কেনো সৌদী আরব বিশ্বের ৩য় শান্তির দেশ?

শান্তিপূর্ণ দেশ হিসাবে সৌদী আরব বিশ্বের শান্তিপূর্ন দেশ তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করে আছে। কেমনে তা সম্ভব হয়েছে?
সৌদী আরব বহুজাতিক তেল কোম্পানীগুলোর বন্ধু বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বন্ধু। সৌদী বাদশাদের হুকুম ছাড়া সৌদী আরবের খেজুর গাছের পাতাও নড়াচড়া করেনা। সৌদী আরবের আশেপাশে্র দেশগুলো বিশেষ করে পালেস্টাইনে ইসরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সৌদী আরব কখনও সরাসরি বিরোধীতা করেনা। ইসরায়েলের সাথে সৌদী আরবের সব ধরনের লেনদেন চলে। সৌদী প্রশাসন পালেস্টাইনের পাশে থাকার পরিবর্তে ইসরায়েলের পাশেই থাকে আর পালেস্টাইনীদের মিসকিন হিসাবে দান খয়রাত করে দেয়। প্রথমে ইসরায়েল পালেস্টাইনী শিশুদের এতিম করে পরে সৌদী আরব এসে এই এতিমদের হাতে জাকাত ফেতরা ধরিয়ে দেয় ।

যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য ধনী দেশের নাগরিকদের জন্য সৌদী আরবে বিশেষ কিছু এলাকা আছে যেখানে তারা তাদের নিজ দেশের মত খোলামেলা জীবনযাপন করতে পারে। । বিশ্বের ধনীদেশগুলোসহ সৌদী বাদশাদের কোন আত্মীয়স্বজন যদি কোন রকমের অপরাধ করে তাহলে তাদের সেই অপরাধের জন্য হাত, পা বা গর্দান কেটে ফেলা হয়না। হাত, পা, গর্দান কেটে ফেলা হয় সেইসব দেশের নাগরিকদের যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের সম্পদ হিসাবে বিবেচনা না করে বোঝা হিসাবে বিবেচনা করে। সেইসব দেশের নাগরিকেরা অপরাধ না করলেও অনেক সময় নির্যাতিত হয় বা খুন হয় সৌদী নাগরিকের পাশবিকতার কারনে। আমি একবার লিখেছিলাম সৌদী আরবে কর্মরতা বিদেশী গৃহকর্মীদের উপরে ওকথ্য নির্যাতনের উপরে। এই নির্যাতন যদি কোন আমেরিকান বা বৃটীশ নাগরিকের উপরে করা হতো তাহলে সৌদী আরব মানবাধিকার লংঘনের জন্য ফেসে যেতো আর শান্তির দেশ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারতোনা।  শান্তি বজায় রাখার একমাত্র উপায় শক্তিশালী দেশের সাথে বন্ধুত্ব করে দুর্বল দেশের নাগরিকদের উপরে জুলুম করা।

সৌদী আরবের রাজকুমার ওসামা বিন লাদেন আফগানিস্তানে গেছিল আমেরিকার হয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কাছে ওসামার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ওসামা সেখানে তালেবান নেতা মোল্লা উমরের বোনকে বিয়ে করে সংসার পেতে বেশ আরামেই দিন কাটাচ্ছিল। তারপর ইরাক ও অন্যান্য দেশ থেকে তেল নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে  পরিবহন করার জন্য বহুজাতিক তেল কোম্পানী আফগানিস্তানের নীচে দিয়ে একটি ২ বিলিয়ন ডলারের পাইপ লাইনের কাজ করার প্রস্তাব দিলে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তা নাকোচ করে দেয়। ঘটনাটি ছিল এমন – ভারতের সাথে এনরনের চুক্তি ছিল ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পাওয়ার প্লান্টের । এই পাওয়ার প্লান্টের জন্য প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন করার কথা ছিল আফগানিস্তানের নীচে  পাইপ লাইন তৈরি করে সেখান দিয়ে। তালেবান সরকার আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কাছ থেকে আর্থিক ও অস্ত্র সহায়তা পেয়েছিল সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তখন মার্কিন তেল কোম্পানী  এনরন নিশ্চিন্ত ছিল যে যেহেতু তালেবানেরা মার্কিনের সৈন্য তাই এরা এই পাইপলাইনের কাজে বাধা দেবেনা । মার্কিন তেল কোম্পানী এনরনের সাথে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভাল সম্পর্ক ছিল।  মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট থেকে জানা যায় তালেবান প্রতিনিধিকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেওয়া হয় ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে এবং বলা হয় যদি পাইপলাইন তৈরিতে তারা সহযোগীতা করে তাহলে প্রতি কিউবিক ফুট গ্যাস ও তেল পরিবহনের জন্য তালেবান পাবে প্রচুর পরিমান খাজনা রাজস্ব।    মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রতিনিধিরা এক পর্যায়ে টেক্সাসে তালেবান প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলে – এই চুক্তিতে রাজী হলে তোমাদের সোনায় মুড়িয়ে দেওয়া হবে আর রাজী না হলে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হবে।

pipiline_deal

তালেবানরা রাজী হয়নি। তবু পাইপ লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৯/১১ এর পরে আফগানিস্তান আক্রমণ ও এর পরে মার্কিন  সৈন্যবাহিনীর অবস্থানের মধ্য দিয়ে এই পাইপ লাইন তৈরির কাজ সম্পন্ন হয় । কিছুদিন পরেই ইরাক আক্রমণ করে এবং ইরাক ও আফগানিস্তানের সকল প্রকারের খনিজ সম্পদের উপরে মার্কিন নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টিত হয়। ফলে সেদিন এনরন দেউলিয়া হলেও আফগানিস্তান, ইরাক, ও পাকিস্তানের সমগ্র প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টিত করতে পেরে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সৌদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাটস এর কাছে কৃতজ্ঞ। যংযুক্ত আরব আমিরাতস ও সৌদী আরবের সহায়তা ছাড়া ইরাক আক্রমণ ও পরিকল্পনা অনুসারে পুরা দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া সম্ভব হতোনা । ইরাক আক্রমন করার পরে সৌদী আরব ইরাকের রিফুজীদেরকে আশ্রয় দেয়নি। এরা সবাই তখন সিরিয়াতে আশ্রয় নেয়।  সিরিয়াতে ও ইরাকে ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাসী গ্রুপের দ্বারা সিরিয়ার মানুষকে যখন নিজ বাসভুমি থেকে বিতারিত করা হয় তখনও এইসব রিফুজীদের সৌদী আরবে আশ্রয় দেওয়া হয়নি।

আশের পাশের সব মুসলিম দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইসরায়েল বোমাবাজী করলেও সৌদী আরব সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়নি। নিজ দেশে তাই ওরা শান্তি বজায় রাখতে পেরেছে। শক্তির সাথে বন্ধুত্ব রেখে  আর দুর্বলের পাশে না থেকেই সম্ভব হয়েছে শান্তিপূর্ন রাস্ট্র হিসাবে তৃতীয় স্থান পাওয়া। মুসলিম হিসাবে গর্বিত হবার কোন অবকাশ রাখেনি সৌদী আরব। তার দরকারও নাই। ইসলামকে ওরা ওদের বিশাল জুব্বার পকেটে চালান করে দিয়েছে ।

মুসলিম উম্মা হলো একটি জাতী । সারা বিশ্বের মুসলমান এক ও অভিন্ন জাতী। যারা হজরত মোহাম্মদ সাঃ এর অনুসারী। সৌদী আরব মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের অনুসারী, পুজির অনুসারী তাই সৌদি আরব মুসলিম উম্মার পাশে এসে দাঁড়ায় নাই । সেজন্য সৌদী আরবের চতুর্পাশে মুসলমানের রক্তে লোহিত সাগর গাড় লাল হয়ে গেছে, বোমাতে বিদির্ন হয়েছে ব্যবিলন থেকে পালেস্টাইন – সৌদীর ক্রেনের নীচে হাজার হাজার হাজী ক্ষত বিক্ষত হয়েছে , সৌদী রাজকুমারের নিরাপত্তা রক্ষা করতে যেয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছে হাজার হাজার  হাজী তাতে সৌদির শান্তি কোনভাবেই বিঘ্নিত হয়নি। মার্কিন যুক্তরাস্ট্র থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও বিলাস ক্রয় করে সৌদী আরব অশান্তির মহাসাগরে শান্তির দেশ হিসাবে ভেসে থাকতে পেরেছে ।

৬ thoughts on “কেনো সৌদী আরব বিশ্বের ৩য় শান্তির দেশ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *