প্রতারণা চক্র – ৬ এপোলো হসপিটালস

এইতো কিছুদিন আগে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাজারে বিক্রি হলো। মেডিক্যালে পড়তে ইচ্ছুক মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা তার প্রতিবাদ করলো এবং প্রতিবাদীদের উপরে পুলিশি হামলা করানো হলো। যারা প্রশ্নপত্র কিনেছে তারা যেহেতু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে চায় না বা পারেনা বা যোগ্যতা নেই তাই প্রশ্ন পত্র কিনেছে। কিন্তু তাদের ডাক্তারের মত পেশা বেছে নেবার কি দরকার? আমার জানা নেই।

গতকাল ফেসবুকে একটি পোস্ট পড়লাম। সেটা হুবহু তুলে ধরছি এখানেঃ

ভবিষ্যতে কেউ যদি ঢাকা এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন তাহলে দয়া করে একটু ভেবেচিন্তে আসবেন। এই হাসপাতাল হাসপাতাল না, এটা চিকিৎসার নামে একটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, বাণিজ্যিক ধান্দা বাজির একটা বিশাল দালান।

আমার স্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে, ভয় পাইয়ে দিয়ে তারা আমার সম্পূর্ণ সুস্থ শিশুকে এক মাস আগে জন্ম দেয়ালো কোনো কারণ ছাড়াই। বলল বাচ্চার ওজন অনেক বেশি, আর আগে জন্ম হলে তাদের জন্য ম্যানেজ করা সহজ হবে। জন্মের পর দেখা গেল বাচ্চার ওজন অনেক কম এবং তাকে ইনকিউবেটরে রাখতে হবে।

পরে বুঝলাম “ম্যানেজ” মানে হল শুধু মাত্র বিল বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে আগে বাচ্চা জন্ম দেয়ালো। একদিনের ভুমিষ্ট বাচ্চাকে এন্টিবায়োটিক, অক্সিজেন ইত্যাদি দিয়ে এক ভীতিকর অবস্থার সৃস্টি করল, বলল ইনফেকশন হতে পারে, ব্লাড কালচারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭২ ঘণ্টা, পুরা সময় বাচ্চা ইন্টেন্সিভ কেয়ারে থাকবে। ৭২ ঘন্টা পর রিপোর্ট আসলো কোনো ইনফেকশন নাই।

কেন একদিনের বাচ্চাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে তিনদিন আইসিঊ তে রাখা হল?
কোনো উত্তর নাই।
ফাইল দেখতে চাইলে বলল রিলিজের আগে দেখানোর নিয়ম নাই।

পুরো নাটকটি তাদের সাজানো। তারাই প্রথমে আমাদেরকে আগাম ডেলিভারী দিতে বাধ্য করল এই বলে বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত, যাতে করে কিছু পয়সা অতিরিক্ত খসাতে পারে।
কেনো তারা একটা বাচ্চার জীবন বিষিয়ে তুলে এই কাজটা করল?
একবার ভাবলাম আমি ভুল করছি। পরে মেটারনীটি ডিপার্টমেন্টে দেখলাম তারা এই কাজ শতকরা ৬০% রোগীকে করাচ্ছে। যেই ডিপার্টমেন্ট সবচেয়ে হাসি খুশির জায়গা হওয়ার কথা সেখানে বিরাজ করছে এক ভীতিকর পরিস্থিতি। প্রত্যেক নতুন বাবা মার চোখে ব্যপক আতংক।

অন্য একজনের সাথে পরিচিত হলাম, বল্লেন তার ভাইকে অস্ত্রপচার করতে প্রাথমিক ভাবে অসফল হয় হাসপাতাল, পরে ভুল স্বীকার করে আবার করে। কিন্তু বিল ঠিকই ডাবল করছে।

এখানে এমনও অভিযোগ আছে মৃত রোগি আনলে তারা তাকে দুইদিন ইন্টেন্সিভ কেয়ারে রেখে দেয়, এবং এর প্রমানও পাওয়া গেছে। পরে একটু অনুসন্ধান করতে বার্ষিক রিটার্ণ দেখলাম, চক্ষু চড়ক গাছ।

তারা ২০১১ সালেই মুনাফা করে ২৬ কোটি টাকা! আয়ের শতকরা ৪০% আসে গাইনি ও অবস্ট্রেট্রিকস ডিপার্টমেন্ট থেকে! সুতরাং উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এপোলো হাসপাতালে যারা আসবেন তারা দয়া করে ভেবেচিন্তে আসবেন।

এই কসাইখানা ব্যবসা চট্টগ্রামে যাওয়ার পায়তারা করছে এবং স্বল্প মূল্যে সিডিএ থেকে জমিও কিনেছে মানবিক প্রতিষ্ঠান নাম করে। এই এপোলো হাসপাতাল হল ব্যবসায়ী এম পি টিপু মুন্সি, শান্তা গ্রুপের মালিক, আর লংকা বাংলা ফাইনান্সের যৌথ প্রযোজনার এক ধান্দা বাজির দোকান যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম এস টি এস হোল্ডিং লিঃ তারা ভারতের তৃতীয় শ্রেনীর কিছু ডাক্তার এপোলো গ্রুপের সাথে যৌথ চুক্তির আওতায় এনে জনগণের সাথে ভাওতাবাজির এক ব্যাপক আয়োজন করেছে। ভারতে এই ডাক্তারগুলোকে কেউ চেনা দুরে থাক চাকরি ও দেবেনা। দূর্ভাগ্যের বিষয়,এই ব্যপক লূটতরাজ দেখার, নিয়ন্ত্রন করার সংস্থা (বিএমডিসি, ডীজি হেলথ) একেবারই নিস্ক্রিয়। তাই ঢাকা এপোলো হাসপাতালে আসার আগে সুচিন্তিত স্বিদ্ধান্ত নিন।

শেয়ার করুন অন্যকে জানতে দিন ।। যত শেয়ার করবেন আপনার ঐ শেয়ার থেকে একজন দেখেও সতর্ক হবে ।

—————————————
দামী দামী হাসপাতালে যখন একজন রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেই দামী হাসপাতাল ধারণা করে এই রোগীর অনেক টাকা। কল্যানপুর বস্তি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এমন কোন প্রসূতি এপোলো হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেনা। পথের ধারেই সে সন্তান প্রসব করবে। অতীতে দাই মায়েরা সন্তান প্রসবে সাহায্য করতেন। তারপর নার্সেরা এই কাজে সাহায্য করতেন। এখন ডাক্তারেরা এই কাজে সাহায্য করছেন। তবে এই ডাক্তারেরা যদি প্রশ্নপত্র কিনে ডাক্তার হন তাহলে সেই কল্যানপুর থেকে উচ্ছেদকৃত বস্তির প্রসুতি মায়ের মতই দামী হাসপাতালের মা দামী হাসপাতালের বেডে সন্তান প্রসব করবে সেই বস্তির মায়ের মতই, প্রসব বেদনার কোন কমতি হবেনা   – মাঝখান থেকে ডাক্তার কিছু বেশী টাকা নিবে। পৃথিবীর বয়স অনেক। সন্তান প্রসবের বয়স পৃথিবীর বয়সের মতই। তাই সন্তান প্রসব করার জন্য দামী হাসপাতালে যাবার কোন দরকার নাই।

কল্যানপুর বস্তি থেকে উচ্ছেদকৃত বস্তির মায়ের শিশুরা আর বিশাল ধনীর শিশুরা সবাই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি মানুষ। পার্থক্য হলো কল্যাণপুর বস্তি থেকে উচ্ছেদকৃত শিশুর মাবাবার ক্রয় ক্ষমতা নেই আর বিশাল ধনীর শিশুর মাবাবার ক্রয়ক্ষমতা আছে।

বাংলাদেশের দামী হাসপাতালের চিকিৎসার ক্রয় ক্ষমতা বাংলাদেশের কার কার আছে?
বাংলাদেশের যেসব মানুষের পকেটে অতিরিক্ত টাকা আছে তাদেরই দামী হাসপাতালের চিকিৎসার ক্রয় ক্ষমতা আছে।
বাংলাদেশের কোন কোন মানুষের পকেটে অতিরিক্ত টাকা আছে আর কিভাবে সেই অতিরিক্ত টাকা উপার্জিত হয়েছে?
শুনেছি বাংলাদেশ থেকে “সততা” শব্দটি নির্বা্সিত হয়েছে। সৎ, নীতি, আদর্শ, ইত্যাদি শব্দগুলো বিলুপ্ত হয়ে সেখানে এসে জুড়ে বসেছে ব্যভিচার, মিথ্যাচার, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষন ও খুন।
হাসপাতালগুলোর মালিকেরা সব ধোঁকাবাজি, দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমেই টাকা উপার্জন করে হাসপাতাল প্রতিষ্টা করেছে আরো টাকা বানাবার জন্য। সেবার করার জন্য নয়।

মানুষের সেবা করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্টা করা হয় নাই সেজন্য সেই হাসপাতাল থেকে ভাল চিকিৎসার আশা করা উচিৎ নয়।
একজন দুর্নীতিবাজ চোর যদি হাসপাতাল প্রতিষ্টা করে থাকে তাহলে তিনি আশা করবেন তার হাসপাতালে চিকিৎসার ক্রয় ক্ষমতা  অন্য একজন চোরের ছেলে বা বংশধরেরা  থাকবে এবং তারাই এসে এই হাসপাতালের চিকিৎসা ক্রয় করবে। এক চোর অন্য চোরের চিকিৎসাতেও স্বাভাবিকভাবে ধোঁকাবাজিই করবে। একজন সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্র রিকশাচালকের বা একজন নিম্নমধ্যবিত্ত কেরানীর দামী হাসপাতালে যাবার ক্ষমতা থাকেনা।

এখানে সেবার আদান প্রদানের প্রশ্ন অবান্তর।
এখানে চুরির মালের আদানপ্রদানই মূল কথা।
এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে সবাই কি চোর? উত্তর পাঠকেরা দিবেন।
আপনি যদি সততার সাথে উপার্জন করে থাকেন তাহলে সৎ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখুন। বাচ্চা প্রসবের জন্য একজন অভিজ্ঞ দাইমাকে নিয়োগ দিন। অথবা অভিজ্ঞ নার্স অথবা অভিজ্ঞ সৎ ডাক্তার। একজন অভিজ্ঞ দাইমাকে নিয়োগ দিয়ে আপনি তাঁকে জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করছেন বিনিময়ে তার অভিজ্ঞতা থেকে সাহায্য ক্রয় করে আপনার শিশুকে সুস্থভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন। আপনার সৎ উপার্জন অন্য একজন সৎ মানুষের সৎ উপার্জনে এইভাবেই সাহায্য করতে পারে।

আপনার সৎ উপার্জন যদি এপোলো হাসপাতালের চোরদের পকেটে যায় তাহলে আপনি আপনার সৎ উপার্জণের সাথে প্রতারণা করছেন।

আমি যখন হাতে বেতন পাই তখন চিন্তা করি আমি এই বেতন কিভাবে খরচা করবো? মাথার উপরে ছাদ খাতে, শরীরের উপরে আবরণ খাতে, পেটের ভেতর খাদ্য খাতে, ও শরীর সুস্থ রাখার জন্য চিকিৎসার খাতে। আমি যেহেতু সৎভাবে উপার্জন করি তাই আমি সব সময় চোখ খোলা রাখি আমার প্রতিটি টাকা খরচা হোক সেইসব প্রতিষ্টানে যারা আমার মত অন্যসব পরিশ্রমী মানুষদের টিকে থাকার জন্য সাহায্য করছে।

৫ thoughts on “প্রতারণা চক্র – ৬ এপোলো হসপিটালস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *