আব্বাস-খোকাকে বাদ দিয়ে দুই কমিটি হচ্ছে

ঢাকা মহানগর বিএনপিতে প্রভাব ধরে রাখতে অন্য রকম লড়াই শুরু করেছেন মহানগরের দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা। এ দুই নেতাকে বাইরে রেখে স্বল্প সময়ের মধ্যেই মহানগরটিকে উত্তর ও দক্ষিণ শাখায় ভাগ করে দুটি পৃথক কমিটি দেওয়া হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও এই দুই নেতার দ্বন্দ্ব না থেমে তা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগরের বর্তমান আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার মধ্যে ঢাকার নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে দলের ভেতরে ক্ষমতা প্রদর্শন। দেশের সীমারেখা পার হয়ে এ প্রতিযোগিতার রেশ পৌঁছে গেছে সুদূর লন্ডনে। নিজেরা সরাসরি নেতৃত্বে থাকছেন না জানার পর যার যার অনুসারীদের মহানগরের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতায় বসানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক লন্ডন সফরের সময় এই দুই নেতাই পৃথকভাবে এ নিয়ে জোর লবিং করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে এ তথ্য।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্সারের চিকিৎসা গ্রহণরত সাদেক হোসেন খোকা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থানের সময় সেখানে ছুটে যান। তিনি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে কথা বলেন। ওই সময়ে ঢাকা থেকে খোকার একজন সহকারী ই-মেইলে রাজধানীর প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানায় ‘যোগ্য’ নেতাদের একটি তালিকা পাঠান লন্ডনে। খোকার
পরামর্শে তারেক রহমানের কাছের এক ব্যক্তির ই-মেইলে পাঠানো হয় ওই তালিকা।
অন্যদিকে মির্জা আব্বাস কোনো তালিকা না পাঠালেও লন্ডনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া ‘কাছের’ একজন নেতার মাধ্যমে নিজের বক্তব্য পৌঁছে দেন। মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ ওই নেতা খালেদা জিয়ারও আস্থাভাজন। সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে লন্ডনে পাঠানো তালিকায় বর্তমানে থানা ও ওয়ার্ড সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীলদের নাম রয়েছে। এতে সাবেক কাউন্সিলরদেরই প্রাধান্য রয়েছে। অন্যদিকে মির্জা আব্বাস গত ৬ জানুয়ারি আত্মগোপনে যাওয়ার আগে ‘প্রায় সবগুলো’ ওয়ার্ডের খসড়া কমিটি তৈরি সম্পন্ন করেন। মাঠনেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এ কমিটি গঠিত হয় বলে দাবি তার কাছের নেতাদের। এই ওয়ার্ড নেতাদের দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে থানা কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে ঘিরে দুই দফা আন্দোলনে পর্যায়ক্রমে দায়িত্বে থাকা এ দুই নেতার কেউই ঢাকার রাজপথের আন্দোলনে সফলতা দেখাতে পারেননি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। ওই নির্বাচন প্রতিহত করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুললেও ঢাকায় রাজপথে নামেননি নেতাকর্মীরা। এর পর মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এর পাঁচ মাস পর চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালেও ঢাকায় বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থার একই চিত্র।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে দুটি কমিটি দিতে একমত হয়েছেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। অখ- ঢাকার নেতা মির্জা আব্বাস বা সাদেক হোসেন খোকার কেউ খ-িত কোনো অংশের নেতৃত্বে থাকছেন না।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর বিএনপিতে যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি বা আহ্বায়ক ও দল সমর্থিত সাবেক মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হতে পারে। এখানে আহ্বায়ক পদে সাবেক কাউন্সিলর এমএ কাইয়ুমের নামও আলোচিত হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণে মহানগর কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি বা আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হতে পারে। তাকে দক্ষিণের আহ্বায়ক বা সভাপতি পদ দেওয়ার চিন্তাও করছে হাইকমান্ড।
তবে এ দুটি প্রধান কমিটি করার আগে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। এ অবস্থায় ঢাকার রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করেছেন মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা। দুই নেতাই প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটে তাদের অনুসারীদের রাখতে মরিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *