যেমনটি ভেবেছিলাম। সাইফুল আলম মাসুদের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপন উদ্বোধন উপলক্ষে চলেছে গুলি, গ্রেফতার, মামলা, ঝরেছে রক্ত, মরেছে মানুষ, পঙ্গু হয়েছে দেহ ও মন, এখন ব্রেইন ওয়াশ বা মগজ ধোলাইয়ের পালা চলছে। হেলাল হাফিজের কবিতা মনে পড়ে গেলঃ
যার যেখনে জায়গা – হেলাল হাফিজ
ভোলায়া ভালায়া আর কথা দিয়া কতোদিন ঠাগাইবেন মানুষ
ভাবছেন অহনো তাদের অয় নাই হুঁশ।
গোছায়া গাছায়া লন বেশি দিন পাইবেন না সময়
আলামত দেখতাছি মানুষের অইবোই জয়।
কলিমুদ্দিনের পোলা চিডি দিয়া জানাইছে,–’ভাই
আইতাছি টাউন দেখতে একসাথে আমরা সবাই,
নগরের ধাপ্পাবাজ মানুষেরে কইও রেডি অইতে
বেদম মাইরের মুখে কতোক্ষণ পারবো দাঁড়াইতে।’
টিকেট ঘরের ছাদে বিকালে দাঁড়ায়ে যখন যা খুশি যারা কন
কোনো দিন খোঁজ লইছেন গ্রামের লোকের সোজা মন
কী কী চায়, কতোখানি চায়
কয়দিন খায় আর কয়বেলা না খায়া কাটায়।
রাইত অইলে অমুক ভবনে বেশ আনাগোনা, খুব কানাকানি,
আমিও গ্রামের পোলা চুত্মারানি গাইল দিতে জানি।
দেখি কার জয় হয়। সাধারণ মানুষের জয় হওয়া অনেকটা রুপকথার মত। পুঁজিবাদের জয় সর্বসময় এবং সর্বত্র । মধ্যবিত্তরাও এইখানে ফায়দা লুটতে চায় । এরা কলম ধরে । খাঁদির পাঞ্জাবী পড়ে কাধে কাপড়ের ঝোলা ঝুলিয়ে ধোঁকা দিতে আসে। নেতানেত্রীরা চোখের জলে মঞ্চ ভাসায়ে দেয় আর পেছনে বসে টাকা ছড়ায় কিনে ফ্যালে দালাল বা কুকুর। তারপর চলে দিনেরাতে মগজ ধোলায়। এখন বাঁশখালীর গন্ডামারার পশ্চিম বড়ঘোনায় ফায়দা লুটেরাদের আনাগোনা। লেখক লেখিকারা গরম গরম মহারচনা লিখছে বাঁশখালী নিয়ে । গন্ডামারার পশ্চিম বড়ঘোনায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করা হচ্ছে চীনের সাথে অংশীদারিত্ব নিয়ে। আর রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা নাকি সুন্দরবন ধবংস করবে সেটা হলো ভারতের রাস্ট্রিয় মালিকানাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যেহেতু ভারতের রাস্ট্রিয় মালিকানাধীন তাই এইটার বিরুদ্ধে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদরক্ষাকারী কমিটি ছাড়া আর কেউ তেমন একটা সক্রিয় ভুমিকা রাখেনি। তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ রক্ষাকারী কমিটির প্রতিবাদ তেমন জোড়ালো ছিলনা । ওদের সাথে অন্য কারুকে দেখা যায়নি। অন্য কেউ মানে সারা বাংলাদেশের মানুষকে দেখা যায়নি। অথচ সুন্দরবন ধবংস হলে সারা বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। ব্যক্তিগত ক্ষতির ভয়ে কেউ আর দেশের ক্ষতি বা লাভ নিয়ে মাথা ঘামায় না।
ব্যক্তিগত লাভের আশায় অনেকেই ব্যক্তিগত ক্ষতি করে। অনেক ব্যক্তির ক্ষতি করলে এই ক্ষতি সারা দেশের ক্ষতির সাথে মিলেমিশে গেলেও এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। যেমন মানব পাচারকারীরা যখন মানুষের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সেই টাকা মেরে দেয় বা সেই টাকা রেখে মানুষকে জাহাজে উঠিয়ে দেয় তখন পানিতে ভেসে ভেসে বিদেশী গার্ডদের গুলি খেয়ে সেইসব মানুষেরা মরে বা গার্ডদের ভয়ে কবরস্থানে লুক্কায়িত অবস্থায় পাওয়া যায় তখন গোটা জাতি শিহরিত হয় ঠিকই কিন্তু কেউ আর মানবপাচারকারীদের শাস্তি দিতে যায়না বা এদের বিরুদ্ধে কোন আইন প্রনীত হয় না। ধরে নেওয়া যায় সবাই চায় এইভাবেই কিছু মানুষ মারা যাক, দেশের জনসংখ্যা কমুক আর কিছু মানুষ টাকা বানাক । ফায়দা লুটাই মূল কথা । বাকি সব কিছুই এই ফায়দা লুটার জন্যই বলা বা করা।
বাঁশখালীতে বা রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এই বিদ্যুৎ যারা ব্যবহার করবে বাতাসে ভেসে তাদের কাছে কার্বন মিশ্রিত বিষাক্ত কেমিক্যাল গ্যাস আসবেনা তাই তাদের কোন লাভ বা ক্ষতি নাই। গ্রামের মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে ইয়াবা বিক্রি করলে বা দেহ ব্যবসা করলে বা মানুষের বাসাতে কাজ করতে যেয়ে ধর্ষিতা হয়ে বা নির্যাতিতা হয়ে মরলে বা গার্মেন্টস এ কাজ করে আগুনে বা বিল্ডিংএর নীচে চাপা পড়ে মরলে দেশের বাকী জনগনের কিছু যায় আসেনা। যারা ফায়দা লুটার তারা এইসব ঘটনার উপরে কিভাবে ফায়দা লুটে মাল কামানো যায় সেটা জানে এবং সেইভাবেই টাকা বানায়, জনপ্রিয় হয়।
বাঁশখালীতে কয়লা বিদ্যুৎ হবে এবং রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ হয়ে গেছে। বাঁশখালীর আরো কিছু মানুষ মরবে। সুন্দরবন ধবংস হবে । তাতে কি? পদ্মা মরুভুমি হয়ে গেছে। তিতাস একটি সড়কের নাম। তাতে কি? কে কি করেছে? সবাই ভারতিয় চ্যানেলে বন্দে মা তরম করছে। বাংলাদেশ হলো ভারতের একটি প্রধান শৌচাগার। বাংলাদেশের মানুষেরা সব সময় তাদের চেয়ে যারা একটু দুর্বল তাদের মাথায় লাঠি মেরে খেয়ে বাঁচতে চায়। এইভাবেই লাঠালাঠি চলতে থাকে । চলবে।
ফায়দা নাই যেখানে বাংলাদেশী নাই সেখানে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল কেউ থাকলে আর তার মাথায় লাঠি মেরে যদি ফায়দা করা যায় তাহলে আছে না হলে নাই। ভারত একটি বৃহৎ শক্তিশালী রাস্ট্র । বাংলাদেশের রাজ্য সরকার ভারতই বাছায় করে । বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যদি ভারতের মালিকানাধীন হতো তাহলে হয়তো ভারতের আর্মী পাঠিয়ে বিজিবির সাথে মিলে মিশে গ্রামের লোকদেরকে হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারতো। চীনের সাথে চুক্তি হবার কারনে ভারত দেখছে ওদের ফায়দা নাই তাই গ্রামের লোকের উপরে নির্যাতন করার দায়িত্ব নিচ্ছেনা ।
সেজন্য লিয়াকতকে দিয়েই পুরানা কায়দায় নোংরা রাজণীতি করতে হচ্ছে।