ফিরে দেখি ফেলে আসা ২০১৫

এ মাসে নতুন প্রবাসনিউজ২৪ এক বছর পূর্ণ করে আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো। বিগত এক বছরে প্রবাসনিউজ২৪, এই অনলাইন সংবাদপত্রে বহু পাঠকের সমাগম হয়েছে। সাথে থাকার জন্য আমাদের সকল পাঠকের কাছে প্রবাসনিউজ২৪ এর সকল সদস্য কৃতজ্ঞ। নতুন বছরকে বরণ করে নেবার আগে ফিরে দেখি ফেলে আসা ২০১৫। গত বছরটি ছিল একটি দুর্ভাগ্যজনক বছর। তবু আমরা আশা করবো আগামী বছরটি আমাদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসবে। বিগত বছরের ভুল ত্রুটিগুলোকে সামনে রেখে, কারণ ও ফলাফলগুলোকে পর্যালোচনা করে নতুন বছরে আমরা সাবধান হবো এবং ভাল থাকবো।

জীবনে সমস্যা থাকবে। সমস্যার মোকাবেলা ও সমস্যার সমাধান করাই হলো জীবনের বিনোদন। যার জীবনে সমস্যা নেই সে নিজেই একটি সমস্যা। যার জীবনে সমস্যা নেই তার কোন জীবন নেই। সমস্যা অনেক প্রকার। সকল সমস্যাকে দুই ভাগে ভাগ করতে হবে।

এক – যে সমস্যা সমাধানের উপায় ও নিয়ন্ত্রন নিজের আওতার ভেতর থাকে।
দুই – যে সমস্যা সমাধানের উপায় ও নিয়ন্ত্রন নিজের আওতার বাইরে থাকে।

দ্বিতীয় সমস্যা সমাধানের উপায় সমাজের সবার উপরে থাকে তাই এটাকে নিয়ন্ত্রন করতে গেলে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, সমস্যাগুলোকে সামনে তুলে ধরতে হবে এবং সন্মিলিত প্রচেষ্টায় তার সমাধান করতে হবে। এখন ফিরে দেখি ফেলে আসা ২০১৫

জানুয়ারী ২০১৫ — বিবিসি নিউজ ১৫-১-২০১৫ বিএনপীর অবরোধ – মৃতের সংখ্যা ২৩ । গাজীপুরে হরতালের সময় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসের ভেতরে আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘুমন্ত চালকের সহকারী তোফাজ্জেল হোসেন মারা যান। পেট্রোল বোমাতে দগ্ধ আরো একজন গাড়ীর চালক মারা যান । তিনি দগ্ধ হয়েছিলেন ছয় দিন আগে। ২৩ জন মৃতের মধ্য ১৮জনই সাধারণ মানুষ। বিএনপীর এই অবরোধ ছিল সুষ্ট নির্বাচনের দাবীতে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী যে নির্বাচন হয় সেটা ছিল ক্ষমতাসীন সরকারের ঘরোয়া/পারিবারিক নির্বাচন যেখানে অংশগ্রহনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া আর কেউ ভোট দিতে যাননি। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য এখন আর জনগনের দরকার হয়না। প্রার্থীরা নিজেরা নিজেদের নির্বাচিত করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে বিএনপি অবরোধ ডাকে। এই অবরোধ ডাকার ফলে দরিদ্র রিকশাচালক, সিএনজী চালক, বাসের হেল্পার, ড্রাইভার, মজুর, পথচারী মানুষেরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই সমস্যার উপরে সাধারণ মানুষের কোন নিয়ন্ত্রন নেই। পেটের জন্য এরা বাইরে যায় এবং সরকার বা বিরোধীদলের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মসূচী বা কর্মকান্ডের কারণে পঙ্গু হয় বা মারা যায়।

ফেব্রুয়ারী ২০১৫ — সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৪ ঘন্টায় দশ শিশুসহ ৩২ জনের মৃত্যু সবাইকে শংকিত করেছে। চিকিৎসকদের অবহেলা ও হাঁসপাতালের অব্যবস্থাপনার কারনেই ১০ই জানুয়ারী থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮৩২ জন, তাদের ভেতরে ৫৮ জন নবযাতক ও ৪৫ জন শিশু রয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একই সময়ে ৬৯৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের ভেতর ২৪৪ জন শিশু । গড়ে প্রতিদিন এই হাসপাতালে ২৩ জন বয়স্ক ও ৮ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই এক মাসে চট্রগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৮৬৬ জনের। তাদের মধ্য শিশু রয়েছে ১৭৭ জন। প্রতিদিন গড়ে ২৮জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে এর মধ্য শিশু রয়েছে ৬ জন। বরিশালে সেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত এক মাসে ৩৯৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্য শিশু ছিল ১২৩ জন। বেসরকারী হাসপাতালে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত রোগীরা চিকিৎসা করায় অন্যদিকে সরকারী হাসপাতালে বেডের চাইতে অনেক বেশী রোগী আসে। বেশীরভাগ রোগীর ওষুধ কেনার সামর্থ নেই। সরকারী হাসপাতালগুলোতে রয়েছে চিকিৎসকের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনা। দৈনিক যুগান্তর একটি প্রতিবেদন করেছে – দেশে মোট রোগীর সংখ্যা দুই কোটি। ঘন্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

মার্চ ২০১৫ — মার্চ মাসে সংসদে একটি রিপোর্টে জানানো হয় যে গত ৫ বছরে বিদেশে কর্মরতদের মধ্যে ১১ হাজার ৬৮১ জনের স্বাভাবিক ও ৫ হাজার ১০৮ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। গড়ে বছরে ২ হাজার ৩৩ জনের স্বাভাবিক ও ১ হাজার ২২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে ১৩ হাজার ৪১৪ জন কর্মীর লাশ দেশে আনা হয়েছে। প্রবাসে অস্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণের জন্য মোট ১ হাজার ৩০৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬৮টি ক্ষতিপূরণ মামলা অমীমাংসিত রয়েছে এবং ৩৪০টি মামলা মীমাংসিত হয়েছে। সংসদে দেয়া এক তালিকা থেকে দেখা যায়, গত ৫ বছরে সৌদি আরবে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। দেশটিতে ৫ বছরে ৪ হাজার ৭২৪ জন কর্মীর স্বাভাবিক ও ২ হাজার ৩৯৬ জন কর্মীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে মোট মারা যাওয়া ৭ হাজার ১২০ জনের মধ্যে ৩ হাজার ৮৮৩ জনের লাশ দেশে আনা হয়েছে।

এপ্রিল ২০১৫ — মহা ধুমধামে বাংলাদেশে স্বাগত জানানো হয় বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আসে কাল বৈশাখী। রাজনৈতিক অবরোধের সময় যেমন দরিদ্র সাধারণ মানুষেরা মারা যায়, চিকিৎসার জন্য টাকা যোগার করতে না পেরে অবহেলায় যেমন হাসপাতালগুলোতে দরিদ্র মাবাবার শিশুরা মরে যায় ঠিক তেমনি কাল বৈশাখী ছিনিয়ে নিয়ে যায় বহু দরিদ্র মানুষের মাথার উপরে ছাওনী ও জীবন। ২৬শে এপ্রিল নেপালের রাজধানী কাটমুন্ডুতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে পাশাপাশি ৫টি দেশ। নেপালের লামজুংয়ে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্প হয়। বারো ঘন্টার ভেতরে প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

মে ২০১৫ — ২০১৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যায় বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস বাংলাদেশের শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স। অন্যদিকে বিগত দশ বছরে এসেছে প্রায় বিশ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের লাশ। এই লাশের দায়িত্ব কেউ নেয়নি। বাংলাদেশে অভাবের তারনায় বাংলাদেশীরা সহজেই প্রতারক মানবপাচারকারী দালালের খপ্পড়ে পা দেয় এবং পাড়ি জমায় অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তারপর একদিন ফিরে আসে লাশ হয়ে। মানবপাচারকারী দালালেরা গাড়িবাড়ি বানিয়ে ভোল পালটে ফ্যালে ততদিনে যতদিনে থাইল্যান্ডের লুকানো কবরে জ্যান্ত বাংলাদেশীরা লুকিয়ে থেকে থেকে একদিন সত্যই লাশ হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়।

৩১শে মে ছিল বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা ধূমপানকে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ ২৫টি প্রাণঘাতী রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্যে এক মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, বাংলাদেশে যে হারে ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ছে তা রোধ করতে ব্যর্থ হলে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সার মহামারী আকার ধারণ করবে। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যধিও ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে। এক পরিষংখ্যানে জানা যায়, তামাক সেবনের ফলে পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ৮ জন লোক মারা যায়। অর্থাৎ শুধু ধূমপানজনিত কারণে প্রতি বছর ৪০ লাখ মানুষ মারা যায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ধূমপানজনিত মৃত্যুহার মোট মৃত্যুর ১৬ ভাগ। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫৫ ভাগ কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবন করে থাকে। তারা নানা ঘাতকব্যাধিতেও আক্রান্ত হয়।

জুন ২০১৫ –১৬ই জুন মিরপুরের পিরেরবাগে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একটি বাসাতে ছয়জন ঢুকে একজন কলেজছাত্রীকে ধর্ষন করে। এ ঘটনায় পুলিশ এক নারীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এঁরা হলেন মাহবুব আহাদ (৫০), আলমগীর হোসেন (৩০), আবু বক্কর সিদ্দিক (৩৩), আনিছ মাহমুদ (৩১), মোছা মিয়া (৫০) ও মাহমুদা আক্তার (২২)। আবু বক্কর, মোছা মিয়া ও আনিছ মাহমুদ গ্রেপ্তারের কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে মুক্ত হয়েছেন। গত ৮ জুন রাতে রাজধানীর মগবাজারের গোল্ডেন এন প্যালেস আবাসিক হোটেলে স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন ওরফে শাহীন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ইকবাল ও তাঁর সহযোগী উজ্জ্বলকে একটি ছুরিসহ গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের হিসাবে ২০১৪ সালে প্রায় পাঁচ হাজার নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব সহিংসতার মধ্যে রয়েছে অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যা, পাচার, খুন এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতন। কিন্তু এসব নির্যাতনের অভিযোগের মধ্যে কতগুলোর বিচার হয়েছে তার কোনো প্রতিবেদন কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছে মোট ১২ হাজার ৯৭১ জন। আর ২০০১ থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত দেশে ৩৮ হাজার ৭৯১ জন ধর্ষিত হয়েছেন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩২৬ জনকে। আবার নারী নির্যাতনের ঘটনার বেশিরভাগই থানায় নথিভুক্ত বা মামলা হয় না।

জুলাই ২০১৫ -স্ত্রীর আত্মহত্যা – পুলিশ সদস্যের যৌতুক দাবীর অভিযোগ। বরিশালে ঘুষ তহবিল কেলেঙ্কারী ১১ জন পুলিশ বরখাস্ত। ২৭ শে জুলাই কিশোর মিলন হত্যা মামলা বিলুপ্ত করে দেওয়া হয়। ২০১১ সালের জুলাই মাসে কেরানীগঞ্জের কিশোর মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে পুলশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে সেই মামলা বিলুপ্ত করা হয় ২০১৫ সালের জুলাই মাসে। বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। সিলেটের কিশোর রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পেটানোর সময় ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

আগস্ট ২০১৫ — বগুড়ার শাহজাহানপুরে রাস্ট্রের রাস্তার গাছ কাটার ধুম। পুলিশেরা সব গাছ কেটে বিক্রি করছে। নোয়াখালিতে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ। পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ। শাহ আলী থানাতে চান্দাবাজী মামলাতে আসামী ধরে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ। ৩রা আগস্ট খুলনার কিশোর রাকিবকে হত্যা করা হয়। পায়ূপথে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে পৈশাচিকভাবে রাকিবকে হত্যা করা হয়।

সেপ্টেম্বর ২০১৫ — সেপ্টেম্বরে সাড়া দেশে ৪১৮টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে যেমন, গুপ্ত হত্যা, ধর্ষন, নির্যাতন, ছিনতাই, অপহরণ ইত্যাদি।
সামাজিক সহিংসতার কারণে মৃত্যু ২১৬ জন। আইন প্রয়োগকারীদের হাতে মৃত্যু ৬ জন । রাজনৈতিক হত্যা ২০ জন। গনপিটুনীতে হত্যা ১১ জনের। ধর্ষনে হত্যা ২৭ জনের। চিকিতসায় অবহেলা ১৮ জনের। যৌতুকের বলি ২৭ জন। ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর গুলিতে ৫ জন। আগুনে পুড়িয়ে ৩ জন। গুপ্তহত্যা ৫৭ জন। গৃহকর্মী হত্যা ৪ জন। ইভটিজিং এ হত্যা ৮ জন। বোমা হামলায় ১ জন। ছিনতাইকারীদের হাতে ১৩ জন। দুইজন পুলিশ নিহত হয়। মোট শিশু ধর্ষন করা হয় ৫৯ জন। নারী ধর্ষন করা হয় ২২ জন। সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হন ২১ জন। এসিড হামলার শিকার ৮ জন।

অক্টোবর ২০১৫ –বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার তথ্য মতে, অক্টোবর মাসে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ২,৩৪৯ জন। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৪৮৬ নারী-পুরুষ ও শিশু। আহত হয়েছেন ১,৮৬৩ জন।

নভেম্বর ২০১৫ — বাংলাদেশে মোট শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৬ কোটির কিছু বেশী। রাজনৈতিক ধরপাকড়ের কারণে বাংলাদেশের জেলগুলোতে কয়েদী উপচে পড়ছে। তাই কয়েদিরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ২৯ হাজার কিন্তু কয়েদী রয়েছে ৮০ হাজারের বেশী। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৫০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ফলে দেশের ৬৫টি কারাগারে তিল ধারণের ঠাই নেই। বিচারের আগেই বন্দীরা অসুস্থ হয়ে প্রাকৃতিকভাবে মরে যাবার অপেক্ষায় আছেন।

ডিসেম্বর ২০১৫ – আজ রবিবার, ২০ শে ডিসেম্বর, এই মুহূর্তে হয়তো বাংলাদেশের বসতহারা অসংখ্য শিশু প্রচন্ড ক্ষুধা পেটে নিয়ে ঘুম থেকে উঠছে। এটাই এখনা নিয়ম। অসংখ্য বেকার, দিন মজুর জানেনা আজ কি খাবে, আগামীকাল না খেয়ে মরে যাবে অথবা বাংলাদেশের ধনীরা পর্যাপ্ত পরিমানে অপচয় করে গার্বেজে ফেলবে যেখান থেকে এই শিশু এই বেকারেরা খাবার সংগ্রহ করে নিবে।

সারাটা বছর বাংলাদেশে যা কিছু হয়েছে সবকিছু লেখা সম্ভব নয়। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু প্রতিটি মানুষ সৃষ্টির পেছনে এক বা একাধিক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো অন্য একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা। আমাদের পরিবারের প্রতি আমাদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি দায়িত্ব রয়েছে সমাজের প্রতি ও দেশের প্রতি। আল্লাহ্‌ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, মানুষের জন্য খাদ্য দিয়েছেন, মাথার উপরে আকাশ দিয়েছেন, শীত নিবারনের জন্য সূর্য দিয়েছেন, সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাত দিয়েছেন, আর দিয়েছেন ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রতিটি প্রানীর মধ্য সাধারণ ডিফেন্স মেকানিজম। শুধু মানুষ নিয়ম ভেঙ্গে ফ্যালে। নস্ট করে ফ্যালে সৌন্দর্স। তছনছ করে ফ্যালে সাজানো পৃথিবী। প্রকৃতিকে করে ফ্যালে বিক্ষুব্ধ।

আগামী বছরে আমরা আশা করতে পারি মানুষেরা তাদের যার যার মানবিক দায়িত্ব পালন করবেন। ধবংস নয় সৃজনশীল হবেন এবং একে অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। তাহলেই সন্মিলিত প্রচেষ্টায় সকলে মিলে ভাল থাকা যাবে।

শুভ নববর্ষ ।




৩ thoughts on “ফিরে দেখি ফেলে আসা ২০১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *