মুজাহিদ অব বাংলাদেশের ৬ জঙ্গি ৬ দিনের রিমান্ডে

ঢাকা: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির আদলে নতুন সংগঠিত হওয়া ‘মুজাহিদ অব বাংলাদেশ’-এর গ্রেপ্তারকৃত ৬ জঙ্গির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদ তালুকদার রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ওই আদেশ দেন।

রিমান্ডকৃতরা হলেন, জহিরুল ইসলাম ওরফে আনসার ওরফে চূড়ান্ত লড়াই ওরফে জহির, খন্দকার রাজেশ সোবহান ওরফে রাজু ওরফে কাঁচামরিচ ওরফে আদার ব্যাপারী, আবু বকর সিদ্দিক ওরফে আবীর ওরফে মৌমাছি ওরফে নিয়মের অনিয়ম ওরফে এক টুকরো মেঘ ওরফে সাদাপাতা, আব্রাহাম আহমেদ আল তারেক, মোরশেদুল ইসলাম ওরফে কিং মোর খান, কাজী বাপ্পী আহমেদ ওরফে সাজ্জাদ ওরফে তারিক বিন জিয়া মোল্লা আকতার মোহাম্মদ মনসুর।

এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মুস্তাফিজুর রহমান আনসারি।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে মতিঝিল শাপলা চত্বর সোনালী ব্যাংকের সামনে থেকে মুজাহিদ অব বাংলাদেশের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখা ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য (দক্ষিণ) বিভাগ। ওই সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, দশটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাকৃতদের মধ্যে জহিরুল ইসলাম এ সংগঠনের শীর্ষনেতা বলে জানিয়েছেন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেছেন মনিরুল ইসলাম।

মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এক বছর ধরে এ সংগঠনটি সক্রিয়। বিচ্ছিন্নভাবে আলকায়েদার ভাবধারাকে অনুসরণ করে গড়ে ওঠা এ সংগঠনটির সঙ্গে বস্তুত আল কায়েদার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে আমরা ধারণা করছি এর শীর্ষনেতাদের কেউ কেউ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত।

তিনি জানান, এ সংগঠনে সর্বসাকুল্যে ২০/৩০ জন সদস্য আছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা, সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। সম্প্রতি ঢাকায় এক ‘পীর’কে হত্যার পরিকল্পনাও করেছেন। এর আগেও রাজধানীতে এক পীর হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এরা।

জহিরুল ইসলামের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় তারা বিভিন্ন সময় জঙ্গি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে।

এদের কার্যকলাপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকের মাধ্যমেই মূলত তারা বিচ্ছিন্নভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা আল কায়েদাকে অনুসরণ করে কিন্তু আল কায়েদার সঙ্গে এদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

তিনি জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে এরা নামাজ পড়ার আহ্বান জানায়, দ্বীনের দাওয়াত দেয়, সমমানসিকতার কাউকে পেয়ে গেলে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে জিহাদি হিসেবে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণে তাদের ছুরি-চাপাতি চালনা এবং বর্শা নিক্ষেপ শেখানো হয়।

মনিরুল জানান, এদের কোনো সাংগঠনিক রূপ নেই। এরা ফেসবুকের মাধ্যমে অদ্ভূত সব নাম নিয়ে, পেজ খুলে সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করছে। ফেসবুকের অদ্ভূত নাম ব্যবহারের কারণ হলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়ানো।

মুজাহিদ অব বাংলাদেশ নামের এ নব্য জঙ্গি সংগঠনের বড় কোনো অর্থের উৎস নেই জানিয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘এরা সাধারণত চাকরিজীবী। স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। তাদের বেতনের কিছু অংশ দিয়ে তারা সংগঠনটি চালায়। এদের মধ্যে শিক্ষিত এবং কম শিক্ষিতও আছে। এরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনেক দক্ষ ও সক্রিয়।’

মনিরুল বলেন, ‘এখন একটা নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে, ফেসবুক বা অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালানো এবং এর মধ্য দিয়ে নিজেদের কার্যপরিধি বিস্তৃতি করা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *