পুলিশের জমি দখলে ৪০ পরিবারের প্রতিবাদ

যশোর: যশোরে সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে বসবাসকারী ৪০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে পুলিশ ক্লাব নির্মাণ করা হচ্ছে। কোনো ধরণের আইনি প্রক্রিয়া না মেনে এসপির নির্দেশে পুলিশ এই উচ্ছেদ করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে টাঙানো হয়েছে পুলিশ ক্লাবের সাইনবোর্ড।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোরের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক।

লিখিত বক্তব্য মতে, ১৯১০ সালে শহরের গাড়িখানা রোডে এক দশমিক ২০ শতক সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়ে গোপী নাথ রায় চৌধুরী, মাসুদ আলম, আসাদুজ্জামান শিপলুসহ বেশ কয়েকজন বংশানুক্রমে ভোগ দখল করে আসছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া জমিটি নিজেদের দাবি করে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। কিন্তু বিচারিক আদালতে পুলিশ হেরে যায়। বর্তমানে মামলাটি জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে এই এলাকার দোকান ও আবাসিক ভবন থেকে বাসিন্দাদের উচ্ছেদে নামে পুলিশ। রাতের আঁধারে তারা বেশ কয়েকটি দোকান দখল করে দেয়াল তুলে পুলিশ ক্লাবের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। এখন এই এলাকার আবাসিক ভবন থেকে বাসিন্দাদের গায়ের জোরে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পরিবারগুলোকে হুমকি, ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে নেমে যেতে বলা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক জানান, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানও আইন বহির্ভূত উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ডিসি, এসপিকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তা মানছে না পুলিশ। এমনকি যশোরের জেলা প্রশাসকও পুলিশ প্রশাসনকে এভাবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তার কথাও পুলিশ শুনছে না। শুধু তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্তদের এই আন্দোলন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পুলিশ বুধবার রাতে ওই এলাকায় বোমাবাজি করে এই পরিবারগুলোর নিরীহ মানুষদের আসামি করে মামলা করেছে। এই অবৈধ দখল প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। এ কারণে খুবই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকার নিরীহ সাধারণ মানুষ।

বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক উল্লেখ করেন, পুলিশের এই অবৈধ উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। সংবাদ সম্মেলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এমন আইন বহির্ভূত কাজে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যশোরের বিশিষ্টজনেরা। বুধবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে তারা এক যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য ও যশোর জেলা সভাপতি ইকবাল কবির জহিদ, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির যশোর জেলা সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক তসলিম-উর-রহমান ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের জেলা সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার রায়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) মীর মোহাম্মদ সাফিন মাহমুদ জমিটি পুলিশের দাবি করে বলেছেন, সরকারি জমি উদ্ধারে এই অভিযান চালানো হয়েছে। আদালতে মামলা চলাকালে উচ্ছেদ অভিযান বিধিবহির্ভূত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, দখলকারীরা জাল দলিল দেখিয়ে মামলা করেছেন। সরকারি স্বার্থে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন তারা।

One thought on “পুলিশের জমি দখলে ৪০ পরিবারের প্রতিবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *