দাড়ি-নামাজই কাল হল আশরাফের

পাবনা: জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আশরাফ আলী (২৭) একজন। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন ও দাড়ি রাখতেন। আর এটাই কাল হল তার। জঙ্গি সংশ্লিষ্টার অভিযোগে শূন্যহাতে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে।

আশরাফের বাড়ি পাবনা শহরের পৌর এলাকার রাধানগর মহল্লায়। ৮ বছর ধরে সিঙ্গাপুরে থাকা আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মানতে পারছেন না তার বৃদ্ধ মাসহ পরিবারের স্বজন ও এলাকাবাসী। তাদের দাবি, ছোটবেলা থেকে নিয়মিত নামাজ পড়তেন আশরাফ আলী। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও ছিল না তার সম্পৃক্ততা।

খোঁজ নিয়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপতকালে তারা জানান, পাবনা শহরের পৌর এলাকার রাধানগর নতুনপাড়া মহল্লার মৃত তোজাম্মেল হোসেনের ৫ মেয়ে ও ২ ছেলের মধ্যে সবার ছোট আশরাফ আলী। পাবনা আলিয়া মাদরাসায় ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে ২০০৮ সালের দিকে জীবিকার সন্ধানে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে।

সর্বশেষ ৩ মাসের ছুটিতে পাবনায় বাড়িতে আসেন ২০১৪ সালের শুরুতে। ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত আশরাফ আলীসহ ২৭ জন বাংলাদেশিকে গত বছরের শেষদিকে সম্প্রতি জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক করে সিঙ্গাপুর পুলিশ। এরপর তাদের মধ্যে ২৬ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায় সে দেশের সরকার। গণমাধ্যমে এসব সংবাদ ও ছবি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন আশরাফ আলীর স্বজনরা। কান্না থামছে না তার বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগম ও বোন আলেয়া পারভীনের।

আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে ওঠা ‘জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’র অভিযোগ মানতে নারাজ তারা। সন্তানকে বুকে ফিরে পাওয়ার দাবি তাদের।

শনিবার সকালে পাবনা শহরের রাধানগর মাঠপাড়া নতুনপাড়া মহল্লায় আশরাফ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের চিন্তায় কান্না থামছেনা মা আয়েশা খাতুনের। উদ্বিগ্ন তার বোন তাসলিমা খাতুন, আলেয়া খাতুন ও ভাই আব্দুল আলীম। আধা পাকা দু’টি ও টিনের একটি ঘরে বসবাস তাদের। ভাই আব্দুল আলীম শহরের এলাহী মার্কেটের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সুতার ব্যবসা করেন।

আলাপকালে বোন আলেয়া খাতুন জানান, আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করি না আমার ভাই আশরাফুল জঙ্গির সঙ্গে জড়িত। সিঙ্গাপুরে থাকার সময় আটকের চারদিন আগেও তারসঙ্গে কথা হয়েছে আমার। তার দাড়ি রাখা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সে বলেছে নামাজ পড়ি, দাড়ি রাখা সুন্নত। কোনো সমস্যা হবে না। সিঙ্গাপুর থেকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে আশরাফের এক সহকর্মী বন্ধু আমাদের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানায় তাকে পুলিশ আটক করার পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তারপর পত্রিকায় ও টিভিতে দেখে জানতে পারি। পরে আমার আরেক ভাই ঢাকায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছে।

আশরাফের মা আয়েশা খাতুন জানান, আমার ছেলেকে ছোটবেলা থেকে খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশতে দেইনি। নামাজ পড়তো নিয়মিত। সবাইকে নামাজ পড়ার জন্য বলতো। আমাদের পরিবারের কেউ কোনো দলের সঙ্গে কখনও জড়িত ছিল না। আমার ছেলে কাচের মতো পরিষ্কার। সে কোনো জঙ্গির সঙ্গে থাকতে পারে না। তোমরা আমরার ছেলেকে এনে দাও বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন আয়েশা খাতুন।

স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক আব্দুল মজিদ ও আব্দুল করিম জানান, ছোটবেলা থেকেই আশরাফ আলী সৎ ও নামাজি ছেলে হিসেবে পরিচিত। বিদেশে গিয়ে কীভাবে জঙ্গি হলো তা বুঝতে পারছেন না তারা। তার বাবা জীবিত থাকতে হজ করেছিলেন। নামাজি পরিবার হিসেবে তারা এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ওঠা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আরও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তাদের।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, ঢাকা ডিবির নির্দেশে আশরাফ আলীর বাড়িতে গিয়ে তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলে সে বিষয়গুলোও খোঁজ নেয়া হবে।’

৩ thoughts on “দাড়ি-নামাজই কাল হল আশরাফের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *