বাংলাদেশের সকল জনগন যদি সকল প্রকার রাজনীতি থেকে সরে আসে তাহলে কেমন হয়?
বহুজাতীক তেল কোম্পানিগুলোর পরিকল্পনা সাড়া বিশ্ব জুড়ে। ওদের এক্সপার্টরা জানে কোন দেশে কি পরিমান তেল বা অন্যান্য খনিজ সম্পদ আছে। বহুজাতিক তেল কোম্পানীর জন্য তাদের যার যার রাস্ট্র কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রতিনিধিরা যে যেদেশে প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন সে সেই দেশ থেকে এইসব তথ্য সরবরাহ করে। এইসব প্রতিনিধিরা জানে, বাংলাদেশে কি পরিমাণ খনিজ সম্পদ আছে। বাংলাদেশের এই খনিজ সম্পদ কোন কোন দেশ উত্তোলণ করবে, বিক্রি করবে এবং তাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাবে। প্রতিনিধি দুই ধরনেরঃ এক – রাস্ট্রদূত ও রাস্ট্রদূতের অফিস; দুই – স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবি ও আইনজীবিরা।
পাকিস্তানে পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ। পাকিস্তানের এই খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে প্রধানতঃ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের তেল কোম্পানীগুলো। ভারতের বিভিন্ন প্রজেক্টে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন তেল কোম্পানীরা একত্রে কাজ করছে। সীমান্তে নিয়মিত বিরোধ ও বিদ্রোহের পরেও এই কারনেই দেখা যায় ভারতের সাথে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক জ্যামিতিকভাবে ভাল হয়ে যাচ্ছে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্র বাণিজ্যিক বন্ধু। পাকিস্তান ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্র আর্থ-সামাজিক-রাজণৈতিক-সাংস্কৃতিক বন্ধু । এখন ভারত ও পাকিস্তান যদি ভাল বন্ধু না হয় তাহলে দুই দেশের জন্যই তা ক্ষতিকারক হবে।
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। পাকিস্তানের সূত্র থেকে জানা যায় যে পাকিস্তানে রয়েছে ১০৫ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট শেল গ্যাস, নয় বিলিয়ণেরও বেশী ব্যারেল তেল রিজার্ভ অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের এনার্জি রিপোর্টের সূত্র থেকে জানা যায় গ্যাসের জন্য পাকিস্তানে রয়েছে ২৪ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট হাইড্রোকার্বন ও ৩০০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রিজার্ভ। পাকিস্তান বিশ্বের একটি ধনী দেশ হবার কথা কিন্তু তা না হয়ে দুর্নীতির জন্য পাকিস্তান বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে (নাইজেরিয়া প্রথম স্থানে আছে)। পাকিস্তানের এই দুর্নীতির শুরু হয়েছে ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তান গড়ে তোলার জন্য আর ভারতের আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল অর্থ, অস্ত্র, আর্মী ও প্রশিক্ষণ । মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের দরকার ছিল একটি ঘাটি যেখান থেকে মার্কিন সৈন্যরা চীন ও সোভিয়েতের উপরে নজর রাখতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র পাকিস্তানকে অর্থ, অস্ত্র, ও প্রশিক্ষণ দিয়ে আর্মী তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে পাকিস্তান পেয়েছে বিশ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ণ যার বেশীরভাগই গেছে পাকিস্তানের আমলা, রাজনীতিবিদ ও সামরিক বাহিনীর প্রধানদের পকেটে।
সব চাইতে দুঃখজনক ঘটনা হলো মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানকে “ক্যান্সার” বলে ধিক্কার জানায়। ইরাক ও আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধের সময়ে মার্কিন সৈন্যরা পাকিস্তান থেকে প্রচুর নিরীহ মানুষকে সন্ত্রাসী ছাপ লাগিয়ে গ্রেফতার করে এবং গুয়ানতানামো বে কিউবার নির্যাতন কারাগারে নিয়ে তাদের উপরে চালায় অমানবিক নির্যাতন। কানাডার মানবাধিকার সংস্থার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় – আফগানিস্তান, ইরাক ও পাকিস্তান থেকে “সন্ত্রাসী” নাম দিয়ে গ্রেফতার করে যাদের গুয়ানতানামো বে কিউবাতে চালান করা হয়েছিল তাদের ভেতরে শতকরা নিরানব্বই জন মানুষই নিরীহ পথচারী বা ভুল সময়ে ভুল জাগাতে উপস্থিত থাকার জন্য গ্রেফতার হয়। ৯/১১ এর সাজানো নাটকে ভুয়া সন্ত্রাসীর ভূমিকাতে অভিনয় করার জন্য অভিনেতার দরকার ছিল ফলে তাদের উপরে যখন অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় তখন তারা পাগলের মত আবোল তাবোল বকতে শুরু করে দেয়। বেশির ভাগ মানুষই নির্যাতণের পরেই সন্ত্রাসী বলে নিজেদের স্বীকার করে নেয়। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মিশন ছিল তেলের খনি দখল, তেল পরিবহণের জন্য ট্যানেল তৈরি ইত্যাদি। পাকিস্তানের মার্কিন ঘাটি থেকে বেশ কিছু দ্রোণ আক্রমণ করা হয় পাকিস্তাণের উপরে।
লং জার্নাল থেকে জানা যায় ২০১১ সালের জুন জুলাই মাস থেকে আজ পর্যন্ত দ্রোণ আক্রমনে হত্যা করা হয় ২০১১ জন মিলিটান্টসকে ও ১৩৮ জন নিরীহ মানুষকে। দ্যা নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশন এর ভাষ্য অনুযায়ী ২০০৪-২০১১ এর মধ্য ২৫৫১ জন পাকিস্তানীকে হত্যা করা হয় যার ভেতর ৮০% ছিল মিলিটান্টস। ২০১২ সালে যাদের হত্যা করা হয় তাদের ভেতরে ১৫%ই মিলিটান্টস ছিল।.
্দ্যা ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম তাদের তদন্ত রিপোর্টে বলে ২০১১ সালে যে ৩৮৫জন মানুষকে হত্যা করা হয় তার ভেতরে ১৬০ জন ছিল শিশু। জুলাই ২০০৯ সালে ব্রুকিংস ইনস্টিউট তাদের প্রতিবেদনে বলে যে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের দ্রোন আক্রমনে যদি দশজন মানুষ মারা যায় তার ভেতরে হয়তো একজন মিলিটান্টস। পাকিস্তান সরকার যেহেতু মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের পোষ্য তাই পাকিস্তানের দ্রোন আক্রমনে আসলে কতজন পাকিস্তানী মারা গেছে বা যাচ্ছে তা সঠিকভাবে বলা যাবেনা। পাকিস্তানের একটি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে দ্রোন আক্রমনে ২০০৯ সালে ৭০০ এর উপরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। লাশ গননা ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় জুন ২০০৪ থেকে জানুয়ারী ২০১০ পর্যন্ত ১০৬৫ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” কি আসলেই “সন্ত্রাসী”র বিরুদ্ধে যুদ্ধ?
নাকি সন্ত্রাসীর ধুম্রজাল সৃষ্টি করে এই দেশের খনিজ সম্পদের পরিমান পরিমাপ করা হচ্ছে ? সন্ত্রাসী হয়ে মারা যাবার ভয়ে সবাই দূরে থাকবে বা প্রতিহত করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে চাইবেনা। ভীতি সৃষ্টিই হলো দ্রোণ আক্রমণের মূল কারণ।
ঋন, দ্রোণের ভীতি, দুর্নীতি সৃষ্ট দারিদ্রতা, সমাজে ব্যভিচার, ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন উপজাতীদের ভেতরে হানাহানি, পুতুল সরকার, ইত্যাদি সব মিলিয়ে পাকিস্তান এখন সত্যই একটি পাক ও পবিত্র স্থান হয়ে গেছে।
ফিরে আসি বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে যখন বারে বারে খালেদা জিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করেন তখন কাশিমপুরে বিএনপীর নিরীহ নেতাকর্মীরা ধুঁকে ধুঁকে মরে। যারা বাইরে আছেন যারা ফেসবুকে আছেন যারা বিয়াসাদি দিচ্ছেন বা খাচ্ছেন যারা প্রবাসে আছেন তারা হয়তো উতফুল্ল হচ্ছেন তাদের সুযোগ আসার । দুর্নীতি ও অপরাধের টেবল তাদের দিকে হয়তো টার্ন নিচ্ছে। হয়তোবা নিচ্ছে। কিন্তু তাদের বাংলাদেশের সাধারন মানুষের জীবণের কোন পার্থক্য আশা করা যুক্তিযুক্তভাবেই উচিৎ হবেনা।
মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রতিনিধিরা তাদের নিজ দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করছে। ভারত ও ভারতের নাগরিকেরা তাদের নিজ দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করবে। খালেদা জিয়ার উচিৎ তাঁর নিজ দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করা । তবে অন্য কারু মগজের পরিকল্পনা যদি খালেদা জিয়ার ব্রেইন দখল করে থাকে তাহলে এই মূহূর্তে খালেদা জিয়ার ব্রেইনের পক্ষে নিজ দেশের স্বার্থ বা কাশিমপুরবাসীদের স্বাস্থ্য ও মুক্তির কথা চিন্তা করা হয়তো সম্ভব হবেনা ।
এই মূহুর্তে বাংলাদেশের সকল জনগণের উচিৎ হবে সকল প্রকার রাজনৈতিক দল থেকে নিজেদের সরিয়ে আনা। রাজনৈতিক দলগুলো ও দলের নেতৃত্ব বহুজাতির পুঁজিপতিদের প্রতিনিধিত্ব করে, ওরা কেউ জনগণের প্রতিনিধি নয়।
Saif Islam liked this on Facebook.
Masum Abir liked this on Facebook.