কলুষিত মনই শব্দ, সমাজ, স্বাস্থ্য দুষন করে

কে ওই শোনালো মোরে আযানের ধ্বনী।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনি।
কি মধুর আযানের ধ্বনী!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষনে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কেনো এই কবিতা লিখেছিলেন আমি জানি। আমি একজন বাংলাদেশী। একটি রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম হয়। ছোটবেলায় ঘুম ভেংগেছে আযানের সুর শুনে । সকালবেলা আব্বা সবাইকে ডেকে উঠাতেন তারপর নিজে মসজিদে চলে যেতেন। সবাই অজু করে নামায পড়ার কথা আমি কিন্তু ফাঁকি দিয়েছি বরাবর। উঠেছি ঠিকই । বাইরে চলে গেছি। বাংলাদেশের সকাল সব চাইতে সুন্দর সকাল। বাংলাদেশের সকালের সেই আকাশের নিচে এখনও আমি বসবাস করি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। আকাশ কিন্তু একটাই। আমরা সাড়া পৃথিবীর সকল মানুষ একটাই আকাশের নিচে বসবাস করি। বাংলাদেশ থেকে কানাডাতে এসে তাই  আমি আকাশ মিস করিনি। সকাল মিস করিনি। এখানেও সকাল হয়। মাটি মিস করিনি। এখানেও মাটির উপর দিয়েই আমরা হাটি। মাটি, আলো, বাতাস, আকাশ, পানি, সবই তেমন আছে শুধু আযানের সেই মধুর ধ্বনি শুনিনা  বহুদিন।অনেক মিস করি, করেছি, করবো। সাথে করে আমার মাকে এনেছিলাম সুতারাং আযান ছাড়া আমি বাংলাদেশের আর কিছু মিস করিনি।

সুদুর প্রবাসে এখনও আমি আযান শুনি প্রতিদিন। সেটা রেকর্ড করা আযান। বাংলাদেশে যারা বসবাস করছেন তারা সৌভাগ্যবান কারণ তারা প্রতিদিন পাঁচবার আযান শুনতে পান। কানাডাতে মসজিদে আযান হয় ।  আমি মসজিদের খুব কাছেই থাকি।  আমার বাসা থেকে মসজিদে হেটে যেতে সাত থেকে দশ মিনিট লাগে। অনেক উঁচু উঁচু দালান আর অনেক গাড়ী চলে রাস্তা দিয়ে তাই আযান শুনতে পাইনা।

আযান কেনো দেওয়া হয়? মুসলমানদের নামাযের জন্য সতর্ক করা হয়। সবাইকে নামাযে ডাকা হয়।  অতীতে বাড়িঘর কম ছিল।একটি বাড়ী থেকে অন্য বাড়ীর দুরত্ব বেশী ছিল। ফাঁকা জাগা থাকার ফলে আযানের ধ্বনি অনেক অনেক দূর পর্যন্ত পৌছাতো। ঢাকাতে আমাদের বাসা থেকে মসজিদ একই রকম দুরত্বে ছিল। মাইক কেনো ব্যবহার করা হয়? এখন আর কোন ফাঁকা জাগা নাই। সবখানেই বড় বড় বিল্ডিং উঠেছে। খালি গলাতে আযান দিলে আযানের শব্দ কারু কানে পৌছুবেনা সেজন্য মাইকের ব্যবহার করা হয়। একজন মুসলমানের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরয। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাথে আরো কিছু ফরয রয়েছে তাহলো – সৎ উপার্জন করা, কারুকে ফাঁকি না দেওয়া বা ধান্দাবাজী বা প্রতারণা বা ঘুষ বা দুর্নীতি বা মিথ্যাচার করে উপার্জন না করা। কেউ যদি চুরি বা দুর্নীতি করে ওজনে কম দিয়ে বা প্রতারণা করে কারু থেকে টাকা মেরে জীবিকা নির্বাহ করে তাহলে তার নামায কবুল হবেনা।  সে মুসলমানই থাকবেনা সুতারাং তার জন্য নামায পড়ার কোন দরকার হবেনা। মুসলমান হতে গেলে অনেকগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয় আর এইসব নিয়মের মূল মন্ত্র হলো মানুষের সেবা করা। কেন মানুষের সেবা করতে হবে? যেহেতু মানুষ আল্লাহ্‌র সৃষ্টি। আল্লাহ্‌র এক সৃষ্টিকে অন্য সৃষ্টি রক্ষা করেই ভারসাম্য রক্ষা করে চলে।   সেজন্য বলা হয় দরিদ্রের পাশে দাড়াও, আর্থিকভাবে সাহায্য করে নিকট আত্মীয়কে প্রতিষ্টিত হতে সাহায্য করো, এতিমের হক মেরে দিওনা, এতিমের পাশে দাঁড়াও, এতিমের লালন পালন করো, অভুক্ত প্রতিবেশীর সাথে খাবার ভাগ করে খাও, ইত্যাদি সব কিছু মেনেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে আল্লাহ্‌র কাছে শোকর গুজার করতে হবে এই বলে যে আল্লাহ্‌, যে দায়িত্ব তুমি আমার উপরে অর্পন করেছো আমি চেস্টা করেছি সে দায়িত্ব পালন করার। আর আমাকে এই দায়িত্ব পালন করার জন্য তুমি শক্তি দিয়েছ, সামর্থ দিয়েছ, ধৈর্য দিয়েছো, অনুপ্রেরনা দিয়েছ তাই আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। জীবণের জন্য, খাদ্যের জন্য, বাসস্থানের জন্য, স্বাস্থ্যের জন্য, পরিবারের সকলের সুন্দর জীবণের জন্য, সুখের জন্য, সাফল্যের জন্য আমি আল্লাহ্‌ তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।

“মাইকে উচ্চ শব্দে আযান দিয়ে শব্দ দুষণ করা হচ্ছে” বলে কথা উঠেছে।
“শব্দ দুষণ” শব্দটা আগে শুনিনি। বাংলাদেশে যতদিন ছিলাম আর যতবার আযান শুনেছি ততবারই নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছে । আলাহকে বলেছি – আল্লাহ্‌,  যে দায়িত্ব দিয়ে তুমি আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছো  সে দায়িত্ব আমি পালন করতে পারিনি। আমি ব্যর্থ,আমি লজ্বিত, আমি ক্ষমাপার্থী, তোমার দেওয়া সব সম্পদ আমি ভোগ করেছি কিন্তু আযান শুনেও প্রতিদিন তোমার সামনে হাজির হইনি। আমি জানি আমি ক্ষমা পাবোনা । আমি এও জানি  আল্লাহ্‌ রহমানুর রহিম। আল্লাহ্‌ দয়ালু এবং ক্ষমাশীল ।

পরিবেশ দুষণ শব্দটি শুনেছি। বাংলাদেশের খোলা আকাশের নিচে মানুষ জবাই করা হয়। তাতে পরিবেশ দূষিত হয়। বাংলাদেশের যেকোন প্রতিবাদ মিছিলে নির্যাতন করা হয় সেটাও পরিবেশ দুষণ করে। বাংলাদেশের বাজারে বেশীরভাগ খাদ্যেই ফরমালিন মেশানো হয় যা স্বাস্থ্য দুষণ করে। বাংলাদেশের মত একটি ছোট জাগাতে পরিবেশ দুষন করে অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় প্রাইভেট গাড়ী। গাড়ির ধূয়া থেকে নির্গৎ গ্যাস পরিবেশ দুষণ করে। সাড়া বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে এই বিষাক্ত গ্যাস পরিবেশ দুষন করছে। সুন্দরবনে তেলে ট্যাঙ্ক ডুবিয়ে দিয়ে সুন্দর বণের পরিবেশ দূষিত করা হয়েছে। অনেক পশুপাখি গাছপালা ধ্বংস করা হয়েছে। সুন্দরবণের কাছে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করে পরিবেশ দুষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের থানা, হাসপাতাল মর্গে মানুষের লাশ পরিবেশ দুষন করে, ক্রসফায়ার পরিবেশ দুষন করে, যখন তখন মানুষ হত্যা করে যেখানে সেখানে লাশ ফেলে দিয়ে পরিবেশ দুষণ করা হয়, কোরাআনে আগুন, আলেম হত্যা, বস্তিতে আগুন সব কিছুই পরিবেশ দুষণ করেছে,  অবাধে বিভিন্ন রকমের মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয় তাতে পরিবেশ, সমাজ ও স্বাস্থ্য সব কিছুই দুষন করে। সব চাইতে বড় কথা হলো যদি কারু মন মানসিকতা দূষিত হয় তাহলে তার কাছে মাইকের উচ্চ শব্দে আযান শব্দ দুষণ মনে হবে; সে পক্ষপাতদুষ্ট ; কিছুক্ষণ বৃষ্টি হলেই ঢাকাতে পানি জমে যায় কারণ বিভিন্ন বাসা থেকে গার্বেজ ছুঁড়ে ফেলে পথঘাট দূষিত করে রাখা হয়।  গারবেজগুলো থেকে মানুষে খাদ্য সংগ্রহ করে যেহেতু বাংলাদেশে দুর্নীতি বেশী আর দরিদ্র আর ধনীর পার্থক্যও অনেক বেশী। কেউ অপচয় করে আর কেউ খেতে পায়না। সেজন্য সমাজ দূষিত হচ্ছে।

এখন মাগরিবের আযান দিচ্ছে আমার ট্যাবলেটে। লেখার চাইতে নামায জরুরী।
প্রথমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুন। ইসলামের নির্দেশ মানুন তারপর ইসলামের নিয়ম অনুসারে পরিবেশকে দোষ মুক্ত করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *