নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন পৌরসভা। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণা ও বাসাবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটছে। হামলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রচারণাবহরেও। গতকালও হামলা এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন পৌরসভায়। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপির এক নেতা নিহত হয়েছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। কুমিল্লায় হামলা হয়েছে সাবেক চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুকের প্রচার বহরে। জামালপুর ও সরিষাবাড়ীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল রাতে মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী বাদশা মিয়ার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে বাসায় ফেরার পথে ৪নং ওয়ার্ডে হামলায় নিহত হন উপজেলা কৃষকদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম (৪০)।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, কলাপাড়ায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়ি বহরের ওপর হামলা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার সময় কলাপাড়া পৌর শহরের রহমতপুর এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় আলতাফ হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার চৌধুরী, পটুয়াখালী সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, পটুয়াখালী জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান সিকদার, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক খান, যুগ্ম সম্পাদক মো. আউয়াল আকন আহত হয়েছেন। এদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, গাড়িবহরের ৬টি মাইক্রোবাস, ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।
হামলাকারীরা মাইক্রোবাসের সামনের কাঁচ ভেঙে ফেলে। আলতাফ হোসেন চৌধুরী এ হামলার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘সরকার বলেছিল সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তার পক্ষে দলের নেতৃবৃন্দ সমানভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবে। কিন্তু যেভাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হলো, তাতে মনে হয়েছে পৌর নির্বাচন হবে শুধুই প্রহসনমূলক। তিনি এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের সমর্থকদের দায়ী করেন। পৌরসভা নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসী হামলায় নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ হবে কিনা তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।
গাড়িবহরে থাকা পটুয়াখালী জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান রুমী বলেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গাড়িবহর যখন শহরের নতুন বাজার এলাকার দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছিল, তখন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মোরসালীন আহম্মেদ ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আলম টিটোর নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন সন্ত্রাসী তার গাড়িবহরে ব্যারিকেড দেয় এবং লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবিএম মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক মঞ্জুরুল আলমসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিল। কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের পক্ষে গণসংযোগ এবং দলের নতুন বাজার কার্যালয়ে নির্বাচন উপলক্ষে নির্ধারিত কর্মিসভায় অংশগ্রহণের জন্য আলতাফ হোসেন চৌধুরী কলাপাড়ায় আসেন। এরপর তার কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল আজিজ মুসুল্লির পক্ষে গণসংযোগে অংশ নেয়ার কথা ছিল।
ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সহ-সভাপতি মোরসালীন আহম্মেদের বক্তব্য নেয়ার জন্য চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আলম টিটো বলেন, আমি কেন এরকম সন্ত্রাসী কাজ করব। যখন হামলা হয়, তখন আমি বাসায় ছিলাম। পরে আমি এসে নেতৃবৃন্দকে উদ্ধার করেছি।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদার এ ঘটনার জন্য দুপুর সাড়ে ১২টায় কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলতাফ হোসেন চৌধুরীর নিজ জেলার রাজনীতিতে দলের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে। আমি মনে করি এ হামলা দলের গ্রুপিংয়ের প্রতিফলন। তবে আমার কোনো সমর্থক এর সঙ্গে জড়িত নয়। তিনিও পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ হামলার সঙ্গে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। হামলাকারীদের কেউ কেউ আপনার পাশে এখনও অবস্থান করছে বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের কাছে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে পারেননি।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. আজিজুর রহমান বলেন, আমি খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাও ছিল। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার চান্দিনা পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহ্ মো. আলমগীর খানের পক্ষে সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুকের গণসংযোগে হামলা করে আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের তুলাতলী এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কোনো সমস্যা না হলেও এক সাংবাদিকসহ সমর্থিত কয়েকজন আহত হয়। আহত জাকির চান্দিনার সাপ্তাহিক মুক্তির লড়াই প্রতিনিধি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তুলাতলী কমিশনার মার্কেটের সামনে বিএনপি জাতীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদিন ফারুক চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলামসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করার সময় ৫-৬টি মোটরসাইকেল যোগে কয়েকজন যুবক এসে হামলার চেষ্টা করে। এসময় সাংবাদিক জাকির ছবি তুলতে গেলে তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় জয়নুল আবেদিন ফারুক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিয়া মোহাম্মদ কেয়াম উদ্দিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও চান্দিনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। ততক্ষণে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিয়া মোহাম্মদ কেয়াম উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, জামালপুরে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শহরের মেথরপট্টি মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা এই হামলা চালায়। এ সময় ২ জন আহত হয়। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন অভিযোগ করে বলেন, ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে তার লোকজন শহরের মেথরপট্টি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলো। এ সময় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনির সমর্থকরা ৫/৬টি মোটরসাইকেলযোগে এসে অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরমান বাদশা ও বিএনপি কর্মী আনোয়ার আহত হয়। পরে আরমান বাদশাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তার সমর্থকদের ওপর আ.লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর লোকজন হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এব্যাপারে সদর থানার ওসি মো. আবদুল আওয়াল বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্র্থীর ওপর হামলার ঘটনাটি আমাকে ফোনে জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মাঝে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের ১২ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর পেয়ে সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি সোমবার রাতে পৌরসভার চর বাঙালিপাড়া বাঁশতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসী বাঙালি পাড়ার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগের আব্দুল মালেকের সঙ্গে একই গ্রামের অপর বিএনপি সমর্থক প্রার্থী সোলায়মান হোসেন (বাচ্চু) গাজীর প্রতীকের সঙ্গে একই ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের সমর্থকদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া ও মারপিটে এবং পাটকেল নিক্ষেপে সোলায়মান, আব্দুল মালেক, পৌর ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল বারেক, সমর্থক হাসিনা বেগম, ফাতেমা বেওয়া, বেলাল হোসেন, খলিল, শাহ আলম আহত হয়। আহতদের সরিষাবাড়ী হাসপাতাল ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ বিলাল উদ্দিন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবিনিময় ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩টি পৃথক মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শংকর তালুকদার বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১ থেকে দেড়’শ জনকে আসামি করে প্রথমে একটি পরে শ্রমিক লীগ নেতা ও ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল হালিম ও আলকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বাদী হয়ে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। তিনটি মামলায় ২৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলাগুলোর প্রধান আসামি হিসেবে রয়েছেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য ইমাম হোসেন পাটোয়ারী। এদিকে, এ ঘটনায় সোমবার রাতে পৌর এলাকার শান্দিশকরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সুত্র- মানব জমিন
Sintu Ma liked this on Facebook.
Anowar Dhali liked this on Facebook.
Moin Ahmed liked this on Facebook.
Tania Chowdhury liked this on Facebook.
মাসুম ফোরকান মাসুম liked this on Facebook.
MD Uzzol Baruniya liked this on Facebook.