একজন ধনীর মেয়ে বা বউয়ের যখন মন খারাপ হয় তখন সে মন ভাল করার ডাক্তারের কাছে যায়। নানা রকমের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মনের থেরাপী করে মন ভাল করে বা করেনা কিন্তু একটা শান্তনা পায় যে প্রফেসনাল মন ভাল করার ডাক্তার দেখিয়েছে। টাকা থাকলে খরচা করার অনেক উপায় আছে। মন ভাল করার ডাক্তারেরা এত টাকা পয়সা খরচা করে বই মুখস্ত করে গৎবাঁধা বিদ্যা পরীক্ষার খাতায় ঢেলে দিয়ে এসে সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে অপেক্ষা করে ধনীর বউ মেয়েরা আসবে তার চাপাবাজী শোনার জন্য। চাপাবাজীর কেরামতির জন্য কিছু টাকা দিয়ে যাবে। এইভাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে। ট্রাফিক জ্যাম দেখলে অনেকেই খুশী হয় দেশে গাড়িতে সয়লাব হয়ে গেছে, মানুষের হাতে টাকার ছড়াছড়ি আর টাকা মানেই উন্নয়ন। বারো কোটি মানুষের মধ্য তিন কোটি যদি গাড়ীর মালিক হয় তাইলেই দেশ উন্নত কোন সন্দেহ নেই। ঢাকার মত ছোট ছোট শহরে যতই গাড়ী বৃদ্ধি পাবে ততই বাতাস দূষিত হবে আর ততই মানুষ অসুস্থ হবে আর চিকিৎসকেরা মুনাফা করবে। কার্বন এমিশন
কারু পৌষ মাস কারু সর্বনাশ। গাড়ীর ভেতরে যারা বসে থাকে তারা কোন বাতাসে শ্বাস নেয় আমি জানিনা তবে খোলা আকাশের নীচে যারা বসবাস করে গাড়ীর বাইরে যারা থাকে, পথে যারা হাটে, রিকশাতে যারা থাকে, তারা শ্বাসকস্টে ভোগে। তাদের অনেকেরই চিকিৎসা করার মত টাকা নাই। শরীর দেখানোর টাকা নাই আর মনের রোগ ভাল করার ডাক্তার দেখানোর তো প্রশ্নই উঠেনা।
মন সবার খারাপ হয়। বাংলাদেশের সকল গার্মেন্টস শ্রমিক, গৃহকর্মি, যৌনকর্মী, গৃহবধু, অফিসের কেরানী, সকল নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবারই মন খারাপ হয়। কিন্তু সবাই মন ভাল করার জন্য ডাক্তার দেখাতে পারেনা। যার কোন আয় নাই তার ব্যয় করার তেমন কোন উপায় নাই। যার বারতি আয় আছে তার ব্যয় করার অনেক উপায় আছে।
দুনিয়াতে আমার আগমণ ঘটেছে বহু বছর আগে। এত বছর আমি রোলার কোস্টারের উপরে বেশ হেসে খেলে দিন কাটিয়ে দিলাম। আমার এত দুঃখের ভেতরে এত ফূর্তি কোথা থেকে আসে আমি জানিনা। তবে আমার মনে হয় যেহেতু আমার কেউ নেই তাই যেহেতু আমার টাকা নাই তাই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে, অবহেলিত থাকে একসময় এইসব দুঃখগুলো মনের ভেতরে স্থায়ী কুটুম হয়ে যায়। বাংলাদেশের অনেক বাসাতে গ্রাম থেকে মেহমান আসে, বারে বারে আসে, এসে আর যেতে চায়না। ওরা থেকেই যায়। আমার দুঃখগুলো এমন, ওরা বুকের ভেতরে ঢুকে তারপর আর বেরুতে চায়না। অন্যান্য দুঃখদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফ্যালে আর সবাই মিলে মণের আনন্দে হেসে খেলে থাকে। কারণ উপায় নাই। আমি আমার এই দুঃখের কাহিনী নিয়ে কোন দু;খ মোচন ডাক্তারের কাছে যাইনে। কারণ আমি জানি এই ডাক্তার বসে আছে তার নিজের মুনাফা করার জন্য আমার দুঃখ মোচন করার জন্য নয়। থাকনা ওরা আবার বুকের ভেতর বেশ সুখে শান্তিতে ফুলে ফেফে দিন কাটাচ্ছে।
একজন অপরিচিত মানুষ আমাকে জানবেনা । আমি আমাকে জানি। সবাই নিজেকে জানে। যদি জানার ইচ্ছা করে তাহলে জানতে পারে। আমি আমাকে জানি। আমি কি করতে পারি। কি করতে পারিনা। কোন কোন কস্টগুলো আমাকে পীড়া দিচ্ছে। কেনো দিচ্ছে। এই পীড়া থেকে আমি কিভাবে মুক্তি পাবো? মুক্তির উপায়গুলো কতটুকু আমার নিজের নিয়ন্ত্রনে কতটুকু আমার নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে? এইসব কিছুই আমি জানি। একজন মন ভাল করার ডাক্তারকে আমার খুলে বলতে হবে এইসব কিছু। নাহলে সে জানবেনা কিছুই। মন খারাপ থেকে শরীর খারাপ হয়।
শরীর বা মনের ডাক্তার আসলে রোগ সারাতে পারেনা। ওষুধ দিয়ে কিছুদিনের জন্য অসুখ ভাল হয় এবং আবার ফিরে আসে। বারে বারে ফিরে আসে। কস্ট কিছুটা লাঘব হয় সাময়িকের জন্য। তারপর আবার আগের মত। প্রতিটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। থাকবে। কারণ সবাইকে মুনাফা করতে হবে। ডাক্তারকে মুনাফা করতে হবে, যারা ওষুধ বানায় তাদের মুনাফা করতে হবে। যদি রোগ ভাল হয়ে যায় তাহলে কেউ আর ওষুধ কিনবেনা, ডাক্তারের কাছে যাবেনা। এইসব ব্যবসা প্রতিষ্টানগুলো এক একটি ফাঁদ। অতীতে অসুখ হলে আমরা কেউ ডাক্তার দেখাতাম না। মা জানতেন কি খেলে অসুখ ভাল হবে। আমার মন খারাপ হয় বছরে তিন শত পয়ষট্টি দিন। যদি সারাদিন ডাক্তারের কাছেই যেয়ে বসে থাকবো তাহলে কাজ করবো কখন? কাজ না করলে আকাশ থেকে টাকা ফেলবেনা কেউ আর জীবিকা নির্বাহের জন্য ডাক্তারের চেম্বারের সামনে থালা হাতে ভিক্ষা করতে বসতে হবে।
আমার কতগুলো অসুখ আছে যা কোন ডাক্তার বা ওষুধ ভাল করতে পারেনা। সাময়িকের জন্য ভাল বোধ করতে পারি। তবে আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে – “তুমি কেমন আছো?”
আমার ভাল লাগে। এইটা আমার থেরাপি। তবে সবাই না। অনেকেই অনেক মতলব নিয়ে জিজ্ঞাসা করে আমি কেমন আছি। আমি কেমন আছি সেটা জানার তাদের উদ্দেশ্য নয়। আমি কেমন আছি প্রশ্নের মধ্য দিয়ে তারা আমার ভেতরে নড়ে চড়ে বসে । তুমি কেমন আছো – দরোজা খুলে গেল, ধীরে ধীরে প্রবেশ তারপর বাকি কথা। তবে অনেকেই কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই শুধু জানার জন্য প্রশ্ন করে – তুমি কেমন আছ – তখন ভাল লাগে। মনে হয় আমি আর একা নেই।
এই হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষের পৃথিবীতে একাকী বেঁচে থাকা অনেক কস্টের। পৃথিবীর কোন ডাক্তার এই কস্ট লাঘব করতে পারে? একজন মানুষ যে আমাকে মোটেই ভালবাসেনা তার সাথে বসবাস করার চাইতে একাকি বসবাস করা কোটি গুন ভাল। ভালবাসাহীন সংগীর দেওয়া কস্টগুলোও মন খারাপ করে দেয়। এই খারাপ মন ভাল করার জন্য এই ভালবাসাহীন সংগিকে দূর করে দেওয়া ভাল ।এটাই একমাত্র চিকিৎসা। দূর হয়ে গেলেই রোগ ভাল হয়ে গেলো। এইখানে “তালাক” বা ডিভোর্স হলো রোগের চিকিৎসা। সেজন্য উকিলের কাছে যাওয়া যেতে পারে।
লিভিং ট্যুগেদার যারা করে তারাও ধোঁকা খায়। মন খারাপ হয়। নতুন সংগী বেছে নেওয়া যেতে পারে। কোন সংগীই বেহেস্ত থেকে এলোটমেন্ট নিয়া আসে নাই। বিয়া মানে বেহেস্তের এলোটমেন্ট না। বিবাহ হলো একটি আইন সংগত বেশ্যাবৃত্তি। দুইজন মানুষের মধ্য যদি ভালবাসা না থাকে তাহলে বিয়া বা লিভিং ট্যুগেদার সবই বেশ্যাবৃত্তি। ভালবাসা না থাকলে শুধু টাকার জন্য বা ক্ষমতার জন্য সম্পর্ক ধরে রাখা বেশ্যবৃত্তি। ভালবাসাহীন বিবাহিত জীবন আত্মপ্রবঞ্চনা।
এখন প্রশ্ন হলো ঃ ভালবাসা কাকে বলে?
উত্তর হলো ঃ ভালবাসা হলো দায়িত্বজ্ঞানবোধ।
বিবাহে বা লিভিং ট্যুগেদার সম্পর্কে নারীপুরুষ উভয়ের প্রতি উভয়ের কিছু দায়িত্ব থাকে। একজন অন্যজনকে দেখা, পাশে থাকা, নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন দেওয়া, নৈতিক ও মানসিক শক্তি যোগানো, সুখে ও দুঃখে পাশে থাকা, মেনে নেওয়া, আপোষ করা, আলোচনা করা, সমালোচনা করা, সমস্যাগুলোকে এক সাথে বসে সমাধান করা যেহেতু বিবাহ একটি অংশীদারিত্ব সম্পর্ক। দুইজনেই সমানভাবে সব কিছুর জন্য দায়ী তাই সব সমস্যাই দুইজনে মিলে সমাধান করতে হবে। আর যদি না করা যায় তাহলে সম্পর্কের ইতি টানা ভাল। এইসব ক্ষেত্রে ডাক্তার কি করবে?
ডাক্তারের কিছু করনীয় নাই শুধু কিছুক্ষণ চাপাবাজী করে কিছু টাকা নেওয়া ছাড়া।
আমাকে কেউ ভাল না বাসলে আমর যদি মন খারাপ হয়
আমাকে কেউ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলে যদি আমার মন খারাপ হয়
তাহলে আমি কাজ কাম বাদ দিয়ে এই নিয়েই কান্নাকাটি করতে থাকি সেখানে ডাক্তার কি করবে? আমি নিজেই তো নিজের কাজে নিজেই বাঁধা সৃষ্টি করছি বাইরের একজন এসে সেটা কিভাবে সমাধান করবে? বাইরের একজন মানুষ এসে জিজ্ঞাসা করবে – কেনো তোমার মন খারাপ
আমি তাকে সব খুলে বলবো
তখন সে আমাকে প্রেসক্রিপশন লিখে দিবে
আর আমি ভাল হয়ে যাবো
এটা সম্পুর্ন মানসিক ব্যাপার।
আমি একটি ব্যায়ামাগারের সদস্য। কাজের থেকে ফ্রি সদস্য হয়েছি তাই ব্যায়ামাগারে যাইনা বললেই চলে। অথচ আমি যদি ৪০০ ডলার খরচা করে সদস্য হতাম তাইলে ব্যাগ নিয়া দৌড়াইতাম দিনে দুইবার।
আমি আমাকে সব চাইতে ভাল জানি।
আমি জানি কি করলে আমার মন ভাল হবে।
বাইরের লোক আমাকে জানেনা।
কেউ আমাকে জানেনা।
আমি জানি আমি কে, আমি কি করেছি, আমি কি করলে ভাল থাকবো আর কি করলে ভাল থাকবোনা। এই ভাল থাকা বা না থাকা আমার নিজের নিয়ন্ত্রনে আছে।
যদি আমি স্বেচ্ছায় এই নিয়ন্ত্রন অন্য একজনের হাতে তুলে দেই তাইলে সেটা আমার ভুল হবে। হবেনা??
আমি আমার মনের নিয়ন্ত্রন অন্য একজনের হাতে তুলে দিলাম আমাকে বলে দেবে আমি পাগল না ছাগল (অথচ আমি জানি আমি পাগল ও ছাগল দুইটাই। টাকা খরচা করে সেটা জানার কি দরকার। সেই টাকা দিয়া ঝালমুড়ি বা কাঠাল পাতা কিনে খেতে পারি)
মানসিক রোগ দুইরকমেরঃ এক – ক্লিনিক্যাল । দুই – মনগড়া।
আমি এতক্ষণ মনগড়া মানসিক রোগ সম্পর্কে লিখছিলাম।
Nurul Amin Khan liked this on Facebook.