রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন মাশরাফির কুমিল্লা

ঢাকা: ফাইনালটা হলো মনের মতোই। ম্যাচের পরতে পরতে থাকল রাজ্যের উত্তেজনা, রোমাঞ্চ আর হৃদয় কাপুনি উচ্ছাস। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সই। মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিপিএলের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে কুমিল্লা। আর অধিনায়ক মাশরাফির হলো অনন্য এক রেকর্ড। দুটি দলের হয়ে বিপিএলের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ী অধিনায়ক এখন নড়াইল এক্সপ্রেস। প্রথম দুই আসরে মাশরাফির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স।

টসের প্রতিকূলে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে বরিশাল বুলস। জবাবে ইনিংসের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করে কুমিল্লা সাত উইকেট হারিয়ে। সত্যিই দারুণ বিস্ময়জাগানিয়া এক ফাইনাল।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। দলীয় ২৩ রানের মাথায় ছয় বলে মাত্র তিন রান করে মাথার উপরে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কুমিল্লার ওপেনার লিটন কুমার দাস। নিজের বলে নিজেই ক্যাচ লুফে নেন বরিশালের পাকিস্তানী পেসার মোহাম্মদ সামি।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অবশ্য সাবলিল ব্যাট করছিলেন ইমরুল কায়েস ও আহমেদ শেহজাদ। এই জুটি থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৫৪ রান। এরপর এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন বরিশাল অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আউট করেন শেহজাদকে। ২৪ বলে ৩০ রান করে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তানী এই ব্যাটসম্যান।

এরপর আবারো আঘাত মাহমুদুল্লাহর। এবার তার শিকার কুমিল্লার ওপেনার ইমরুল কায়েস। তবে সাব্বিরের হাত ক্যাচ দেয়ার আগে ৩৭ বলে ৫৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে যান ইমরুল। দারুণ এই ইনিংসে ছিল ছয়টা চার ও তিনটি ছক্কার মার। দলীয় রান তখন তিন উইকেটে ৯২।

কায়েসের বিদায়ের পর দেখেশুনেই আগাচ্ছিলেন জাইদি-কাপালি জুটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক রান আউটের শিকার পাক অলরাউন্ডার জাইদি। ১৪ বলে ১৬ রান করেন তিনি। এরপর বরিশাল পেসার কুপারের জোড়া আঘাত। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে কুপারের বলে প্রসন্নর হাতে ক্যাচ দেন আট বলে আট রান করা স্টিভেন্স। পরের বলেই শুন্য রানে মাশরাফিকে সাজঘরে ফিরিয়ে বরিশাল শিবিরে উৎসব বয়ে আনেন কুপার। কুমিল্লার সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ১৩৪।

এরপর উত্তেজনা মুহূর্তে এক রান করে রান আউট হন শুভাগত হোম। ম্যাচে জমে উঠে রাজ্যের রোমাঞ্চ। শেষটা কুলাসেকারার সঙ্গে নিয়ে করেছেন অলোক কাপালিই। শেষ বলে দরকার ছিল এক রান। সামির বলে সেই রান নিয়ে ভো দৌড় দিলেন কাপালি। শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা তখন কুমিল্লা শিবির। ২৮ বলে ৩৯ রান করে ম্যাচের আসল নায়কই তখন কাপালি সবার মধ্যমনি।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বরিশাল বুলস। দলীয় ১৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার মেহেদী মারুফ। ১৩ বলে ১১ রান করে তিনি কুমিল্লার পাকিস্তানী অলরাউন্ডার এশার জাইদির এলবিডব্লিউর শিকার হন তিনি।

এরপর প্রসন্ন ও হার্ড হিটার সাব্বির বড় জুটিরই আভাস দিয়েছিল। কিন্তু তা হতে দেননি মাশরাফি ও স্টিভেন্স। ১৯ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে স্টিভেন্সের বলে বোল্ড আউট হন সেকুজি প্রসন্ন। এরপর বরিশালের আশা-ভরসার মূল জায়গা হার্ড হিটার সাব্বির রহমানও বিদায় নেন। এবার বল হাতে চমক দেখান কুমিল্লার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ১০.২ ওভারে সাব্বিরকে বোল্ড করে বিদায় করেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ১৯ বলে মাত্র ৯ রান করেন আগের ম্যাচে ৭৯ রান করা সাব্বির।

চতুর্থ উইকেট জুটিতেই চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বরিশাল। যেখানে ব্যাট হাতে বোলারদের বেশ শাসিয়েছেন শাহরিয়ার নাফীস ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা সংগ্রহ করেন ৮১ রান। দলীয় রান তখন ১৪৯। সজোরে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ইনিংসের শেষ ওভারে কুলাসেকারার বলে বোল্ড হন মাহমুদুল্লাহ। তার আগে করে যান ৩৬ বলে ৪৮ রানের দারুণ এক ইনিংস।

শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। এর মধ্যে ছিল দুটি চার ও তিনটি ছক্কার মার। রিয়াদ ছিলেন একটু ক্লাসিক্যাল। তিনি চার হাঁকিয়েছেন ছয়টি, ছক্কা একটি। দুই বলে ৭ রানে অপরাজিত থাকেন কেভিন কুপার। কুমিল্লার হয়ে জাইদি, কুলাসেকারা, মাশরাফি ও স্টিভেন্স একটি করে উইকেট লাভ করেন।

One thought on “রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন মাশরাফির কুমিল্লা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *