ইজতেমায় জুমার নামাজে লাখো মানুষের ঢল

কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশ গ্রহণে টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনে জুমার নামাজ আদায় করেন লাখ লাখ মুসল্লি। এতে ইজতেমা প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয়া ১৬ জেলার তাবলিগ জামাতের সাথী ছাড়াও ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেন।

দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে জুমার নামাজের খুৎবা শুরু হয় এবং জামাত শুরু হয় ১টা ৪০ মিনিটে, শেষ হয় ১টা ৪৮ মিনিটে। খুৎবা ও নামাজে ইমামতি করেন কাকরাইল মসজিদের তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরব্বি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের।

এদিকে, শুক্রবার ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে ইজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সব স্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ ও পলিথিন বিছিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং কামারপাড়া আশুলিয়া সড়কে বেশ কিছুক্ষণের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নামাজ শেষে একজনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ফজরের নামাজের পর ইমান-আমলের ওপর ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান আমবয়ানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার মূল কাজ শুরু হয়। আমবয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুরুব্বি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন।

ইজতেমায় আসা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্ধা জাহিদুল হক বাংলামেইলকে বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা শুরু করি। সেই সময় ওজু গোসেলের ব্যবস্থা ছিল তুরাগ নদীতে ও চাপকলে। এখন আধুনিকায়ন হওয়ায় সরকারিভাবে পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া পাকা লেট্রিন হয়েছে। যদি পানির কষ্ট হয় তাহলে ২০ টাকা দিয়ে বাইরে গিয়ে গোসল করে আসা যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় শীতের কষ্ট হয়নি।’

লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে আসা ঢাকার শেওড়াপাড়া এলাকার রাশেদুল হক বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জামাতে জুমার নামাজ আদায় করতে সকালে ঢাকা থেকে রওয়া দেই। আল্লাহর রহমতে ইজতেমার ময়দানেই জুমার নামাজ আদায় করেছি।’

গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মৃধা মঞ্জু বাংলামেইলকে বলেন, ‘জুমার নামাজ আদায় করতেই ইজতেমায় ময়দানে আসা।’ তিনি বলেন, ‘নামাজ শেষে মুরব্বীরে জন্য দোয়া করতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকিয়া আদায় করছি।’

জুমার নামাজের আগে ও পরে বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ : বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশি মেহমানরা মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরুব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।

দ্বিতীয় দফায় প্রায় সাত হাজার বিদেশি মুসল্লি : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে বিশ্বের অন্তত ১০০টি দেশের প্রায় সাত হাজার জন বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটেছে।

ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মাওলানা গিয়াস উদ্দিন জানান, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৯৬টি দেশের ৬ হাজার ৪০০ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। আগামী দুদিনে এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে আগত বিদেশি মেহমানের জন্য তাবু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে, মুসল্লিদের সুবিধার্থে গত বুধবার থেকেই বিআরটিসি বিভিন্ন রুটে ২২৮টি স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সার্ভিস অব্যাহত থাকবে বলে বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে। স্পেশাল বাসের মধ্যে তিনটি বাস বিদেশি মুসল্লিদের জন্য সংরক্ষিত থাকছে। আবদুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৯টি বাস, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৩টি, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ১৭টি, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া ইজতেমাস্থল ছয়টি, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া ইজতেমাস্থল পাঁচটি, গাবতলী-মহাখালী ভায়া ইজতেমাস্থল ৩৫টি, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া ইজতেমাস্থল ২৫টি, মতিঝিল-বাইপাইল ভায়া ইজতেমাস্থল আরো ২০টি বাস চলবে। এছাড়া ঢাকা-নরসিংদী ভায়া ইজতেমাস্থল ২০টি, চট্টগ্রাম রোড-সাভার রোড ২০টি এবং ঢাকা-কুমিল্লা রোডে চলবে আরো ১৫টি বাস। অন্যদিকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ২৮টি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে। পাশাপাশি সব আন্তনগর, মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত ২০টি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেডের সদস্যরা তুরাগ নদের নয়টি স্থানে (পন্টুন) ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছেন।

এবার বাংলাদেশকে চার ভাগে ভাগ করে প্রথমবারের মতো মোট ৩২টি জেলা নিয়ে ইজতেমার দুই পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ৮ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এতে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলা অংশ নিয়েছিল। চারদিন বিরতির পর ১৬ জেলার মুসল্লিদের নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্ব শরু হয়েছে।

আগামী বছরের বিশ্ব ইজতেমা বাকি ৩২ জেলা নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে মুসল্লিদের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ১৬টি জেলা অংশ নিয়েছে। এজন্য জেলাওয়ারী পুরো প্যান্ডেলকে ২৯টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। খিত্তা অনুয়ায়ী এসব জেলা হচ্ছে- ১নং থেকে ৭ নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৮নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৯ ও ১১ নং খিত্তায় জামালপুর, ১০ নং খিত্তায় ফরিদপুর, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় নেত্রকোনা, ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায় নরসিংদী, ১৬ ও ১৮ নং খিত্তায় কুমিল্লা, ১৭ নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ১৯ ও ২০ নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১ নং খিত্তায় ফেনী, ২২ নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ২৩ নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ২৪ ও ২৫ নং খিত্তায় বগুড়া, ২৬ ও ২৭ নং খিত্তায় খুলনা, ২৮ নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা এবং ২৯ নং খিত্তায় পিরোজপুর জেলার মুসুল্লিগণ অবস্থান নেবেন।

৫ thoughts on “ইজতেমায় জুমার নামাজে লাখো মানুষের ঢল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *