ভাল থাকা মন্দ থাকাতে খাদ্যের ভূমিকা

খাদ্য যেমন আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তেমনি আমাদের অজান্তে খাদ্যই আমাদেরকে অসুস্থ করতে পারে বা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ যখন এক বা একাধিক সমস্যার সমাধান খুঁজে না পায় তখন খাবারের পরিমান বৃদ্ধি করে দেয়। বেশী খাবার খাওয়ার ফলে মানুষ মোটা হতে থাকে । শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যাবার ফলে নানারকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেয় । এক সমস্যা সমাধান করতে না পেরে আরো অনেক সমস্যার ভেতরে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। মহানবী হজরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন – ভরা পেট খাবার না খাওয়ার জন্য। কেনো এই কথা বলেছেন? কারণ পেটে কিছুটা জাগা রেখে দেওয়া দরকার যাতে খাবারগুলো ঠীকভাবে হজম হতে পারে। ঠাসাঠাসি খাবার খেলে খাবার হজম হতে সময় নেয় বা অসুবিধা হয়, ফলে গ্যাস হয় এবং পেট ফুলে যায়। তারপর ক্রমাগত বেশী বেশী খাবার খাওয়ার ফলে পেট ফুলতেই থাকে, গ্যাসেরা স্থায়ীভাবে পেটের ভেতরে ঠায় করে নেয় এবং ধীরে ধীরে পেটের চারিপাশের চামড়া থলথল করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। শরীরের গঠন নষ্ট হয়ে যায়।

Emotional Eating – আবেগ নিয়ন্ত্রন বা মনের অবস্থা বদলের সাথে খাবার খাওয়া কমিয়ে দেওয়া বা বৃদ্ধি করার প্রবণতা দেখা দেয়। অনেকেই এই সময়ে প্রচুর পরিমানে অস্বাস্থ্যকর খাবার খায় এবং স্বাস্থের ক্ষতি করে। ভাল থাকার জন্য শরীর ও মন দুটোকেই ভাল রাখা প্রয়োজন। মন খারাপ হলেও বেশী খাবার খাওয়ার ফলে মন ভাল হয়না বরং শরীরের গঠন নস্ট হয়ে মন আরো খারাপ হয়ে যায়। বাংলাদেশে কিছু ফাস্ট ফুডের (fast food chain/franchise) দোকান হয়েছে। এইসব দোকানে যেয়ে বার্গার খাওয়াটাকে অনেকেই অভিজাত্য বলেই মনে করে। ঢাকার বিলাসবহুল সুপার মার্কেট ফিউচার প্লেসে যেয়ে বার্গার খাচ্ছে এমন ছবি অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট করেন। আমি জানিনা এইসব বার্গারের ভেতরে কি আছে তবে যেহেতু এইগুলা সবই ফ্রাঞ্চাইজ তাই তাদের খাদ্য প্রসেসিং কানাডা বা আমেরিকা থেকে হয়না ভারতের গরু দিয়ে বাংলাদেশের বিফ বার্গার হয়। গরুর মাংস যেখান থেকেই আসুক না কেনো, দেশ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষ গরুর মাংসকে লোহিত মাংস বা রেড মিট বলা হয়। গরুরা সব ভারতের সীমান্ত পেড়িয়ে বাংলাদেশে ঢুকলেই মুসলমান হয়ে যায়না বা হালাল হয়ে যায়না। “হালাল” শব্দটা ব্যবহার করা হয় তখন যখন পশুকে ইসলামিক নিয়মে প্রসেস করা হয়। ইসলামিক নিয়মে প্রসেস করা মানে পশুর শরীর থেকে সব রক্ত ঝরিয়ে ফেলে তা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করা। ভারত থেকে যেসব গরু পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসে, জবাই করা হয়, মাংশ প্রসেস করে ম্যাকডোনাল্ডসে আনতে যে সময় লাগে সেই সময়ের ভেতরে পশুকে উঁচু করে টাঙ্গিয়ে রেখে তার দেহ থেকে সম্পুর্ন রক্ত ঝরিয়ে ফেলার সময় দেওয়া হয়না। এত সময় নেই কারু। এতে করে মুনাফাও নাই কারু। রক্তসহ বিফ বার্গার বানানো হয় আমেরিকাতে, কানাডাতে ও বাংলাদেশে। পশুর রক্ত মানুষের শরীরে গেলে মানুষের শরীরে ক্যানসার হয়।

২০১৫ সালে কানাডাতে আনুমানিক ক্যান্সারের নতুন রোগীর সংখ্যা ১৯৬,৯০০ জন। এর ভেতরে ৭৮,৩০০ জন রোগী মারা গেছে। এরা সবাই বিফ বার্গার খেয়ে যে মারা গেছে এমন কথা নেই। বিভিন্ন বয়সের রোগী বিভিন্ন কারণে মারা গেছে। কেউ ধূমপায়ী কেউ বা লোহিত মাংস খেয়ে কেউবা এইসব কিছু না খেয়েই ক্যানসার হয়ে মারা গেছেন। তবে লোহিত মাংস বা সিগারেট ক্যানসার হবার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে এবং ৯৮% ক্যানসার রোগীই লোহিত মাংস বা সিগারেট এর কারণে মারা গেছেন। ২% রোগীর ক্যানসার হবার কারণ জানা যায়নি।

কানাডা বা আমেরিকাতে ম্যাকডোনাল্ডস বা ফাস্ট ফুড চেইনে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে খাদ্য পাওয়া যায় ফলে যারা হতাশ, বেকার, মানসিকভাবে অসুস্থ বা যারা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা, কোন কারণে ডিপ্রেসড তারা বাজার হাট করে রান্না করে না খেয়ে ম্যাকডোনাল্ডসে যেয়ে কম দামে তৈরি খাবার খায় এবং অসুস্থ ও মোটা হয়ে যায়। কানাডা ও আমেরিকার বেশীর ভাগ দরিদ্র মানুষেরাই অসম্ভব মোটা । ভাজা, পোড়া, লোহিত মাংস এদের মোটা হতে সাহায্য করে। অথচ যে ডলার খরচা করে এরা ম্যাকডোনাল্ডস খায় সেই একই পরিমান ডলার খরচা করে এরা স্বাস্থ্যসন্মত খাবার কিনে খেতে পারে যেমন সব্জি, ফল, নুডলস, রুটি ইত্যাদির দাম বেশী না। চিনাদের দোকানে কম দামে সব ধরণের ফল ও সব্জি কিনতে পাওয়া যায়।

প্রতিদিন দেহের জন্যা দরকার কার্বোহাইড্রেট (carbohydrate)
Carbohydrate বা কার্বোহাইড্রেট হলো অক্সিজেন, কার্বন, হাইড্রোজেন, চিনি, স্টার্চ ও ফাইবার।

চিনি = মধু, আম, কলা।
স্টার্চ = মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, মটরসুটি
ফাইবার = ডাটাশাক, ব্রকলি, মোটা ঝাল

আমাদের শরীর ৭০% পানি দিয়ে তৈরি। আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করতে হবে প্রতিদিন তাতে শরীরের ব্যাথা কম হবে। অথবা শরীরের ওজন যদি ১০০ আউন্স হয় তাহলে ২৪ ঘন্টায় তাঁকে ৫০ আউন্স পানি পান করতে হবে। কোকাকোলা ও কফি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। যার শরীরের ওজন ২০০ পাউন্ড সে যদি প্রতিদিন ৬০ মিনিট অর্থাৎ এক ঘন্টা ব্যায়াম করে তাহলে তাকে ১২০ আউন্স পানি পান করতে হবে। আমাদের শরীর ইঞ্জিনের মত, দিবারাত্র আমাদের শরীর থেকে পানি উবে যেয়ে মরুভুমির মত শুখিয়ে যায়।

প্রতিদিন যা কিছু কম খাবেন হলোঃ
১ – লোহিত মাংস (কম খাবেন)
২ – চীজ (কম খাবেন)
৩ – সাদা রুটি বা গমের রুটি (কম খাবেন)
৪ – চিনি (কম খাবেন)
৫ – ভাজা, পোড়া, ম্যাকডোনাল্ডস (খাবেন না একেবারেই)
৬ – কোকাকোলা, পেপ্সি, যেকোন বাজারের এনার্জী ড্রিঙ্কস (পান করবেন না একেবারেই)
৭ – সিগারেট, বিড়ি, মদ, গাঞ্জা, ফেন্সিডিল, ইয়াবা (একেবারেই নিষিদ্ধ)

যা কিছু খাবেন
সব্জি, আলু, ফল, ও পান করবেন প্রচুর পরিমানে পানি

সব্জি (লাল, কমলা ও গাঢ় সবুজ), আলু ও ফলে যেহেতু চিনি আছে তাই চিনি আলাদা করে খাওয়া লাগেনা।
ডাল – বাজারে নানা রকমের ডাল পাওয়া যায় ।
মটরসুটি, সীম, মিস্টি আলু
সকালে নাস্তায় কলা, আম, দই খাওয়া যেতে পারে
দুপুরে সালাদ খাওয়া যেতে পারে, মিস্টি আলু, ঢেঁড়স, সব্জি, কুমড়ার স্যুপ খাওয়া যেতে পারে
প্রতিদিন এক কাপ পাতা সব্জি, কাঁচা খেলে ভাল, কাঁচা ফল, এক স্লাইস গমের রুটি, আধা কাপ ভাত, আধা কাপ নুডলস, একটা ডিম (অবশ্যই খেতে হবে), এক আউন্স পশুর মাংস (মুরগী, গরু, ছাগল) যা রক্ত ফেলে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে (রক্ত ফেলে দেবার নিয়ম হলো মাংস বাসায় এনে রাতে বাইরে রেখে দিতে হবে – সকালে দেখা যাবে মাংস থেকে রক্ত ঝরে গেছে)।

বেঁচে যখন আছেন তখন যত দিন বাচেন ভালভাবেই বাচেন। শরীর যদি ভাল থাকে তাহলে সকল বাঁধা বিপত্তি আর সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শরীর যদি খারাপ থাকে থালে এই শরীর নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে আর অন্য সমস্যা সমাধানের উপায় মাথায় আসবেনা। বাংলাদেশে যারা সম্পদশালী তাদের ভেতরে ৯৮% মানুষ মিথ্যাচার, প্রতারণা, চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি করে এইসব সম্পদের মালিক হয়েছে। এরা ম্যাকডোনাল্ডসে যেয়ে লোহিত মাংসের বিফ বার্গার খেয়ে বা প্রতিদিন গরুর মাংস খেয়ে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমিয়ে যদি স্ট্রোক করে বা ক্যানসারে আক্রান্ত হয় তাহলে চিকিৎসার জন্য তারা ভারত চলে যেতে পারবে। মধ্যবিত্ত যারা বিভিন্ন চোরের ব্যবসা প্রতিষ্টানে কর্মজীবি তারাও ম্যাকডোনাল্ডসে যেয়ে বা ঘরে বসে লোহিত মাংশ ভক্ষণ করে থাকে তবে তারা যখন অসুস্থ হয় তখন তাদের দিন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া জীবনে চিকিৎসার জন্য অর্থ যোগার করা কঠিন হয়ে যায়। প্রবাসে কস্ট করে ঝাড়ুদারের কাজ করে দেশে টাকা পাঠিয়ে যারা বউ বাচ্চাদের ম্যাকডোনাল্ডস খাওয়াতে নিয়া যায় তারা নির্বোধ। অনেক প্রবাসী শ্রমিক যারা ১৮-২০ বছর বয়সে দেশে বিয়ে করে এসে প্রবাসে আছেন। তারা দেশে টাকা পাঠান, মাবাবাভাইবোনবউয়ের সব আশা প্রত্যাশা পূরণ করেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে শুধু মাত্র টাকা উপার্জন করার জন্য জীবনের সব চাইতে সুন্দর সময় একাকী কাটিয়ে দেন তারা যখন ফিরে আসেন তখন হাতে তেমন সঞ্চয় থাকেনা যা দিয়ে দেশেই কিছু একটা করতে পারবেন। সঞ্চয় না থাকার কারণ হলো অযথা খরচা। পরিবার পরিজনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অবিবেচনা। এরা ক্যান্সারে মরার চাইতে বেশীরভাগ সময়ে দেখা যায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিষ্টুরতা ও অবিবেচনার কারণে মারা যান।

ফিরে আসি বাংলাদেশে। আশা করি বাংলাদেশের মাটি এখনও আগের মত উর্বর আছে। যেকোন ফল বা ফুলের গাছ রাতারাতি বড় হয়ে যায়। সবজীর বাগান করা যায়। উঠোনে, ছাদে, ব্যালকনিতে বা জানালার কাছে। প্রবাসে যারা আছেন তারা সঞ্চয় করতে পারেন, দেশে এসে গরু বা মুরগীর ফার্ম দিতে পারেন, মাছ, ফল, সব্জির চাষ করতে পারেন, সবাইকে যে ফিউচার পার্কের মত বিশাল সুপারস্টোরের মালিক হতে হবে এমন কোন কথা নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *