আমাকে জেলে নিয়ে আমার ছেলেকে মুক্তি দিন।

ঢাকা : বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটের সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বৃদ্ধা মা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম।

তিনি বলেছেন, ‘আমি আশা করি, তিনিও (বার্নিকাট) একজন নারী ও মা হিসেবে আমার ব্যথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।’

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে দৈনিক আমার দেশ পরিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রার্থনা জানান তিনি। তিন বছর ধরে কারারুদ্ধ মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার পুত্রের বক্তব্য এবং দৈনিক পত্রিকাগুলো ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত পুলিশের দাবি অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট নাকি ‘কথিত’ অপহরণ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিকট তথ্য প্রদান করেছে। আমি নিশ্চিত যে, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট যদি কোনো তথ্য বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রদান করেও থাকে, সেখানে আমার ছেলে মাহমুদুর রহমানের কোনোরূপ সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে না। অতএব, মার্কিন সরকার নীরব না থেকে এ বিষয়ে সকল দলিলাদি স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রকাশ করুন। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই দাবি বাংলাদেশের সকল জনগণও সমর্থন করবেন।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘মার্কিন সরকার এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নীরবতার সুযোগ গ্রহণ করে একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকার আমার ছেলেসহ এ দেশের অন্য নিরাপরাধ নাগরিকদের হয়রানি ও নির্যাতন করবে, এটা চলতে পারে না। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ প্রার্থনা করছি। আমি আশা করি, তিনিও একজন নারী ও মা হিসেবে আমার ব্যথা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্দেশ্যে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী পুত্রকে অপহরণের যদি সত্যিই কোনো ষড়যন্ত্র সে দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বিষয়টি সঠিকভাবে বাংলাদেশের জনগণকে জানানো একজন কূটনীতিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ব্যাপারে কাউকে কোনো ধূম্রজাল সৃষ্টির সুযোগ দেয়া উচিত নয়।’

মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ জানে যে, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সকল সদস্যই এসএসএফ নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেই এসএসএফ’র ভিভিআইপি নিরাপত্তার মধ্যে জয়কে অপহরণের কল্পকাহিনী কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? মাহমুদুর রহমান ২০০৬ সালে সরকারি দায়িত্ব পালন সমাপ্ত করে আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যায়নি। আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য পর্যন্তও নন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে তার ফেসবুকে বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেবেন আর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে যাবে! এর নামই কি আইনের শাসন? আজ প্রফেসর ইউনূস, কাল শফিক রেহমান, পরশু মাহফুজ আনাম, তার পরদিন মাহমুদুর রহমান, এভাবেই কি দেশের সম্মানিত নাগরিকদের হেয় করা চলতে থাকবে? এই অবস্থা তো নিকৃষ্ট রাজতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের চাইতেও ভয়াবহ!’

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পুত্রসংশ্লিষ্ট কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গেই আমার ছেলের কোনো সংশ্রব নেই। মাহমুদুর রহমানকে তার সত্যনিষ্ঠ লেখালেখির জন্যই একের পর এক মিথ্যা মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে অন্যায়ভাবে জেলে আটক রাখা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে জেলে নেয়ার বিনিময়ে হলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে একমাত্র ছেলে মাহমুদুর রহমানের মুক্তি চান মা মাহমুদা বেগম। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। উপস্থিত অনেকের চোখও তখন অশ্রুসজল হয়ে পড়ে।

প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানকে ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আমার দেশ কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৮২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনি ৮০টি মামলায় জামিন পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে, একাংশ) মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *