নিজের মৃত্যুর শোক সভাতে নিজেই এসে হাজির

মেলবোর্নে তখন বসন্ত। নোয়েলা রকুন্দো বসে ছিল গাড়িতে। ঠিক তার বাসার সামনে। তার মৃত্যু উপলক্ষে আজ তার বাসাতে অনেক বন্ধু বান্ধব প্রতিবেশীর সমাগম হয়েছে। সবাই তার স্বামীকে শান্তনা দিয়ে এঁকে এঁকে বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। নোয়েলার  সাথে তার স্বামী কালালার বিয়ে হয়েছে আজ  প্রায় দশ বছর। তিন সন্তানের জনক কালালা  নোয়েলা রকুন্দোর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল। রকুন্দো গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে তার ঘরের ভেতরে তার মৃত্যু উপলক্ষে শোকাভিভূত শেষ প্রতিবেশীটির প্রস্থানের। 
 
শেষ প্রতিবেশীকে বিদায় দিয়ে কালালা ঘরে প্রবেশ করবে এমন সময় নোয়েলা তার কাধ স্পর্শ করে। পরিচিত হাতের স্পর্শে কালালা চমকে উঠে। ফ্যাকাশে হয়ে যায় কালালার মুখ। একি! নোয়েলা হাসে। আমি ভুত। নোয়েলার ভুত!! 
 
কালালা কেঁদে ফ্যালে। হাউ মাউ করে কাঁদে। মাফ চায়।  
নোয়েলা হাসে । 
 
স্ত্রীকে হত্যা করানোর জন্য পেশাদার খুনীকে টাকা দিয়েছিল কালালা। সাজা হিসাবে মেলবোর্ণ কোর্ট কালালাকে নয় বছরের জেল এর সাজা শোনায়।    
 
নোয়েলা জানতে চায় কেনো তাকে তার স্বামী হত্যা করতে চেয়েছিল? 
কালালা জানায় যে অন্য একটি মেয়ের সাথে তার  সম্পর্ক ছিল। নোয়েলা যদি জানতে পারে তাহলে সে কালালাকে ছেড়ে অন্য কোন পুরুষের সাথে চলে যাবে তাই কালালা পেশাদার খুনীকে সাত হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেয় নোয়েলাকে হত্যা করার জন্য। 
 
পেশাদার খুনীরা সত্যই যদি নোয়েলাকে হত্যা করতো তাহলে তাদের তিন তিনটি  সন্তানের দেখাশোনা কে করতো এটা কিছুতেই  ভাবতে পারেনা নোয়েলা  নোয়েলা কোর্টকে জানায় যখন সে বারুন্ডি, তার দেশে বেড়াতে যায় তখন হোটেল গেট থেকে খুনীরা তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পেশাদার খুনীরা নোয়েলাকে জানায় যে তাকে হত্যা করার জন্য তারা ডলার পেয়েছে। নোয়েলার সামনেই তারা “বসের” সাথে স্পীকার ফোনে কথা বলে। “ওকে হত্যা করো” কালালার আদেশ শুনতে পায় নোয়েলা।  
 
 
নোয়েলাকে কেনো তার স্বামী হত্যা করতে চায়পেশাদার খুনীরা স্পীকার ফোনে এই প্রশ্ন করলে কালালা কিছু বলতে পারেনাস্পিকার ফোনে কালালার কন্ঠস্বর শুনে নোয়েলার মনে হয় তার  মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবেদীর্ঘ দশ বছর এই স্বামীর সাথে সে সংসার করেছেতার মৃতদেহ কিভাবে গুম করবে  সে নির্দেশও  স্বামীর কন্ঠে সুনতে পায় সে।   
 
খুনীরা তাকে ছেড়ে দেয়নোয়েলাকে বলেঅকারনে কোন মহিলাকে তাঁরা হত্যা করেনা।  খুনীরা আরো বলে যে তোমরা বিদেশে যেয়ে টাকা কামায় করো আর সেই টাকা খরচা করো ভাইকে দিয়ে ভাইকে হত্যা করানোর জন্য  । কালালার সাথে তাদের কথোপকথণের রেকর্ড করা ফোনের মেমোরি কার্ড দেয়সেটা নিয়ে নোয়েলা মেলবোর্নে ফিরে আসে, নিজের বাসার সামনে বসে নিজের মৃত্যু শোকে বিহ্বল প্রতিবেশীস্বামীকে দ্যাখে, এবং কোর্টে মামলা করে

কালালার জেল হবার পরে মেলবোর্নের আফ্রিকান প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক ধিক্কার শুনতে হয় নোয়েলাকে তাই সে বাসা ছেড়ে নতুন এলাকাতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কাহিনীর সূত্র

৪ thoughts on “নিজের মৃত্যুর শোক সভাতে নিজেই এসে হাজির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *