ঢাকা : ‘ট্রি-ম্যান’ আবুল বাজনদারের প্রথম অস্ত্রোপচার সফলভাবেই সম্পন্ন হয়। ডান হাতের দুই আঙ্গুলে অস্ত্রোপচারের কথা থাকলেও পুরো পাঁচটি আঙ্গুলেরই অস্ত্রোপচার করা হয় প্রথম দফায়। কেটে ফেলা হয় তার ডান হাতে গজানো ‘শিকড়’র মতো দেখতে আঁচিলগুলো।
দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো বিরল রোগে আক্রান্ত বৃক্ষমানব আবুল বাজনদারের ডান হাতের চিকিৎসা। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ অপসারণ করা হয়েছে তার ডান হাতে গজানো ‘শিকড়’গুলো। যদিও তার অন্তত ১৩ থেকে ১৫টি অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
শনিবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার ওটিতে এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। তার ডান হাতের কবজির ওপরের দিকে এবং হাতের তালু অংশে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল ও অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ খন্দকারসহ ৯ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল এ অস্ত্রোপাচার সম্পন্ন করেন। এই নয় সদস্য ছাড়া এ অপারেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন যৌন ও চর্ম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবীর চৌধুরী। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি তারাই আবুলের ডান হাতে পাঁচটি আঙুলের বর্ধিত অংশ কেটে ফেলেন। আবুল দ্রুত সেরে উঠবেন বলে চিকিৎসকরা আশা করছেন। তিনি এখন তার আঙুলগুলো স্বাভাবিকভাবেই নাড়াতে পারছেন।
অস্ত্রোপচার শেষে ডা. আবুল কালাম বাংলামেইলকে বলেন, ‘আবুলের ডান হাতের কবজির ওপরের দিকে এবং তালুর অংশে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আবুলের ডান হাতের পুরো অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হলো। তাকে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকদের ধীরে ধীরে এগোতে হচ্ছে। আবুলের ১৩-১৫টি অস্ত্রোপচার করা হতে পারে।’
চিকিৎসকদের ধারণা, আবুল ‘এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভেরাসিফরমিস’ রোগে আক্রান্ত। রোগটি ‘ট্রি-ম্যান’ (গাছ মানব) সিনড্রম নামে পরিচিত। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এ রোগ হয়। গত ১০ বছর ধরে আবুল এই রোগে ভুগছেন। তার হাত ও পায়ের আঙুলগুলো গাছের শিকড়ের মতো হয়ে গেছে এবং দিনে দিনে তা বাড়ছিলো।
ডা. আবুল কালাম জানান, আবুলের বায়োপসি পরীক্ষায় ক্যানসারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তারা অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
আবুলের প্রথম অপারেশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘পাঁচটি আঙুলের বর্ধিত অংশ ফেলে দেয়ার পর তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হাত দ্রুত ভালো হয়ে উঠছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে তাকে পুরোপুরি সুস্থ করা সম্ভব হতে পারে। এর থেকে বেশি সময়ও লাগতে পারে। তবে যতোদিনই লাগুক ততোদিনই আবুল এখানেই থাকবে। কারণ সে এতো দরিদ্র যে তাকে খুলনা পাঠালে সে আর ঢাকায় আসতে পারবে না।’
বিত্তবানদের কাছে আবুলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘আবুলের স্ত্রী, মেয়ে মা-বাবা রয়েছে। তাদের খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়োজন। বিত্তবানরা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলে আবুলের পরিবার একটু ভালো থাকতে পারবে।’
খুলনার পাইকগাছা থানার সরল গ্রামের আবুল বাজনদার গত ৩০ জানুয়ারি ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। অপারেশনের মাধ্যমে বিশ্বের তৃতীয় বৃক্ষমানব আবুল সুস্থ হলে বাংলাদেশের জন্য তা হবে একটি মাইলফলক। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নয় সদস্যের গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Rizwan Mahmud liked this on Facebook.
Rasel Mahmud liked this on Facebook.
মোঃমিজানুর রহমান ফরহাদ liked this on Facebook.
Anwarul Hassan liked this on Facebook.
Addul Nur liked this on Facebook.
MD Uzzol Baruniya liked this on Facebook.
Jubaer Khan liked this on Facebook.
Shahin Vai liked this on Facebook.
Abdul Hannan liked this on Facebook.