বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ডিগ্রী আছে রোহিনী বিশ্বেস্বরের। প্রফেসনাল ওয়েবসাইট লিঙ্কডইনে শোভা পাচ্ছে রোহিনীর হাসিমাখা মুখ। প্রফাইলে রোহিনী লিখেছেঃ
উপদেষ্টা হিসাবে রোহিনী কাজ খুজছে।
রোহিনী একজন এমবিএ [২০০২-২০০৭(মাস্টার অফ বিজিনেস এডমিনিস্ট্রেশন ইন ফাইনান্স MBA in Finance)York University – Schulich School of Business]। ম্যানেজমেন্ট [১৯৯৯-২০০৪ (Management)] ও মলিকিউলার বায়োলজীতে [১৯৯৩-৯৮ (Molecular Biology)] দুইটি ব্যাচেলর ডিগ্রী। এছাড়া সার্টিফায়েড ইন মাইনিং (Mining) সাথে সিকিউরিটি কোর্সের (Canadian Security Course) সার্টিফিকেট অর্জন করেছে।
এতগুলো ডিগ্রী ও সার্টিফিকেট অর্জন করার জন্য রোহিনীকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। দিনের পর দিন রাতের পর রাত পড়ালেখা করতে হয়েছে। সবগুলো ডিগ্রী অর্জন করার জন্য রোহিনীকে কমপক্ষে চল্লিশটা বিষয়ে পাশ করতে হয়েছে। কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা খুব সিস্টেমেটিক অর্থাৎ প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য যথেষ্ট পরিমানে সময় ও মনোযোগ দিতে হয় নাহলে ৭০% এর উপরে মার্কস পাওয়া সম্ভব নয়। আর ৭০% এর উপরে মার্কস না পাওয়া গেলে পড়ালেখা করে কোন লাভ নেই। সিকিউরিটি কোর্স পুরাটাই ফাইনান্সের উপরে যা করতে মেধা দরকার। প্রচুর সময় ও পরিশ্রম করতে হয়। এর উপরে রয়েছে খরচা। তিনটা ডিগ্রী ও দুইটা সার্টিফিকেট অর্জন করতে রোহিনীকে খুব কম করে হলেও পঞ্চাশ হাজার ডলার খরচা করতে হয়েছে। এই টাকা যদি সে স্টুডেন্ট লোন হিসাবে সংগ্রহ করে তবুও চাকুরী পাবার সাথে সাথে বিশাল অংকের স্টুডেন্ট লোন পরিশোধ করতে হয় যার সুদের হার অনেক বেশী।
রোহিনীকে পুলিশ খুজছে। বিশ বছরের একটি মেয়েকে ছুরিকাহত করার জন্য। টরেন্টোর বাণিজ্যিক এলাকাতে একটি দোকানের ভেতরে রোহিনী এই মেয়েটিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। রোহিনীর বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা মামলা করা হয়েছে।
প্রফেসনাল অয়েবসাইটে রোহিনী বিশ্বেস্বরের সম্পর্কে ইয়োর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অংক ও পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর জিউরগেস মোনেট লিখেছেন, আন্তরিক ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী রোহিনী তার জ্ঞান ও সৃজনশীলতা দিয়ে ডিপার্টমেন্টের গবেষক ও কর্মীদের সহযোগীতা করেছে।
রোহিনী ছোটখাটো গড়নের শান্ত স্বভাবের মেয়ে। এই সংবাদ রোহিনীর পরিচিতদের স্তম্ভিত করেছে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো। কেনো এমন হলো । প্রফেসনাল অয়েবসাইটে রোহিনীর প্রফাইলে আরো একবার যাই। দেখি, জানার চেস্টা করি, কেনো এমন হলো?
বাইরের দেশের যেকোন ছাত্রছাত্রীর কাছে কানাডাতে এমবিএ করা স্বপ্নের মত। সেই স্বপ্ন পূরণ তো হয়েছিল রোহিনীর তবে কেনো সে এই কাজ করলো কে জানে। যাকে রোহীনী ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে হাসপাতালে সে এখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। রোহিনীর বয়স চল্লিশ। যাকে সে আঘাত করেছে তার বয়স বিশ। রোহিনী কি এই মেয়েকে চিনতো ? সেটাও জানা যায়নি।
আজ থেকে নয় বছর আগে রোহিনী মাস্টার্স করেছে। কিন্তু এত লেখাপড়া করেও এক নাগারে একই প্রফেসনাল লাইনে কোথাও তেমন একটা কাজ করেনি। সে নিজেকে মাইনিং এর উপদেষ্টা বলে উল্লেখ করলেও বিনিয়োগ বা মাইনিং সেক্টরে তার তেমন কর্ম অভিজ্ঞতা নাই। কাজে যদি গ্যাপ থাকে তাহলে কাজ পাওয়া মুশকিল হয়। অনেক লেখাপড়া জানার ফলে ছোটখাটো কাজে রোহিনী যোগ দেবেনা বা দেয়নি, দিলে ওভার কোয়ালিফাই হয়ে যাবে আর ছোটখাটো কাজে তাকে কেউ নিয়োগ করতে আগ্রহীও হবেনা বা হয়নি কারণ নিয়োগকর্তা চাইবে না তার চাইতে বেশী লেখাপড়া জানা মেয়ে তার নিচে কাজ করুক। রোহিনীর কাজের অভিজ্ঞতা থেকে ধারনা করা যেতে পারে হয়তো রোহিনীর মনের ভেতরে আক্রোশ ও হতাশা জমেছিল যা বিস্ফোরিত হয়েছে ছুরি দিয়ে আঘাতের মাধ্যমে।
১৯৯৯ সালে ইয়োর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ মাস রোহিনী কাজ করেছে সিস্টেম এডমিন হিসাবে। তখন সে ব্যাচেলর ডিগ্রীর ছাত্রী ছিল। ২ বছর সে টেকনিক্যাল এনালিস্ট হিসাবে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছে। তখনও সে ছাত্রী ছিল। ১ বছর সে চেয়ার হিসাবে কাজ করেছে এমবিএ করার সময়ে। ওয়েব কমিউনিকেশন কোওর্ডিনেটর হিসাবে সে কাজ করেছে ৬ বছর। উপদেষ্টা হিসাবে মাত্র ৪ মাস সে কাজ করেছে ফাইনান্সিয়াল মার্কেটস এসোশিয়েশনে। এসোশিয়েট হিসাবে ইকুইটি রিসার্চ এ কাজ করেছে ৪ বছর। ৫ মাস কাজ করেছে প্রেসিডেন্ট ও চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে একটা প্রাইভেট মাইনিং কোম্পানীতে। চেয়ার হিসাবে ২ বছর কাজ করেছে পূঁজি বিনিয়োগে নারী — কনসাল্টান্ট হিসাবে কাজ করেছে ২ বছর তারপর বিগত দুই বছর ধরে রোহিনী কাজ খুজছে।
ইয়োর্ক বিশ্ববিদ্যালয়, আর ইকুইটি রিসার্চ ছাড়া সবগুলো প্রতিষ্টানই অপরিচিত। উপদেষ্টা হিসাবে রোহিনী দুই বছর কর্ম অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে যেখানে কোন কোম্পানির নাম নেই। কনসালটান্ট হিসাবে দুই বছর কর্ম অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে সেখানেও কোন কোম্পানির নাম নেই। রোহিনীর কর্ম অভিজ্ঞতার প্রফাইল বিশ্লেষন করে সহজেই অনুমান করা যায় বিগত ৫ থেকে ৬ বছর রোহিনী বেকার। প্রফাইলে কিছু বানোয়াট তথ্য আছে। রোহিনীর বয়স যখন ৩৫ বছর ছিল তখন থেকে সে মোটামুটি বেকার। ৩৫ বছর বয়সে কোন রকম পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা যা মাইনিং বা বিনিয়োগ বা সিকিউরিটির সাথে সম্পর্ক জড়িত নয় সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে মাইনিং সেক্টরে বা ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বা উপদেষ্টা বা কনসালটান্ট এর চাকুরী পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব।
যে মেয়েকে রোহিনী ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে সে মেয়ে হয়তো কোন না কোনভাবে তার কর্ম নিয়োগে বাধার সৃষ্টি করেছিল।
রোহিনী উচ্চাকাঙ্ক্ষী । ছোট খাটো কাজ তাঁকে আকৃষ্ট করেনি। সে একজন এমবিএ, তিনটা খুবই মূল্যবান ডিগ্রী ও দুইটা মূল্যবান সার্তিফিকেট নিয়ে রোহিনী হয়তো ফ্রিলান্স উপদেষ্টা বা কনসাটান্ট হতে চেয়েচিল। ধারনা করছি ব্যাচেলর ডিগ্রী সায়েন্সে তারপর ব্যাচেলর ডিগ্রী কমার্সে – এই সুইচ থেকে বোঝা যায় রোহিনী সংশয়ে ছিল। সায়েন্স গ্রাজুয়েটরা সহজেই কাজ হয়তো পায়না, ফাইনান্স গ্রাজুয়েটদের জন্য কাজের সুযোগ বেশী, সিকিউরিটি সার্টিফিকেট নিয়ে রোহিনী ট্রেডার হিসাবে কাজ করতে পারতো, ব্যাংকে বা ঋন প্রদানকারী ফাইনান্সিয়াল ইনস্টিটিউটে কাজ করতে পারতো। রোহিনী কুইনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইনিং এক একটি সার্টিফিকেট কোর্স করেছিল। ভাল কোন কাজ পাবার জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যহত ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে কাজও করেছে কিন্তু যে সেক্টরে সে কাজ করতে চেয়েছে সেই সেক্টরে কাজের অভিজ্ঞতা তেমন নেই।
খুবই দুঃখজনক ঘটনা। একটি মেয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে । আর একটি মেয়ে সারাজীবন লড়াই করে এখন পরাজিতা হয়ে অপরাধের সাথে জড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমি জানিনা রোহিণী বিবাহিতা ছিল কিনা কোন সন্তান ছিল কি না। কিছুই জানা যায়নি। কানাডার সবগুলো দোকানে সিকিউরিটি ক্যামেরা আছে যা ২৪ ঘন্টা রেকর্ডিং হয়। রোহিনী সেটা জানে। সবগুলো কন্ডোমিনিয়াম বিল্ডিং, অফিস বিল্ডিং ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং, সিড়িতে সিকিউরিটি ক্যামেরা আছে – রোহিণী সেটা জানে। কি চিন্তা করছিল রোহিনী? একজন উচ্চ শিক্ষিতা, শান্ত মেজাজের, স্বপ্লভাষী মেয়ে যে নাকি ছিপছিপে গড়নের ফিসফিসয়ে কথা বলতো বেকারত্ব থেকে তার ভেতরে একটি বিস্ফোরক জন্ম নিছিল । হতে পারে শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাবার কারণে এই বিস্ফোরক এইভাবে বিস্ফোরিত হয়।
এত বছরের এত পরিশ্রম, এত সময়, এত অর্থ, এত উচ্চাশা, এত স্বপ্ন, সব কিছু এক নিমেষে মিলে গেল বাতাসে।
রোহিনীর নামে ওয়ারেন্ট বের হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। একজন violent and dangerous মেয়ে হিসাবে বিবেচনা করে রোহিনীকে দেখা মাত্র ৯১১ এ কল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে টরেন্টো শহরের পুলিশ।
Anam Sahid liked this on Facebook.
Jahangir Kabir liked this on Facebook.
Rizwan Mahmud liked this on Facebook.