কে শহীদ কে গাজী?

“গত ১৫ ডিসেম্বর (২০১৫) মঙ্গলবার দুপুরে কোন প্রকার গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া সীতাকুন্ড থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক ইকবাল ও সাদা পোষাকদারি চার জন পুলিশ এসে আমার ছেলেকে ভাত খাওয়া অবস্থা থেকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় বাড়ি থেকে মাত্র দুইশ গজ দুরে নিয়ে গিয়ে কোমড়ে গুলি করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত এ এস আই ইকবাল সেখানে দাড়িয়ে থেকে কাউকে ওসমানের কাছে যেতে দেয়নি। এক পর্যায়ে ওসমানের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেলে এ এস আই ইকবাল ও তার সহযোগি চার জন সাদা পোষাকধারি পুলিশ চলে যায়”

বলে দাবি করেছে নিহতের বাবা আবু কাসেম।
হরতালের সময় নাশকতার মামলায় মিথ্যা অভিযোগে আমার ছেলেকে আসামী করে দীর্ঘ নয় মাস কারাগারে আটক রাখে। পরে কিছুদিন আগে জামিনে মুক্ত দেয়া হয়।

সীতাকুন্ড উপজেলার ৫ নং মুরাদপুর ইউনিয়ণের দক্ষিন রহমত নগর গ্রামের আবুল কাশেম মোল্লার ছেলে মোহাম্মদ ওসমান গনি নয় মাস জেল খেটে এক সপ্তাহ আগে ঘরে ফিরে আসেন। ১৭টি মামলার সব ক’টিতেই জামিন পান তিনি। কিন্তু ঘাতকেরা পিছু ছাড়েনা।  শেষ পর্যন্ত হত্যা করা হয় মোহাম্মদ ওসমান গনিকে। অপরাধ ? জামাতে ইসলামীর সদস্য হওয়া।

এক পত্রিকাতে লিখেছে ওসমান গনির বয়স ছিল ২৫ অন্য একটি পত্রিকাতে লিখেছে ওসমান গনির বয়স ছিল ৩০ আর একটি পত্রিকাতে লিখেছে ওসমান গনির বয়স ছিল ২৮। ধরে নিচ্ছি ওসমান গনির বয়স (২৫+৩০+২৮)/৩ = ২৮ বছর। বয়স যাই হোক, যে রাজনীতিই করুক না কেনো পুলিশের কোন অধিকার ছিলনা তাঁকে গুলি করে হত্যা করার । এই পুলিশ কি পাকিস্তান থেকে এসেছে? এই পুলিশের বিরুদ্ধে কি কোন মামলা হয়েছে? এই পুলিশেরা যারা ওসমান গনিকে হত্যা করেছে তারা কি এখনও চাকুরীতে বহাল আছে? যদি থাকে তাহলে কেনো আছে? খুনের দায়ে তো এই পুলিশের জেলে থাকার কথা । খুনের অপরাধে এই পুলিশের তো ফাঁসি হবার কথা। কেন হচ্ছেনা ? ইকবালের মত পুলিশেরা এইভাবে কি ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করবে একাত্তুরের খান সেনা ও তাদের সহযোগী রাজাকার আলবদরের মত? যদি তাই হয় তাহলে মোহাম্মদ ওসমান গনি কি একজন শহীদ?

আরবী শব্দ شهيد‎ শহীদের অর্থ হলো “সাক্ষী”।
শহীদ শব্দটি পবিত্র কোরাআন শরীফে বহুবার উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু শহীদ শব্দকে মাত্র একবারই martyr হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে মানুষ তার বিশ্বাসের জন্য আত্মত্যাগ করে তাকেই martyr বলা হয়।

বাংলাদেশে এখন পুলিশেরা সব ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করছে আর দেশের নেতা নেত্রীরা  ১৯৭১ সালে মৃতের সংখ্যা নিয়ে আলোচনাতে ব্যস্ত। ১৯৭১ সালে মৃত বুদ্ধিজীবিদের সন্তানেরা তাদের পিতারা সব “শহীদ” বলে দাবী করছে।  ২০১৫ সালে যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের কেনো হত্যা করা হচ্ছে? ১৯৭১ সালে যদি দেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে স্বাধিন দেশের পুলিশ স্বাধীন দেশের নাগরিকের ঘরে ঢুকে ভাতের থালাতে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে তাকে তাড়া করে বাইরে নিয়ে যেয়ে গুলি করে হত্যা করেনা।

বাংলাদেশ যদি স্বাধীন হয় তাহলে যেসব পুলিশ মোহাম্মদ ওসমান গনিকে হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করা হোক এবং বিচারে ফাঁসি দেওয়া হোক। যাতে এর পরে কোন পুলিশ আর স্বাধীন বাংলাদেশের কোন ওসমান গনিকে হত্যা না করে।

মোহাম্মদ ওসমান গনিকে নয় মাস আগে কেন গ্রেফতাঁর করে কয়েদ করা হয়েছিল?
নাশকতামুলক কাজ করার জন্য ।
নয় মাস পরে জামিনে কেন তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল?
তার মামলাগুলো ভুয়া ছিল সেজন্য।
তার বাসায় এসে যেসব পুলিশে তাকে হত্যা করেছে তারা কি নাশকতামূলক কাজ করেনি?
সেজন্য এইসব পুলিশের কি গ্রেফতার হওয়া উচিৎ নয়? ফাঁসি হওয়া উচিৎ নয়?
১৯৭১ সালের নয় মাস হানাদার বাহিনী বাসায় এসেই তো মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তাহলে কি বাংলাদেশ পুলিশ এখন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে?

বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না  হয়ে থাকে তাহলে তিন বা ত্রিশ লাখের সাথে যোগ করা হোক সকল মানুষের নাম যাদেরকে ১৯৭২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছে।  বাংলাদেশ সরকার প্রাইভেট লিমিটেড আগামী বছর মোট কতজন মোহাম্মদ ওসমান গনিকে হত্যা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাও জানাতে হবে।

জামাতে ইসলাম বা বিএনপি বা বিশদল যাকে “শহীদ” বলে “শহীদ” সে নয়
আওয়ামীলীগ ও সুশীল সমাজ যাকে “শহীদ” বলে “শহীদ” সে হয়

আওয়ামীলীগের পুলিশ, র‍্যাব, গুন্ডারা যাকে হত্যা করে “শহীদ” সে নয়। তবু আমরা ধরে নিচ্ছি মোহাম্মদ ওসমান গনি একজন শহীদ। জামাতে ইসলামের নেতারা যত সুবিধাবাদী, কাপুরুষ আর ধান্দাবাজ ও অতীতে আওয়ামীলীগের লেজুড়বৃত্তি করে থাকুক না কেনো নতুন প্রজন্মের জামাত শিবির নেতা কর্মীরা বিশ্বাস করে তারা ইসলামিক আন্দোলন করছেন। মোহাম্মদ ওসমান গনি মনে প্রানে বিশ্বাস করতেন তিনি ইসলামিক আন্দোলন করছেন এবং সেজন্যই তিনি গ্রেফতার হন এবং সেজন্যই তাঁকে হত্যা করা হয় সুতারাং তিনি একজন “শহীদ”

…চলবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *