তনুর ধর্ষিতা লাশ পাবার পরে মনে হলো ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশে এই প্রথম কোন মেয়েকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ধর্ষিতা লাশ পাওয়া যায় প্রায় প্রতিদিন । কোথায় থাকেন সবাই? ধর্ষন, হত্যা, ব্যাংক থেকে টাকা চুরি, দুর্নীতি, এইগুলা সব কিছুই হচ্ছে সবার নাকের ডগায়। এইসব ছাড়া বাংলাদেশ সেটা তো ভাবতেই পারা যায়না । তাই না?
জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকলির বাসা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় ১৫ বছরের কিশোরী গৃহকর্মী শিল্পীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং হাসপাতাল তাকে মৃত ঘোষনা করে। কৃষ্ণকলির বাসাতেই শিল্পিকে হত্যা করা হয়েছিল। কৃষ্ণকলির স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। গৃহকর্মীর উপর নির্যাতন ও হত্যা বাংলাদেশে একটি প্রাত্যহিক ঘটনা। এক ধরণের ফ্যাশন। জনপ্রিয়তার সাথে পাশবিকতা না কমে বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশে আইন নেই। সবাই এখন বাধনহারা। যার যা খুশী করছে। একজন মহিলার নির্দেশেই সবাই উঠে বসে হাসে কাঁদে। আর এই মহিলাকে নির্দেশ দেয় একটি প্রতিবেশী দেশ। বাদবাকী সবাই এইসব কিছুর ইচ্ছা অনিচ্ছা খেয়াল খুশির খেলার পুতুল।
দেশের ক্রমবর্ধমান গৃহকর্মী নির্যাতন, খুন ও ধর্ষনের ঘটনায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং কিছুক্ষণ পরে ওদের উদ্বেগ বাতাসে মিশে যায়। কারণ হলো যারা এইসব খুন ও ধর্ষণের সাথে জড়িত তারা প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ বা তাদের আত্মীয় স্বজন । মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তারা সব সময়ই মনে মনে বলে মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সবার জন্য নয়। মানবাধিকার ও স্বাধীনতা শুধুমাত্র প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জন্য। মানবাধিকার ও স্বাধীনতা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে আমরা দুঃখিত।
দেশে মানুষ না থাকলে মানবাধিকার বাস্তবায়নের কোন দরকার তো নেই। মানুষের সাথে আসে মানুষের অধিকারের প্রসঙ্গ। বেঁচে থাকার অধিকার, ভাত, কাপড়, বাসস্থানের অধিকার, কাজের অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, মানুষ হিসাবে সন্মান পাবার অধিকার, ন্যায় বিচার পাবার অধিকার, ল্যাঞ্ছিত না হবার অধিকার, ইত্যাদি অধিকার পেতে গেলে প্রভাবশালী হতে হবে। অধিকারগুলো টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায়। টাকা ফেললে সব কিছু কেনা যায় বাংলাদেশে। মানুষের আবেগ বিক্রি হয় কেজি দড়ে। ভালবাসাও বিক্রি হয়। সব কিছু বিক্রি হয়।
এক টুকরো খাস জমি ও বিশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে ধর্ষিতা তনুর পরিবারকে। হঠাৎ সরকার কেনো কেনাকাটাতে লেগে গেলো? কারণ জনগন উত্তাল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কসহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক লুটের খবর ধামা চাপা দেবার জন্য নতুন ইস্যু দেবার আগেই তনুকে ধর্ষন ও হত্যা করা হয়েছে । ফলে লুটের কাহিনী চাপা পড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। এখন তনুর পরিবারকে কেনার চেস্টা করা হচ্ছে অবশ্যই ভয়ভীতি প্রদর্শন করেই। ক্রেতারাও তনুর ধর্ষন ও হত্যার ঘটনায় গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছে। শোকও কিনতে পাওয়া যায়। কম শোকের কম দাম। গভীর শোকের অপেক্ষাকৃত বেশী দাম। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে ক্যান্টনমেন্টে সাধারন মানুষ যেতে পারেনা। পাহাড়া থাকে সর্বদা। সেখানে গলাকাটা লাশ ফেলে গেলো কেউ দেখলোনা। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ধর্ষন বা খুন বা নির্যাতন করলে সেটা দেখার বিষয়না। জোর যার মুলুক তার। অনেকেই বলছে ক্যান্টনমেন্টে কি সব ফেরেস্তা থাকে নাকি। ওরা সবাই মিলে মিশে সহযোগীতা করেছে লাশ ফেলার জন্য। সবাই মিলেমিশেই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা চুরি করা হয়েছে বা হচ্ছে। সবাই মিলে মিশেই খুন করে, মিলেমিশে ধর্ষন করে, সবাই মিলেমিশে রাতভোর ব্যালট পেপারে সীল মারে, সবাই মিলেমিশে ভোট কেন্দ্রগুলোতে পুলিশে গুলি করে। মিলেমিশেই হচ্ছে সব কিছু।
বড় বিচিত্র এই বাংলাদেশ!!
একটি ধর্ষিতা লাশ দেখে সবাই চিৎকার শুরু করে আবার থেমে যায়, লাশ পড়ে থাকে আনাচা কানাচে, কেউ কোন চিৎকার করেনা, আবার আর একটি ধর্ষিতা লাশের জন্য অপেক্ষা করে, তারপর আবার চিৎকার আর বিচারের দাবী । বিচার চাইছে কার কাছে? যারা ধর্ষন ও হত্যা করে তাদের কাছেই বিচার চাওয়া হচ্ছে।
একজন চোরের কাছে যদি তার চুরির অভিযোগ আনা হয় তাহলে সে মনে মনে অনেক আনন্দ পাবে। চোরের কাছে যেয়ে চুরির অভিযোগ করে চোরকে আনন্দ দিয়ে কি লাভ? একজন ধর্ষক ও খুনীর মায়ের কাছে যেয়ে যদি ধর্ষন ও খুনের অভিযোগ করা হয় তাহলে সেই মা অনেক আমোদ পাবে। চারিদিকে তনু হত্যার বিচার চাইছে মানুষ। কার কাছে? ওরা তো তনুর পরিবারকে ধর্ষন ও হত্যার বিনিময়ে খাস জমি দিচ্ছে। ধর্ষিতা মেয়ের লাশের বিনিময়ে একটুকরো খাস জমি আর বিশ হাজার টাকা।
বিশহাজার টাকাতে কি কি কিনতে পাওয়া যায়? ৬৯৩৫ দিন ধরে প্রতিদিন ভালবেসে সেই মেয়েকে লালন পালন করে বড় করা। সেই সব ভালবাসা, হাসি, বই, অভিমান, গল্প, গান, লাল নীল ফিতা, কবিতা সব এখন লাশ আর লাশের উপর বিশ হাজার টাকা ও এক টুকরো খাস জমি। এভাবে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে দেখা গেছে অনেক তনুর ধর্ষিতা লাশ। ধর্ষন করা হয়েছে ভালবাসা, স্নেহ, মায়া, মমতা, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা ।
প্রথমে মানুষ হতে হবে। মানুষ হতে গেলে একে একে সব ধর্ষকদের হত্যা করতে হবে। যাতে আর কেউ কোন দিন ধর্ষন করতে সাহস না পায়। ঢাকাতে নির্জন জাগা কম। আমি এখন যদি ক্যান্টনমেন্ট এলাকাতে যাই তাহলে আমাকে থামানো হবে। অনেক প্রশ্ন করা হবে। ওরা ধর্ষক/খুনীদের জানে ও চিনে তাই কোন প্রশ্ন করেনি। যেকোন মানুষকে যখন উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন অনেকেই সেটা দ্যাখে কিন্তু কেউ কিছু বলেনা। ভয় পায় সেজন্য। সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে চায়। অন্যকে রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনা। ধর্ষন ও হত্যা হয়ে গেলে ধর্ষক ও খুনীর মায়ের কাছে যেয়ে বিচার চায়। এমনও হতে পারে এইসব প্রতিবাদী মানুষের ভীরে অনেক ধর্ষক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আগামীর শিকারদের চিহ্নিত করছে আর হাসছে। তামাশা দেখছে। কাকে কাকে ধর্ষন করা হবে, হত্যা করা হবে তার তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রতিবাদী মানুষের ভীর থেকে।
বাংলাদেশের আদালত চলে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আঙ্গুলের ইশারাতে। আদালত কেনা যায়। বিচারের রায় কেনা যায়। তাই ধর্ষকদের জবাই করতে হবে খোলা আকাশের নিচে একইভাবে যেভাবে তারা ধর্ষণের পরে তনুদের গলা কেটেছে বা শরীরের বিভিন্ন জাগাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছে।
যখন আইন আদালত ও আইনরক্ষাকারী বাহিনীরা নিজেরাই অপরাধীর কাঠগড়াতে দাঁড়িয়ে আছে তখন জনগণ তাদের নিজ হাতে আইন তুলে নিয়ে অপরাধ নির্মূল করবে, সেটাই নিয়ম।