বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখে চরম বিব্রত হলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। একাডেমির নতুন একটি কমপ্লেক্স নির্মাণকল্পে আয়োজিত ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানটি মঙ্গলবার ঢাকঢোল পিটিয়ে অয়োজন করা হয়। আর সেই অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করতে হেলিকপ্টারে বরিশালে এসেছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু আয়োজক সংস্থা শিল্পকলা একাডেমি এবং জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নির্বাক করেছে তাকে।
বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের জনপ্রিয় একজন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতি ছিল একেবারেই হতাশাজনক। এমনকি সেই অনুষ্ঠানে বরিশালের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অধিকাংশ নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস অনুষ্ঠান মঞ্চেই মন্ত্রীর কাছে এই পরিস্থিতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এরপরে যদি সংস্কৃতি মন্ত্রীর বরিশালে আগমন ঘটে তা বিশাল জনসমাবেশে পরিণত হবে!
অনুষ্ঠানে অতিথির উপস্থিতি কম হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও বিব্রত বোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নগরীর সংস্কৃতি কর্মীরাও আয়োজক সংস্থার ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যদিও আয়োজক সংস্থা শিল্পকলা একাডেমি বলছে, ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যে কারণে অনুষ্ঠানে বেশি মানুষের সমাগম ঘটেনি। তবে সেই অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে কেন এত আয়োজন বা আসন বিন্যাস ছিল- সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি সংস্থাটি।
সূত্রমতে, প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দে নির্মিত হতে যাচ্ছে বরিশাল বিভাগীয় শিল্পকলা একাডেমি কমপ্লেক্স। এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই বেশ তোড়জোড় চালিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। সে মোতাবেক বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের শিল্পকলা একাডেমির পরিত্যক্ত ভবনের সামনের মাঠে মঙ্গলবার বিশাল আয়োজন করা হয়। সেখানে মঞ্চ তৈরি করে পাঁচ শতাধিক অতিথি বসার জন্য চেয়ার দেয়া হয়। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এলেন। তাকে ফুল দিয়ে নেতাকর্মীরা মঞ্চেও বরণ করে নেন। কিন্তু আশানুরূপ অতিথি বা মানুষের সমাগম না হওয়ায় মন্ত্রীকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের মন্তব্য, শিল্পকলা একাডেমির এই বিশাল অনুষ্ঠানটি শেষ হয়েছে বিশৃঙ্খল আয়োজনের মধ্য দিয়ে।
বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, বিগত দিনে যে কোনো ছোট অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তাদের ক্ষুদে বার্তা (এসএমএস) বা ফোন দিয়ে অবহিত করা হতো। কিন্তু এবারের এতো বড় আয়োজন সম্পর্কে কোনো কিছুই জানায়নি শিল্পকলা একাডেমি। সঙ্গত কারণে তাদের এমন কর্মকাণ্ডে অনেককেই হতাশ করেছে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ভাই বাংলাদেশ সরকারের একজন জনপ্রিয় মন্ত্রী। এছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বরিশালবাসীর কাছেও উজ্জল নক্ষত্র। আর সেই মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে জনসমাগম কম হওয়া আমাদের জন্য বেদনাদায়ক এবং লজ্জার বিষয়ও বটে।
তবে এক্ষেত্রে তার করণীয় কিছু ছিলো না বলে উল্লেখ করে বরিশাল আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, ‘পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে গত কয়েকদিন খুব ব্যস্ত ছিলাম। যে কারণে এই আয়োজনে কোনো ধরণের সহযোগিতা করতে পারিনি।’
তবে সার্বিক আয়োজনে ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মো. হাসানুর রশিদ মাকসুদ বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানটির সদস্য রয়েছে ৪৩০ জন। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসএমএস পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অধিকাংশ অনপুস্থিত থাকেন। যে কারণে এবারের এই ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘ব্যানারে আয়োজক সংস্থা হিসেবে জেলা প্রশাসন থাকলেও সার্বিক বিষয়টি তদারকি করেছে শিল্পকলা একাডেমি। যে কারণে কে বা কাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সে সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল নন।’