আব্দুল্লাহ-আল-মিজান
মা,বাবা,ভাই,বোন, স্ত্রী,সন্তানের এক মুটো সুখের আশায় প্রবাসে পা রাখতে হয় হাজারো মায়ের আদরের সন্তানকে,
-যেই ছেলে দেশে থাকতে দিনের ১০টায় ঘুম থেকে উঠেনা, সেই ছেলেকে আজ ঘুম থেকে উঠতে হয় সকাল ৫টায়,
-যেই ছেলে বাহির থেকে ঘরে ফিরে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করতো আজ তাকে নিজের রান্না নিজেকেই করে চাকরিতে যেতে হয়,
-এমন অনেকটা দুর্ভাগ্য হয়, যখন দুপুরের খাবারটা প্যাকেট করে চাকরিতে রওয়ানা দেয়া হয় মাঝ পথে খাবারের পলিথিনটা ছিড়ে রাস্তায় পড়ে যায়,
-হয়তো এমন ১টা কস্টের কথা প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করার কোন প্রয়োজন মনে করেনা সেই অসহায় প্রবাস ভাইয়েরা,
অতচ: পরিবারের সামান্য একটু ব্যতিক্রম হলে ওই প্রবাসিকে জানানো যেনো পরিবারের লোকেরা সেটাকে ফরয কাজ বলে মনে করেন,
,
পরিবারের লোকেরা মনে করেন সে হয়তো বিদেশ গিয়ে অনেক টাকার মালিক হয়ে অনেক সুখে রয়েছে,
কিন্তু সেটা ভুল ধারনা,
সে টাকা ইনকাম করতে গিয়েছে উনার সুখের জন্য নয়,
মা, বাবা, ভাই, বোন যাতে ৩বেলা পেট পুরে খেতে পারে এই আশায়,
-হয়তো ভিসা শেষ, ভিসা লাগানোর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন,
বাড়িতে কাউকে এই বিষয়ে জানাই না প্রিয়জনেরা দুশ্চিন্তা করবে,
তাই ১মাস বাড়িতে টাকা পাঠায় না, ভিসা লাগাবে বলে,
কিন্তু পরিবারের লোকেরা এই বিষয় টা কে অনেক সিরিয়াসলি মনে করেন,
তারা মনে করে ছেলেটা বাড়ির খোজ খবর নেয়না,
তার পর যখন তার কাছে কল করে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে বকা ঝকা করা হয় তখন ওই অসহায় ছেলেটা কিছু না বলেই নিরবে শুনে থাকে, আর চোখ বেয়ে অঝোরে ঝরতে থাকে কস্টের অশ্রু,
মুখ ফোটে বলতে পারেনা তার জিবনের করুন কস্টের ইতিহাস,
-রমযান মাস চলছে,
রোযা প্রায় শেষের দিকে, বাড়ি থেকে ১০-১৫ মিনিট পর পর মিস কল আসছে, কল ব্যাক করার পর প্রথমে জেনে নেয় দেশের সবাই কেমন আছে,
,
অতঃপর: স্ত্রীর সাথে ফোনালাপ।
স্মামীর কাছে জিজ্ঞাসা করেনা ঈদের জন্য জামা নিছে কিনা, কত টাকা দিয়ে জামা নিছে,
বরং উল্টা তার কাছে বলে আমি শাড়ী নিছি ১হাজার টাকা দামের, আরো কিছু টাকা পাঠাতে পারলেনা? বর্তমান যুগে ১হাজার টাকার শাড়ীই কি কোন কাজে আসে?
কিন্তু অপর প্রান্তের মানুষ টার কাছেই যেনো এই ওই ১হাজার টাকা টা ১লক্ষ টাকার সমান, কেননা সেইতো জানে ওই টাকাটা কত কষ্টের বিনিময়ে কামানো হয়েছে,,
,
সন্তানের সাথে ফোনালাপ,
,
মেয়ে: আব্বু কেমন আছো?
বাবা: ভাল মামনি, তোমরা কেমন আছ? জামা কাপড় নিছো?
মেয়ে: হ্যা আব্বু! তুমি নিছো?
বাবা: হুম, আমি শপিং মলে আসছি, এইতো এখন নিবো (ছোট্ট মেয়েটার একটু হাসি শোনার জন্য মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়ে এই সামান্য মিথ্যা টুকু বলতেই হল বাবাকে)
,
মায়ের সাথে ফোনালাপ হয়, তখন ছেলে জিজ্ঞেস করে মা কালকেই তো ঈদ!
তোমাদের কেনাকাটা হয়েছে?
মা: হ্যা’রে বাবা আমাদের কেনাকাটা হয়েছে, তুই কি কিনলি?
ছেলে: (কান্নারত কন্ঠে) আমি ১টি পাঞ্জাবি কিনছি, আরেকটি প্যান্ট কিনছি,
,
(মায়ের সাথে বড় ধরনের মিথ্যা বলে প্রবাসীরা, নতুন জামা নয়,ছেলের কাজের পোষাক’ই যেন ঈদের নুন্যতম নতুন কাপড়,
তবু মায়ের কাছে কিছুই বলেনা সেই প্রবাস ভাইয়েরা,)
মা: বাবা কানতেছিস ক্যান?
ছেলে: মা তোমাদের ছেড়ে ঈদ কাটাতে হচ্ছে আজ ২টি বছর ধরে, তোমার হাতের পাক করা সেই পায়েস এখনো যেন আমার জিব্বায় লেগে আছে,
ইচ্ছে হয় ঈদের জামাত পড়ে তোমার কোলে মাথা টা রেখে ঈদের সমস্ত আনন্দ আমি একাই উপভোগ করবো,
কিন্তু সেই ভাবনা ২বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে, এখন হয়তো ভাবনা টা ভাবনাতেই থেকে যাবে, কখনো সেটা পুরণ করার ভাগ্যটা আমার কপালে জুটবে না,
,
অবশেষে কস্ট আর সহ্য করতে না পেরে ফোনটা কেটে দেয়,
,
রাত পোহালেই যেন ঈদের দিন, বাড়ির সবাই ঈদের আনন্দ ভোগ করতে ব্যস্ততায় ব্যাকুল,
,
কিন্তু যিনি প্রবাসে ঈদ করছেন তার কাছে যেন এই দিন খুশির দিন নয়, এই দিন টা প্রবাস জীবনের অনেক বড় কস্টের দিন, কেননা বাড়িতে থাকা কালীন সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হত, প্রিয়জনের বাড়ি গিয়ে অনেক ধরনের পিঠা, নাস্তা, সেমাই, ইত্যাদি ইত্যাদি খাওয়া হত,
কিন্তু প্রবাস ভাইদের এই দিন টা অনেক ভিন্ন ধরনের,
নতুন খাবার তো দুরের কথা! ঈদের জামাত পড়ে চলে যেতে হয় ডিউটিতে,
অতচ ঈদের দিন!
তবুও অনেক কোম্পানির লোকদের এই দিনেও কাজে চলে যেতে হয়।
,
উপরের কথা গুলো কোন সাজানো গল্প নয়,
১জন প্রবাসী কিভাবে জীবন যুদ্ধ করে তার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত কথা,
আপনি হয়ত দেশে থেকে প্রবাসির কস্ট বুজতে পারবেন না, তারা কিভাবে কস্টে জীবন যাপন করে তা আপনার কল্পনার বাইরে, নিজের চোখে না দেখলে আপনি বিশ্বাস করবেন না,
,
আপনাদের তো রান্না ঘর আলাদা,
কিন্তু প্রবাসিরা ১রুমে থেকে ১রুমেই রান্না করে খেয়ে কাজে যায়
,
কাজে যখন যায় তখন আল্লাহ হাফেয বলে অনুপ্রেরনা দেওয়ার মত কোন প্রিয়জন নেই, যখন কাজ থেকে ফিরে আসে তখন আদর করে খানা খাওয়ার জন্য ডাকার মত মায়ের মত কেউ থাকেনা,
,
তারপর যখন কাজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে বাড়িতে ফোন করা হয়, তখন দুনিয়ার সব অযথা ফালতু কথা গুলো শোনানো হয় তাকে, হয়তো একটু বিরক্তি লাগলেও কিছুই বলেনা, নিরবেই শুনে যায়,,
কিন্তু নিজের ব্যথা বেদনা, সুখ দুঃখের ১টি কথাও শেয়ার করেনা আপন জনের সাথে,
রাতে কাদতে কাদতে বালিশ টা ভিজে যায়, তবু মুখে একটু হাসি নিয়েই প্রবাস জীবন অতিক্রম করে হাজারো মায়ের হাজারো সোনার সন্তানেরা.।
Kazi Mahbub liked this on Facebook.
হোসাইন সজল liked this on Facebook.
Asif Siddique liked this on Facebook.
Shagor Khan liked this on Facebook.
Golam Hossain liked this on Facebook.
Anwarul Hassan liked this on Facebook.
Alamgir Raj liked this on Facebook.
Rajib Khan liked this on Facebook.
Babul Khan liked this on Facebook.