দুইটি শ্রেণী যা সচারচর আমরা দেখি। এক শ্রেনী হলো মালিক। অন্য শ্রেনী হলো চাকর । যে চালাক সে মালিক। যে নির্বোধ সে চাকর। চাকর বাকর আবার অনেক শ্রেনীর হয়। যেমন মালিকের বৈঠক খানাতে আরাম কেদারাতে বসে মালিকের সাথে হিন্দি মুভি দেখার সুযোগ যে পায় সে হলো গাপাল ভাঁড় বা মোসাহেব চাকর। যারা মালিকের গুনগান করে সেই সাহিত্যিক, শিক্ষক, লেখক, কবি, উপন্যাসিক, চলচিত্রের পরিচালক, প্রযোজক, স্ক্রিপ্ট লেখক, ধর্ম যাজক, মৌলুবী সাহেব বা ইমাম সাহেব, রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মী নানা রকমের ব্যবসায়ীরা হলো এক ধরনের চাকর। সরকারী আমলা আর এক ধরনের চাকর। এরা সবাই বিভিন্ন স্তরে শোষন করছে যে যেমন পারছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল যে তাকে । এটাই নিয়ম।
কিছু লোক হুজুর বা স্যার বা সাহেব
আর কিছু লোক তাবেদার ।
কিছু লোক কাজ করে কিছু লোকে তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়
কিছু লোক হুকুম মানে কিছু লোকে হুকুম দেয়
কিছু লোকে ব্যবহৃত হয় আর কিছু লোকে ব্যবহার করে
সমাজে এই শ্রেনীভেদ যুগে যুগে বরনীয়
মালিকের কি যোগ্যতা আছে সেটা বিষয় নয় – মালিক নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষন করে সবাইকে ভীত ও থরহরি কম্প রাখতে পেরেছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। যে যত নিপীড়ন চালাবে সে তত ভাল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার পরিবার সব সময়ই ইংরেজের বন্ধু ছিল । তাতে কি? সেজন্য কেউ কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘৃনা করেছে? করেনি। না করার কারণ হলো রবীন্দ্রনাথ জমিদার ছিলেন। সবাই ঠাকুর পরিবারকে মান্য করতো জমিদার হবার কারনে। জহরলাল নেহেরু বা মতিলাল নেহেরু বা গান্ধী বা বিলাত ফেরত এইসব বারিস্টাররা কেউ ইংরেজের খেলাফ ছিলনা। এরা কেউ স্বদেশী আন্দোলন করেনি । গান্ধী যা করেছে তা হলো ইংরেজের জন্য শান্তিপূর্নভাবে প্রস্থানের ব্যবস্থা। তাতে কি হয়েছে? কেউ কি ওদের ঘৃনা করেছেন? করেনি কারণ ওদের ক্ষমতা ছিল । ইংরেজের বন্ধু ছিল সেকারনেই ক্ষমতা ছিল । অই যে বললাম তাবেদার । মোসেহেব বা উঁচু শ্রেনীর গোলাম বা দালাল বা চাটূকার।
পঞ্চানন পুত্র জয়রাম ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মাণের জন্য পৈতৃক ভিটা দেন। তার পুত্র দুর্গনারায়ণ ও পৌত্র গোপীমোহন জমিদারি কিনে জোড়াসাঁকোতে ঠাকুর এস্টেট পত্তন করেন। ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সখ্য ছিল বরাবর। তাতে কি?
রবীন্দ্রনাথ, বা নেহেরু এরা কেউ ইংরজের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি বলেই কি এদেরকে কেউ রাজাকার বা যুদ্ধাপরাধী বলেছে? বলেনি। রাজাকারের বাংলা হলো সহযোগী। এরাই হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়। যাতে সবাই মোটামুটি যন্ত্রনার সাথে থাকে আর ইংরেজের প্রস্থানে ফূর্তি করতে না পারে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মতই স্বদেশী আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল। জনগনের নয় পুঁজিপতিদের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে ইংরেজরা ভারত ত্যাগ করে।
ঝরে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে — এই প্রথা চলে আসছে অনাদী কাল ধরে। জগতে শুধু দুই শ্রেনীর মানুষ আছে।
একজন মালিক অন্যজন চাকর
একজন কাজ করে অন্যজন কাজ করিয়ে নেয়
ফোর্ট উইলিয়াম ভেংগে গুড়িয়ে দেয়নি কেউ বরং এইটা সবার গর্ব । ইংরেজরা সবার গর্ব। খালেদা জিয়া ইংল্যান্ড গেলেই বিএনপির নেতাকর্মীরা আশায় বুক বাধে। এই বুঝি ইংরেজরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিলো। ইংরেজের বিরোধিতা কেউ করেনি কোন দিন। পাকিস্তানের বিরোধিতা কেউ করেনি। ক্ষমতা চেয়েছিল। পাকিস্তানের বিরোধিতা যারা করেছে তারা সেই নির্বোধ সাধারণ মানুষ। ইংরেজদের মতই পাকিস্তানের সৈন্যরা সন্মানের সাথে দেশ ত্যাগ করে নিরাপদে নিজেদের দেশে যেয়ে পৌচেছে। দুই একজন স্বদেশী বা মুক্তিযোদ্ধারা যারা ঝাপিয়ে পড়েছিল তারা সব মৃত। কেউ তাদের চিনেনা জানেনা নাম শুনেনি কোন দিন। যাদের নাম সবাই জানে তারা কেউ নির্বোধ না তাই স্বদেশ আন্দোলন করেনি বা মুক্তিযুদ্ধে যায়নি । তাতে কারু কোন অসুবিধা হয়নি । চাটুকারেরা জীব দিয়ে চেটেচুটে মালিকের নামের ফলক ঝকমকে করে ফেলেছে।
যারা সৈন্য তারা সৈন্য বাহিনীতে যোগ দিয়েছে কেনো ? কি কারণ ছিল পাকিস্তান আর্মীতে যোগ দেবার? যুক্তরাজ্যে ছেলেরা কেনো আর্মীতে যোগ দেয় ? যাদের শরীরে অনেক শক্তি কিন্তু মেধা নাই তারাই আর্মীতে যোগ দেয়। হাই স্কুল শেষ না করেই আর্মীতে যোগ দেয় । যাতে কম বয়সে বেশী টাকা উপার্জন করতে পারে। পাকিস্তান আর্মীতে যোগ দিয়েছিল যারা তারা সবাই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে যোগ দেয় পরে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কেউ কেউ উচ্চতর ডিগ্রী নেয় । টাকার জন্য সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। অতিতে যখন উপনিবেশিক শাসকেরা এসেছিল তখন অনেকেই তাদের সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেয় । অর্থনৈতিক দৈন্যতা থেকে মুক্ত হবার জন্যই বেশীরভাগ মানুষ সৈন্য হয়। পরে গাল গল্প জুড়ে দেয় — হেন তেন দেশের জন্য দিছে জান ইত্যাদি । ঘটনা একই রাজার জন্য বা মালিকের জন্য জান দিছে তাই মালিক এক নতুন গল্প বানিয়ে তাদের মূল্যায়ন করেছে।