল নয় তা শিখেছি। এলকোহল, শুকর, আল্লাহর নামে জবাই করা হয়নি এমন মাংশ এবং আর কিছু জিনিস যেমন ইমালসিফায়ার এবং জিলেটিন আছে কিনা তা দেখতে বাধ্য হন এখানে প্রতিটি মুসলমান। দেশে থাকতে এসব চিন্তাও করতাম না। নিশ্চিন্তমনে দোকানের খাবার খেয়ে নিতাম দোকানীকে কিংবা উৎপাদককে বিশ্বাস করে। আমাকে অন্তত হারাম খাওয়াবে নাকি আমার নিজের মানুষগুলো? এই ভরসায়। যদিও পরোক্ষভাবে হারাম খান আমাদের অনেকেই। সুদ খাই, ঘুষ খাই, দূর্নীতির টাকা খাই, মরা মুরগী খাই, আরো কতকিছু। কিন্তু সরাসরি শুকরজাত কিংবা শুকরের অংশবিশেষ খাওয়ানো হবে এটি ভাবিনি।
.

খাবারের উদাহরণ হিসেবে বলি,প্লেইন ব্রেড খেলাম। আটার তৈরি। কিন্তু শুধুই কি আটা? আর কিছু থাকেনা? থাকে এবং তাতে শুকরের চর্বি থেকে আসা একটি জিনিস যার নাম ‘ইমালসিফায়ার’ তাও থাকে। এখন এই ইমালসিফায়ার-কালার-প্রিজারভেটিভ-জিলেটিন মানেই যে হারাম হবে তা নয় আবার। সবজি থেকে আসে,ডিম থেকে আসে। তবে কোনটা কি থেকে আসে তা আপনি বিভিন্ন কোডের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন। পন্যের গায়ে ইনগ্রেডিয়েন্টস সেকশনে দেখবেন ইমালসিফায়ার এবং সাথে কোড হিসেবে 471(Animal Base), e-481, e-110 এরকম কোড থাকে। এগুলো ইমালসিফায়ার-ফুড কালার-প্রিজারভেটিভের কোড। যা দেখে বুঝে নেয়া যায় যে এখানে যে ইমালসিফায়ার লেসিথিন ইউজ করা হয়েছে তা আসলে কোন প্রাণী কিংবা সবজি অথবা ডিম থেকে এসেছে কি’না।
.

দেখে শুনে কেনায় অভ্যেস হয়ে যাওয়ায় দেশে গিয়ে হঠাত একটি পাউরুটির গায়ে দেখেছি e-481কোডের ইমালসিফায়ার। যেটি হারাম। দোকানীকে বললে তিনি হাঁ করে চেয়ে থেকেছিলেন। তারই বা কি দোষ? তিনি আসলে জানতেন না এগুলো কি এবং আমি কিসের কথা বলছি। এরকম আমরা অনেকেই জানিনা। আর সেই সুযোগে মুনাফা লাভের আশায় বেনিয়ারা আমাদের হারাম খাওয়াতেও দ্বিধা করেন না। সম্প্রতি অনেকের লেখাতে জানতে পারলাম প্রাণ কোম্পানীর বেভারেজ ট্যাংগো অরেঞ্জে ইউজ করা হয়েছে E-110 কোডের রং যেটি মাশবুহ অর্থাৎ সাস্পেক্টেড তালিকা থেকে বাদ দিয়ে হারামের কাতারে আনা হয়েছে এবং মুসলমানদের খেতে নিষেধ করা হয়েছে আল-আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে।
.

অথচ প্রাণ এটি আমাদের খাওয়াচ্ছে জেনে শুনে। শুধু প্রাণ নয়। এরকম উদাহরণ প্রচুর পণ্যের বেলাতে পাওয়া যায়। তবে এই প্রাণ কোম্পানী মুসলমানের ধর্ম নিয়ে ভাববেন না হয়ত। আপনি ভাবুন। এসব দেখে শুনে কেনা খুব কঠিন কাজ নয়। পারলে কোক-পেপসিও বর্জন করুন। আর প্রাণের প্রায় সকল পন্য ভেজাল। মিথ্যুক এরা। বোতল ভর্তি আম নামে মিথ্যে কথার প্রচলন করে আসলে মিষ্টি কুমড়ো খাওয়াতো। ফ্রুটো একটি আছে, সেখানে আমের নাম গন্ধ নেই। বার্লির সাথে রং আর ম্যাঙ্গো এসেন্স দিয়ে তৈরি এই ফ্রুটো। রমজান মাসে খেতে খুব মজা।
.

এরপর কোরিয়ান চুইংগাম চিবিয়ে চিবিয়ে পড়াশোনা করা। হায় কি দিন ছিলো একসময়। অথচ কোরিয়ান বেশিরভাগ চুইংগামে এইধরণের লেসিথিন থাকে। জানতাম না আগে। জ্যাম জেলী কত খেয়েছি। কিন্তু খেয়াল করিনি জিলেটিন আছে কি’না। জেলেটিনের বেশিরভাগ হয় পিগবোন কিংবা চামড়া ও হাড়ে লেগে থাকা লিগামেন্টস থেকে। শুকরের হাড়ের একধরণের পেকটিন জাতীয় পদার্থ যা জমাট বাধতে সাহায্য করে। ইমালসিফায়ার একটি ফ্যাটি এসিড। সোজা কথায় চর্বি থেকে আসে। তেলের সাথে পানি দিলে মেশেনা, কিন্তু যদি ইমালসিফায়ার যোগ করা হয় তবে তা মেশে। এজন্য প্রায় প্রতিটি প্রিজার্ভড খাবারে এই জিনিস যোগ করা হয়।
.

বিদেশে মানুষ অসৎ কম হবার সুযোগ পায়। এরা হালাল সাইন দিলে আর হারাম জিনিস সেল করবেনা। একবার ধরা পড়লে লাইসেন্স বাতিল। কিন্তু আমাদের দেশে এসব নাই। এমনকি পণ্যটি হালাল কিনা তা পরীক্ষার নিজস্ব কোনো সক্ষমতাও নেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের মৌখিক অনুমোদনেই হালাল সনদ দিচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এখানে আপনাকে কিন্তু যা তা খাওয়াবে। সুতরাং সাবধানে খান। অসাবধান হলে শুকর ও খেয়ে ফেলতে পারেন।
.

ভালো কথা, মাত্র কিছুদিন আগে গুলশানের একটি নামকরা রেস্টুরেন্টে শুকরের মাংশ আর গরুর মাংশ একসাথে পাওয়া গিয়েছিলো। এবং সেটিও অস্ট্রেলিয়ান এক বাংলাদেশী শেফ সেই রেস্টুরেন্টে জব করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন। বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে বিন্দুমাত্র নৈতিকতা নেই এখন। গোপন রাখতে পারলে আপনাকে মানুষের মাংশ ও খাইয়ে দিতে পারবে এরা। মরা মুরগী সস্তায় কিনে এনে খাওয়ায় এটিতো এখন হরহামেশা। কি বীভৎস!

image_print

Favoriteপ্রিয় পোস্টের তালিকায় নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *